২০ দলের বৈঠকে যাবেন না পার্থ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯ ০৫:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৪ বার।

শরিকদের ক্ষোভ প্রশমনে আগামীকাল সোমবার ২০-দলীয় জোটের বৈঠক ডেকেছে বিএনপি। বিকাল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ২০-দলীয় জোট থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে পার্থ বৈঠকে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

বিএনপির নির্বাচিত ৫ এমপির শপথ কেন্দ্র করে ২০-দলীয় জোট থেকে আন্দালিভ রহমান পার্থের বেরিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য শরিক দলের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে জোটের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জোটের শরিকদের ক্ষোভ প্রশমনে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ জোটের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সেটি ছিল জোটের দ্বিতীয় বৈঠক। দীর্ঘদিন ধরে বৈঠক না ডাকায় জোটের বাধন হালকা হয়ে গেছে বলে মনে করেন নেতারা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে বিজেপির জোট ত্যাগ এবং আরেক শরিক লেবার পার্টির বিএনপিকে দেয়া আলটিমেটামসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে জোট সংস্কারেরও প্রস্তাব তোলা হতে পারে। জোটের আকার কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

জোট ত্যাগকারী আন্দালিভ রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকেও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয় থেকে আন্দালিভ রহমান পার্থকে ফোন করে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে পার্থ বৈঠকে যোগ না দেয়ার কথা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্থ বলেন, ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে ফোন দেয়া হয়েছে। তবে আমি ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করব না।

জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজেপি মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ জানান, একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সম্পর্ক থাকা দরকার ২০ দলের সঙ্গে সেটি অবশ্যই আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে। আমরা সম্পূর্ণ নৈতিক জায়গা থেকে ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়েছি। সুতরাং তাদের বৈঠকে আমাদের যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তবে আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানও পার্থের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিজেপির বৈঠকে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলে একাদশ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট একাদশ সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারেনি জোটের শরিক বিএনপি ও গণফোরাম। দুটি দলের নির্বাচিত ৮ প্রতিনিধির মধ্যে সাতজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। জোটের শরিকদের অভিযোগ তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই প্রধান শরিক বিএনপি সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে পুনর্নির্বাচন দাবি করার নৈতিকভিত্তি নষ্ট হয়ে গেছে জোটের। এই অভিযোগে সোমবার ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় আন্দালিভ রহমান পার্থের বিজেপি।

গত সোমবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি। দলটি জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০-দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। বিএনপির রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে পড়েছে। ২০ দলের গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। এ ছাড়া শপথের মাধ্যমে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। খবর যুগান্তর অনলাইন

সূত্র জানায়, এতদিন শরিক দলগুলোর অভিযোগ ও ক্ষোভ আমলে না নিলেও পার্থ জোট ত্যাগের পর বিরোধ কমাতে আলোচনা শুরু করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের সিনিয়র এক নেতা।

জোটের অভ্যন্তীরণ বিরোধ কমাতে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মান-অভিমান নিরসনে ওই নেতা ইতিমধ্যে জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথাও বলেছেন।

বিজেপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে আন্দালিভ রহমান পার্থের সঙ্গে কথা বলেছেন জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। যদিও জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনড় থাকার কথা তাকে জানিয়েছেন পার্থ।

১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাপা), জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। ২০০০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাপা জোট ছাড়লেও নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির একাংশ বিজেপি নামে জোটে থেকে যায়।

নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে দলের দায়িত্ব নেন তার ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। বিএনপির শরিক হিসেবে পথচলা অব্যাহত রেখে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। ১৯ বছর পর সোমবার জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় বিজেপি।

সূত্র আরও জানায়, সোমবারের বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্কাইপিতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সংসদে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত শরিকদের অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।