চীনের স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীদের রোজা না রাখার নির্দেশ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯ ০৭:০৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৯ বার।

পুরো বিশ্বের মুসলিমরা রোজার রাখলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চীনের মুসলিমরা। চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণের নামে সরকার কঠোরতা আরোপ করায় ধর্মীয় স্বাধীনতা হারাতে হচ্ছে দেশটির জিনজিয়াং অঞ্চলের উইঘুর মুসলিমদের।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশল জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবারও জিনজিয়াংয়ের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের রোজা রাখার অনুমতি নেই বলে সরকারি ওয়েবসাইটে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

জিনজিয়াং অঞ্চলের মুসলিমদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে ‘চরমপন্থা’ হিসাবে দেখে চীন সরকার। ফলে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ, প্রকাশ্যে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, দাড়ি রাখা, হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেইজিং। এমনকী মুসলিম শিশুদের ইসলামি নামও রাখতে দেওয়া হয় না।

২০১৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে মুসলিমদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতির ওপর এসব কঠোরতা আরোপ করে চীন।

স্কুলে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ঘটনা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন জিনজিয়াংয়ের এক উইঘুর নারী। গুলজার নামে ওই মুসলিম নারী বলেন, “২০০০ সালের শুরু দিকে তিনি হাই স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। তখন শিক্ষকরা তাদেরকে বলতেন, পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হবে, ফলে রোজা রাখলে পুষ্টির ঘাটতি হবে।”

তিনি জানান, এরপরেও কিছু শিক্ষার্থী লুকিয়ে রোজা রাখতো। তারা তখন দুপুরের বিরতির সময় ক্যান্টিনে না গিয়ে ক্লাসে বিশ্রাম নিত।

এ তরুণী বলেন, “শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে তল্লাশি চালাতো, কারা রোজা রেখেছে। এরপর রোজা না রাখার জন্য তাদেরকে বোঝাতো। তবুও ততটা কঠোরতা ছিল না তখন।”  

তবে ২০০৬ সালের উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ চীনের শেনঝেন শহরে গেলেন সেখানে তিনি অন্য দৃশ্য দেখতে পান। শেনঝেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গুলজার দেখেন, চীনের অন্যান্য মুসলিমরা বিশেষ করে হান জাতির মুসলিমরা স্বাধীনভাবে ধর্মপালন করছে।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার সাংবাদিক গুলচেহরা হোজা ১৮ বছর আগে চীন ত্যাগ করেন। এই উইঘুর নারী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এখন রোজা রাখতে পারছেন।

জিনজিয়াংয়ে দিনগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি বলেন, “আমার মনে পড়ে শুধু বয়স্ক লোকেরা রোজা রাখতো পারতো। আমার দাদি দোয়া করতেন, রোজা রাখতে না পারায় আল্লাহ যেন তার নাতীদের ক্ষমা করে দেন। এখন সেই দোয়া পুরো উইঘুর জনগোষ্ঠীর জন্য এখন আমাকে করতে হচ্ছে।”

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর মুসলিমের বসবাস। এ জনগোষ্ঠীর ৪৫ ভাগই তুর্কি নৃগোষ্ঠীর। কয়েক দশক ধরে চীনের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনও গড়ে তোলে উইঘুররা।

পরবর্তীতে তাদেরকে দমন করতে এ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আরও বেশি কঠোরতা অবলম্বন করে বেইজিং সরকার।   

 

সংশোধনী শিবিরে কঠোর জীবন যাপনের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মহীন করে তোলার অভিযোগও আছে দেশটির বিরুদ্ধে। এসব ‘নির্যাতন শিবিরগুলোতে’ প্রায় ১০ লাখের বেশি উইঘুরকে নিপীড়নের অংশ হিসেবে আটকে রেখেছে চীন।

যদিও চীন সরকার বারবার দাবি করছে, চরমপন্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এ বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে তারা।