বগুড়ায় ফখরুলের আসনে নির্বাচনী প্রচারে আ’লীগ ও জাপা সরব হচ্ছে: ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপিও!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯ ০৪:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫১ বার।


বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারে নেমে পড়েছেন। তবে তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। প্রচারে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরাও। 
ওই দু’টি দলের বাইরে শেষ মুহুর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে-এমন সম্ভাবনা থেকে ভেতরে ভেতরে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে এই রমজান মাসে বগুড়ায় ভোটের আলাপ আবার জমে উঠেছে। ইফতারির পর চায়ের আড্ডায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা এবং নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সম্ভবনা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রীতিমত ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ গ্রহণ না করায় গত ৩০ এপ্রিল তার আসন শূণ্য ঘোষণা করা হয়। তার ৮ দিনের মাথায় নির্বাচন কমিশন থেকে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন এ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবারই প্রথম এ আসনের সবগুলো কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ মে’র মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩ জুন।
বগুড়া সদর আসনে উপ-নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ৩জন। এরা হলেন- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা এবং  জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছোট ছেলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন। তবে ওই তিন জনের মধ্যে রাগেবুল আহসান রিপু এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও তিনি মনোয়ন চেয়েছিলেন। সে সময় তিনি বগুড়ার উন্নয়নে তাঁর ভাবনা ও সম্ভাব্য উদ্যোগের কথা জানিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টির কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। উপ-নির্বাচনে মনোয়ন চাইবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এবার মনোনয়ন চাইব। সুযোগ পেলে বগুড়ার উন্নয়নে আমার যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।’ 
বসে নেই বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলনও। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। খুব শিগগিরই তিনি ভোটারদের মাঝে প্রচার চালাবেন বলেও তার সমর্থকরা জানিয়েছেন। তার পক্ষে মাঠে তৎপর জেলা আওয়ামী উপ-দপ্তর সম্পাদক মাশরাফি হিরো জানান, প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বগুড়ায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। সেজন্য আমরা তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে ঋণী। যেহেতু মমতাজ উদ্দিন কখনো সংসদে যাবার সুযোগ পাননি তাই নেত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে তাঁর ছেলেকে যেন সংসদে নিয়ে যাওয়া হয়। 
নিজের প্রার্থীতার কথা জানাতে গিয়ে বগুড়া চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। বগুড়ার উন্নয়নের জন্য অনেক ভূমিকা রেখেছেন। যদি আমাকে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমি সকলকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়াকে আরও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো।’ ওই দুই নেতার বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি. জামান নিকেতাও নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বাইরে ওই আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম ওমর আবারও লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর নির্দলীয় তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামতে আগ্রহী বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ মিঠু। সাবেক সাংসদ বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর উপ-নির্বাচনে প্রার্থীতার ইচ্ছা পোষণ করে বলেছেন, ‘আমি সাংসদ হিসেবে দায়িত্বপালনকালে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছি। আবার কিছু কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। যদি আবার সংসদে যেতে পারি তাহলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করবো।’ আর বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহম্মেদ মিঠু জানান, বগুড়ার জনগণের উন্নয়নের জন্যই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বাইরে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপ-নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাংসদসহ বিএনপির অপর ৫ সাংসদ এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন সে কারণে তারা মনে করছেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনেও শেষ মুহুর্তে ধানের শীষের প্রার্থী থাকবে। সেক্ষেত্রে ১৯৯৬ সাল থেকে নির্বাচন করে আসা দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এই আসনটিতে আবারও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। তবে তিনি রাজি না হলে হয়তো স্থানীয় নেতাদের কাউকে বেছে নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, সম্প্রতি বিলুপ্ত ঘোষিত বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন ও বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজগর আলী তালুকদার হেনা মধ্যে যে কোন একজনকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলেই তারা মনে করছেন। তবে এ নিয়ে বিএনপির স্থানীয় কোন নেতাই প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হনানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, দল চাইলে তারা নির্বাচনে করবেন। না চাইলে নয়।