কোরআনের কিছু কথা- ৫

কোরআন উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ১০ মে ২০১৯ ০৮:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০২ বার।

একজন প্রকৃত ঈমানদারের কাজ হলো সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করা আর শয়তানের ষড়যন্ত্র ও কূট-কৌশলের মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহকে স্মরণ করার অন্যতম একটি পন্থা হলো নিয়মিত অর্থ বুঝে কোরআন পাঠ করা। নিজ মাতৃভাষায় কোরআনের আয়াতসমূহের তরজমা-তাফসীর পাঠ করতে থাকলে ঈমানের ভিত্তি আরো দৃঢ় হয়, সেই সাথে নিজের জীবনকে সংযত রাখারও একটা অবকাশ থাকে। একজন মুসলিমের জন্য বিশেষ অতৃপ্তির জায়গা হলো নিজ মাতৃভাষায় কোরআনের অর্থ অনুধাবন করতে না পারা। তাই প্রত্যেক অনারব মুসলিমেরই উচিত আরবি ভাষায় কোরআন পাঠের সাথে সাথে তার নিজের ভাষায় কোরআনের অনুবাদ ও মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা করা। এই অভ্যাস গড়তে পারলে জীবনের চলার পথ সহজতর হয় এবং জীবনের কোনো অসহায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সক্ষমতা লাভ করা যায়। কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করে জীবনকে সহজ-সরলভাবে পরিচালিত করা যায়। সামান্য খামখেয়ালিতেই দুনিয়া  ও  আখিরাত- এই উভয় জীবন বরবাদ হয়ে যেতে পারে। এই বিপর্যয় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে হবে। আর   আল্লাহ  কোরআনকে  উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ এরশাদ করছেন-
“আমরা এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছি। এ থেকে উপদেশ গ্রহণে প্রস্তুত কেউ আছে কি?” -সূরা আল ক্বামার : ১৭
আজও আল কোরআন আমাদের সামনে অবিকলভাবে মওজুদ আছে, যা পড়া সহজ বুঝা সহজ। এই মোবারক গ্রন্থ পাঠ করার জন্যে এর মধ্যে এক বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। পড়তে ভালো লাগে, চিন্তা করতে ইচ্ছা হয, এ কেতাব সত্যের প্রতি সহজ সরলভাবে আহ্বান জানায়। কোরআন মানুষকে তাই সরবরাহ করে যা তার স্বভাব প্রকৃতি চায়। মানুষের মনের মধ্যে এ পাক কালাম গভীর আবেগ সৃষ্টি করে এবং এর বৈচিত্র, নতুনত্ব, চমৎকারিত্ব ও অভিনবত্ব যেন শেষ হয়েও শেষ হতে চায় না, বারবার তেলাওয়াত করা সত্ত্বেও কিছুতেই এই পবিত্র গ্রন্থ পুরাতন হতে চায় না। যতই কোরআনে করীমের ওপর জ্ঞান-গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা করা হয়, ততই যেন নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। এই পাক কালাম এর ভক্তের অন্তরে এমনই মধুর পরশ বুলিয়ে দেয় যে, বারবার তা পড়তে ইচ্ছা করে এবং যতই পড়া হয় ততই এ অমিয় সুধার সাথে তার মহব্বত বাড়তে থাকে। 
তবে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ‘কোরআন উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম’ -এই কথার মাধ্যমে এটা বুঝানো হয়নি যে, কুরআন খুবই সহজবোধ্য কিতাব, এর মর্ম ও তাৎপর্য বুঝতে কোনো জ্ঞান-বুদ্ধি-বিদ্যার প্রয়োজন হয় না, এমনকি আরবি ভাষা না জেনেও যারই ইচ্ছা এর তাফসীর করতে পারে, আর হাদীস ও ফিকাহর সংগে কোনো সম্পর্ক সামঞ্জস্য রক্ষা না করেও তা থেকে নিজ ইচ্ছা মতো আইন-বিধান বের করতে পারে। এমন অর্থ করা হবে মারাত্মক ভুল। কারণ যে পরিপ্রেক্ষিতে কোরআন উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম এই কথাটি বলা হয়েছে, সেই দিকে লক্ষ রেখে বিবেচনা করলে স্পষ্ট বুঝা যায়, এ কথা বলার ও বুঝবার জন্য এ বাক্যটি বলা হয়নি। যেমন- এই আয়াতটি সর্বমোট চারবার সূরা ক্বামার-এ একইভাবে উল্লিখিত হয়েছে (১৭,২২,৩২ ও ৪০ নং আয়াত)। ‘উপদেশ গ্রহণের জন্য কোরআন সহজ মাধ্যম’- এই কথা বলার পূর্বে উক্ত চারটি আয়াতের আগে অতীতের নবী-রাসূলদের সাথে তাঁর স্বজাতির ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঐসব নাফরমানী কর্মকান্ডের জন্য ঐ সকল জাতিকে কিভাবে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তাও বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ১৭নং আয়াতের পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে কিভাবে নূহ আ: -এর শিক্ষা গ্রহণ না করার জন্য মহাপ্লাবন দ্বারা ঐ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। আবার ২২নং আয়াতের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে আদ জাতির প্রতি আযাব নাযিল হওয়া। তেমনি ৩২নং আয়াতের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে সামুদ সম্প্রদায়ের ওপর নাযিল হওয়া কঠোর আযাব সম্পর্কে। আবার ৪০নং আয়াতের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে লুত জাতির লোকদের ওপর আরোপিত আল্লাহর গজব সম্পর্কে। অর্থাৎ এইভাবে পেছনের অতীত ঘটনাগুলো তুলে ধরে বারবার স্মরণ করানো হচ্ছে যে ‘উপদেশ গ্রহণের জন্য কোরআন সহজ মাধ্যম।’ 
মানুষের জন্যে উপদেশ গ্রহণের মাধ্যম হলো দুটি। প্রথমত- ‘দুনিয়ায় বিভিন্ন সময় বিপথগামী মানুষের ওপর আল্লাহর মর্মান্তিক আযাব আরোপিত হয়। আমরা তাদের প্রতি নাযিল হওয়া সেইসব শাস্তি, ক্ষতি এবং তাদের  অধপতন ও ধ্বংস হওয়ার ঘটনা থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।’ দ্বিতীয়ত- ‘কোরআন মাজীদে বিভিন্ন আল্লাহ দ্রোহী জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনার বিবরণ, নানা অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ ও ওয়াজ-নসীহত ইত্যাদির বর্ণনা আছে। এসব থেকেও আমরা খুব সহজেই উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে সহজ-সরল-সঠিক পথ পেতে পারি।’ অর্থাৎ  প্রথমোক্ত মাধ্যম হলো দুনিয়ায় চোখের সামনে দেখা ঘটনা থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করা। আর দ্বিতীয়োক্ত মাধ্যম হলো কোরআনের বর্ণনা থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করা। এখন প্রশ্ন জাগে এই দুটি মাধ্যমের মধ্যে কোন মাধ্যমটি সহজ? যে লোকেরা চরম নির্বোধ তারা দুনিয়ায় মানুষের ওপর শাস্তি,ক্ষতি, অধপতন, ধ্বংস ইত্যাদি প্রকারের আযাব নাযিল হওয়া দেখে উপদেশ গ্রহণ করতে চাইবে। আর যারা বুদ্ধিমান তারা ধ্বংসের গভীর গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার আগেই কোরআন থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করবে। তাদের কাছে কোরআনই উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম।

চলবে...