কোরআনের কিছু কথা-৯

প্ররোচণার ফাঁদ  হতে সাবধান থাকতে হবে

প্রকাশ: ১৬ মে ২০১৯ ১৪:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৫০ বার।

একটি ঘটনা বর্ণনার দিয়ে শুরু করা যাক। হযরত আবু হুরায়রা রা: বলেন,“একবার এক ব্যক্তি নবী করীম সা: -এর উপস্থিতিতে হযরত আবু বকর রা: -কে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে লাগলো। হযরত আবু বকর রা: চুপচাপ তার গালাগাল শুনতে থাকলেন আর নবী করীম সা: তা দেখে মুচকি হাসছিলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত আবু বকর রা: -এর ধৈর্যের বাঁধ ভেংগে গেলো। তিনি জবাবে সেই ব্যক্তিকে একটি শক্ত কথা বললেন। তাঁর মুখ থেকে সে কথাটি বের হতেই নবী করীম সা: তীব্রভাবে কুণ্ঠিত হয়ে পড়লেন। তাঁর চেহারা মোবারকের ওপর সেটার চিহ্ন প্রকটিত হয়ে উঠলো। তখন নবী করীম সা: বাইরে চলে গেলেন। হযরত আবু বকরও (রা:) উঠে তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন। পথিমধ্যে তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি আমাকে গালাগাল করতে লাগলো, আপনি চুপচাপ মুচকি হাসতে থাকলেন। আর যখন আমি তার জবাব দিলাম, তখন আপনি অসন্তুষ্ট হলেন? নবী করীম সা: বললেন, “তুমি যতক্ষণ চুপচাপ ছিলে, ততক্ষণ একজন ফেরেশতা তোমার সংগে ছিলেন ও তোমার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু তুমি নিজেই যখন কথা বলে উঠলে তখন ফেরেশতার স্থানে শয়তান এসে বসলো। আমি তো শয়তানের সাথে বসতে পারি না।” -[মুসনাদে আহমেদ] 
শয়তান মানুষের বড় কল্যাণকামী ও দরদী বন্ধু সেজে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে বলে, ‘এই অন্যায়-অত্যাচার তো কিছুতেই সহ্য করা যেতে পারে না,অমুক কথার তো দাঁত ভাংগা জবাব দিতে হবে, এ হামলার জবাবে তো যুদ্ধ শুরু করে দেওয়া উচিত।’ শয়তান মানুষকে আরো উষ্কানি দেয় যে, ‘তোমরা যদি প্রতিশোধ গ্রহণ না করতে পারো তাহলে লোকে তোমাদেরকে কাপুরুষ মনে করবে, তোমাদের বংশের সুনাম ও প্রতিপত্তি নষ্ট হয়ে যাবে, তোমাদেরকে ইট মেরেছে এর বদলে কমপক্ষে পাটকেল তো মারতেই হয়।’ -এমন উষ্কানিময় অবস্থায় মানুষের মধ্যে ভয়ানক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ক্রোধান্ধ হয়ে ভুল করে বসে। শয়তানের উষ্কানির ফাঁদে আটকে যায়। শয়তানের প্ররোচণার কারণেই এমনটা হয়ে যায়। এ জন্যেই মানুষের উচিত যখনই নিজেদের মধ্যে কোনো উষ্কানিমূলক ও অবাঞ্ছনীয় উত্তেজনা বোধ করবে তখনই সে ব্যাপারে পুরোপুরি সাবধান হয়ে যেতে হবে এবং শয়তানের প্ররোচণার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ বলছেন-
“তোমরা যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচণা অনুভব করতে পারো, তা হলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।” -সূরা হা-মীম সাজদা:৩৬
শয়তান এক বড় ধোঁকাবাজ। সে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায় যখন মানুষ নিচুতা ও হীণতার মোকাবিলায় ভদ্রতা-শালীনতা অবলম্বন করে, অন্যায় ও পাপের মোকাবিলায় পুণ্যময় আচরণ করে। শয়তান চায় কোনোভাবে একবার হলেও সত্যের অনুসারী মানুষদেরকে ভুল পথে ঠেলে দেয়া। বিশেষ করে শয়তান চায় সত্যপন্থী লোকদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, নেতৃস্থানীয়, ধনবাণ ইত্যাদি শ্রেণির- তারা ভুল করে বসুক। এই শ্রেণির লোকেরা ভুল করে বসলে তখন সাধারণ মানুষকে বলা যাবে যে, ‘দেখো, অন্যায় এক তরফা হচ্ছে না, যদিও এদিক থেকে কিছু খারাপ আচরণ করা হয়েছে তবে সত্যপন্থী লোকেরাও তেমন উচ্চমানের লোক নয়, তারাও তো এই একই অন্যায় কাজ করছে।’ 
‘কে বাড়াবাড়ি শুরু করলো আর কে সেটার শুধু জবাব দিলো’- সাধারণ মানুষের তা তুলনা করে দেখার ক্ষমতা কম থাকে। সাধারণ মানুষ চায় যে, সর্বপ্রকার উষ্কানি, দুষ্কৃতি ও অন্যায় আচরণ করা সত্ত্বেও সত্যপন্থী লোকেরা ভদ্রতা, শালীনতা, পুন্যশীলতা ও ন্যায়পরতার পথ থেকে এক বিন্দু সরে যাবে না। সাধারণ মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত সত্যপন্থীদের ঈমাম, মুরব্বি ও নেতাদের প্রতি ভক্তিভাজন হয়ে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সঠিক পথে থাকে। দুষ্কৃতির জবাব দুষ্কৃতি দিয়ে দিলে লোকে বরং বলবে,- এদেরই দোষ, এরাই তো খারাপ। এ অবস্থায় বিরুদ্ধবাদীরাও বাহানা পেয়ে যায়। আর তখন একটা শক্ত কথার জবাবে সত্যপন্থীদের হাজার গালি শুনতে হয়। সত্যপন্থী লোকদের দিয়ে যদি কোনো অন্যায় আচরণ হয়ে পড়ে -তা যত বড় কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধেই হোক না কেন, তা হলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে শয়তানপন্থী ও সত্যপন্থী- এই উভয় শ্রেণিই সমমানের লোক হয়ে যায়। ফলে সত্যপন্থী তথা মুসলমান হওয়ার দাবিটাই অসাড় পড়ে। 
অনেক সময় মনে হতে পারে আমরা তো শয়তানের প্ররোচণার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক আছি। এ অবস্থায় সাবধানতার কল্পিত আবরন নিজেকে অহমিকায় নিমগ্ন করে দেয়। আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারি, শয়তান আমাকে দিয়ে কোনো ভুল করাতে পারে না- এসব বলে যেন নিজের মনে কোনো অহংকার না জাগে। কেননা নিজের বিচার ক্ষমতা ও সংকল্প দৃঢ়তার এই অহংকার শয়তানের একটা বড় ধোঁকা এবং অতিশয় মারাত্মক ধোঁকা। তাই আমাদের উচিত হবে শয়তান হতে রক্ষা পেতে সব সময় আল¬াহ্র কাছে আশ্রয় চাওয়া। কেননা তিনিই তো আসল তাওফীক দাতা। তিনি রক্ষা করলেই মানুষ ভুল ভ্রান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

 চলবে...