শিক্ষণীয় গল্প

হায়দারের সততা

মহল আরা বেগম
প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯ ০৬:৪১ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৩৪৫ বার।

এক দেশে ছিলেন এক রাজা। তিনি সৎ ও ন্যায় পরায়ণ রাজা হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ধনী-গরীব সকল মানুষকে তিনি সমান চোখে দেখতেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সময়ের পরিক্রমায় তার বয়স বাড়তে লাগল। তিনি ভাবলেন তাঁর জীবদ্দশায় একজন সৎ মানুষকে রাজ্য শাসনের জন্য নির্বাচন করবেন। হোক সে ধনী বা গরীব। কিন্তু তাকে হতে হবে সৎ।
সেই উদ্দেশ্যে তিরি রাজ্যের যুবকদের রাজ দরবারে হাজির হওয়ার জন্য আহবান করলেন। রাজার আহবানে সাড়া দিয়ে যুবকরা রাজ দরবারে উপস্থিত হল। রাজা মশায় তাদের বললেন, ‘তোমরা নির্ভয়ে আমার কথা শোন। আমি যা আদেশ করবো তোমরা তা পালন করবে।’ যুবকরা চুপচাপ রাজার কথা শুনলো। রাজা বললেন, ‘আমি তোমাদের কিছু শস্য বীজ দেব। তোমরা সেই বীজ মাটির পাত্রে রোপন করবে। চারা গজালে পাত্রসহ চারা গাছটি দরবারে নিয়ে আসবে।’
যুবকরা বীজ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হল। তারা যথারীতি মাটির পত্রে বীজ রোপন করল। যথা সময়ে রাজা মশায় যুবকদের আবার দরবারে ডাকলেন। যুবকরা সতেজ চারা নিয়ে দরবারে হাজির হল। কিন্তু হায়দার নামে এক যুবক মাটির খালি পাত্র নিয়ে দরবারে এল। সে ভয়ে ও লজ্জায় দরবারের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল। রাজা দেখলেন শুধু একজন ছাড়া সকলের মাটির পাত্রে চারা গজিয়েছে। তিনি সকল যুবককে কাছে ডাকলেন। হায়দার ভয়ে ভয়ে খালি পাত্র নিয়ে রাজার সামনে দাঁড়াল। রাজা মশায় তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ও যুবক তোমার পাত্রে চারা নেই কেন?’ হায়দার বুকে সাহস সঞ্চার করে বললো, ‘জাঁহাপনা এটা আমার অপারগতা, আমি শত যত্ন করেও বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাকে মাফ করবেন জাহাপনা।’
রাজা কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। তারপর সকল যুবকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘ও যুবকেরা তোমাদের বীজ থেকে চারা গজালো কি করে? কারণ আমি তোমাদের যে বীজ দিয়েছিলাম সেগুলো ছিল সেদ্ধ করা বীজ। ঐ সেদ্ধ করা বীজ থেকে কিভাবে চারা গজানো সম্ভব! তোমরা অসৎ, ছলনাকারী। কিন্তু ঐ একটি যুবক- যে কোন চাতুরীর আশ্রয় নেয়নি। সে খালি পাত্র নিয়ে এসেছে। আর দিয়েছে সততার পরিচয়। আমি একজন সৎ যুবকের সন্ধানের জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন করেছিলাম। হায়দার সেই সৎ যুবক। সৎ বিবেচনায় আমি তাকে ভবিষ্যৎ রাজা ঘোষণা করছি।’
উপদেশঃ বন্ধুরা তোমরা সৎ ভাবে চলবে। সৎ কাজ করবে। ক্লাসে কারও জিনিস না বলে নেবে না। মিথ্যা কথা বলবে না। মারামারিতে লিপ্ত হবে না। অন্যের কোন ক্ষতি হয়-এমন কোন কাজই করবে না। বরং মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবে। সৎ মানুষ সদা সমাজ ও সংসারে সমাদৃত হয়। সততা তোমাকে অনেক বড় অবস্থানে নিয়ে যাবে।