মাঠে তদন্ত কমিটি, প্রকল্পের কাজ বন্ধ, কারণ দর্শানোর নির্দেশ

শেরপুরে কর্মসৃজন কর্মসূচির লাখ লাখ টাকা লোপাট

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০১৯ ১৩:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০১ বার।

বগুড়ার শেরপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য সরকারের নেয়া ৪০দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাগজ-কলমে বায়বীয় প্রকল্প, শ্রমিকদের ভুয়া হাজিরা আর নিজেদের ভিআইপি লোকজনকে শ্রমিক বানিয়ে এই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা লোপাট করা হচ্ছে। ফলে এই প্রকল্পে দৃশ্যমান কোন কাজ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র শ্রমিকরা, অন্যদিকে যথাযথ কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সুফলভোগীরা। তবে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে মাঠে নেমেছেন উপজেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কর্মসৃজন কর্মসূচির বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধও করে দেন তিনি। একইসঙ্গে ইউপি সদস্য মকবুল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানায়, গত ২৭ মে থেকে এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে ১ কোটি ৫২লাখ ১৬হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট ১হাজার ৯০২জন শ্রমিক কাজ করছেন। এরমধ্যে কুসুম্বী ইউনিয়নে ২৩১জন, গাড়ীদহ ইউনিয়নে ২৩১জন, খামারকান্দি ইউনিয়নে ১৪০জন, খানপুর ইউনিয়নে ১৯৫জন, মির্জাপুর ইউনিয়নে ১৪১জন, সুঘাট ইউনিয়নে ১৬৬জন, বিশালপুর ইউনিয়নে ২৬১জন, ভবানীপুর ইউনিয়নে ২০১জন, সীমাবাড়ী ইউনিয়নে ১৫০জন ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নে ১৮৩জন শ্রমিক রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব সুফল ভোগী কাজে অংশ নিয়ে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তাদের পারিশ্রমিক উত্তোলন করছেন বলে সূত্রটি জানায়।


কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, কাজ না করেই টাকা উত্তোলন, শ্রমিক না হয়েও তালিকায় নাম থাকা, এলজিইডির আওতাভুক্ত সড়কে নামমাত্র মাটি ফেলার নামে কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা লোপাট করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. মকবুল হোসেন ধর্মকাম এলাকায় ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় একটি প্রকল্প দিয়েছেন। যথারীতি কয়েকজন শ্রমিক দায়সারা ভাবে কাজও করছেন। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এই প্রকল্পটি সঠিকভাবে নেয়া হয়নি। এলজিইডির নির্মাণাধীন সড়কের ওপর মাটি ফেলা হচ্ছে। যা বিধি সম্মত নয়। পাশাপাশি এই প্রকল্পের কাজে মোট ৩৬জন শ্রমিক উপস্থিত দেখানো হলেও বাস্তবে কাজ করছেন মাত্র ১৯জন। এছাড়া এসব শ্রমিকদেও কাছে জব কার্ড থাকার কথা থাকলেও তা নেই। এমনকি হাজিরা রেজিস্ট্রার সংরক্ষণেরও কোন খাতা নেই। ইচ্ছেমত এসব প্রকল্প চালাচ্ছেন ওই ইউপি সদস্য। তবে ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, এই প্রকল্পটি দেয়া ভুল হয়েছে।


এদিকে শুধু শাহবন্দেগী ইউনিয়নই নয় এমন চিত্র উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও। কাগজ-কলমের মারপ্যাচে অনিয়ম-দুর্র্নীতির মাধ্যমে এই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের এই কাজে কোন ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। তাই একাধিক টিম টিম গঠন করে প্রকল্পগুলো মনিটরিংয়ের কাজ শুরু করা হচ্ছে। এমনকি গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনকালে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় শাহবন্দেগী ইউনিয়নের একটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্যকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।