কোরআনের কিছু কথা-৬

কোরআন শুধুমাত্র ভয় দেখায় না, আশার আলোও জ্বালায় [১পর্ব]

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ১১ মে ২০১৯ ০৪:১৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৩৮ বার।


হযরত আহনাফ বিন কায়েস ছিলেন একজন আরব সর্দার। তিনি ছিলেন একজন বীরযোদ্ধা। তাঁর সাহস ও শৌর্য ছিলো অপরিসীম। তাঁর তলোয়ারে ছিলো লক্ষ যোদ্ধার জোর। ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লাহর নবী সা: -কে দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি, তবে নবীর বহু সাহাবীকেই তিনি দেখেছেন। এদের মধ্যে হযরত আলী রা: -এর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিলো অপরিসীম। একদিন তাঁর সামনে এক ব্যক্তি কোরআন পাঠকালে এই আয়াতটি পড়লেন- 
“আমি তোমাদের কাছে এমন একটি কেতাব নাযিল করেছি, যাতে ‘তোমাদের কথা’ আছে, অথচ তোমরা চিন্তা-ভাবনা করো না”-সূরা আম্বিয়া: ১০
হযরত আহনাফ ছিলেন আরবি সাহিত্যে গভীর পারদর্শী ব্যক্তি। তিনি ভালো করেই বুঝতেন ‘যাতে শুধু তোমাদের কথাই আছে’ এই কথার অর্থ কি? তিনি অভিভূত হয়ে গেলেন, কেউ বুঝি তাঁকে আজ নতুন কিছু শোনালো! মনে মনে বললেন ‘আমাদের কথা’ আছে, এই কোরআন নিয়ে আসো তো? দেখি এতে ‘আমার’ কথা কী আছে? তাঁর সামনে কোরআন শরীফ আনা হলো, কোরআনে একে একে বিভিন্ন দল উপদলের পরিচিতি এতে পেশ করা হচ্ছে-
একদল লোকের পরিচয় এভাবে পেশ করা হলো যে, 
“এরা রাতের বেলায় খুব কম ঘুমায়, শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ খাতার জন্যে মাগফেরাত কামনা করে।”- সূরা আয যারিয়াত: ১৭-১৮
আবার একদল লোক সম্পর্কে বলা হলো-
“তাদের পিঠ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা নিজেদের প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে, তারা অকাতরে আমার দেয়া রেযেক থেকে খরচ করে।” -সূরা আস সাজদা : ১৬
কিছু দূর এগিয়ে যেতেই তাঁর পরিচয় হলো আরেক দল লোকের সাথে। তাদের সম্পর্কে বলা হলো- 
“রাতগুলো তারা নিজেদের মালিকের সেজদা ও দাঁড়িয়ে থাকার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়।” -সূরা আল ফোরকান : ৬৪
অতপর আরেক দল মানুষ সম্পর্কে বলা হলো-
 “এরা দারিদ্র ও স্বাচ্ছন্দ্য উভয় অবস্থায় (আল্লাহর নামে) অর্থ ব্যয় করে, এরা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, এরা মানুষদের ক্ষমা করে। বস্তুত আল্লাহ্ তায়ালা এসব নেককার লোকদের ভালোবাসেন।” -সূরা আলে ইমরান : ১৩৪
আরেকটি দলের পরিচয় এভাবে পেশ করা হলো-
“এরা (বৈষয়িক প্রয়োজনের সময়) অন্যদেরকে নিজেদেরই ওপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের নিজেদের রয়েছে প্রচুর অভাব ও ক্ষুধার তাড়না। যারা নিজেদেরকে কার্পণ্য থেকে দূরে রাখতে পারে তারা বড়ই সফলকাম।” -সূরা আল হাশর : ৯
এবার কোরআন তাঁর সামনে আরেক দল লোকের কথা পেশ করলো-
 “এরা বড় বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, যখন এরা রাগান্বিত হয় তখন (প্রতিপক্ষকে) মাফ করে দেয়, এরা   আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলে, এরা নামাজের প্রতিষ্ঠা করে, এরা নিজেদের মধ্যকার কাজকর্মগুলোকে পরামর্শের ভিত্তিতে আনজাম দেয়। আমি তাদের যা দান করেছি তা থেকে তারা অকাতরে ব্যয় করে।”-সূরা আশ্ শুরা : ৩৭-৩৮
হযরত আহনাফ একে একে সব দল লোকের কথা ভাবলেন। তিনি নিজেকে ভালো করেই জানতেন। আল্লাহর কেতাবে বর্ণিত এ লোকদের কথাবার্তা দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহ্তায়ালা, আমি তো এই বইয়ের কোথাও ‘আমাকে’ খুঁজে পেলাম না। এখানে তো সব আল্লাহর নেককার বান্দাদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমার কথা কই? আমার ছবি তো এর কোথাও আমি দেখলাম না, অথচ এ কেতাবে নাকি তুমি সবার কথাই বলেছো?

চলবে...