কোরআনের কিছু কথা-১১

মদ খাওয়া কেন পর্যায়ক্রমে হারাম হলো 

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৯ ০৬:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭১১ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে]
আল্লাহর নির্দেশাবলীর তাৎপর্য তিনিই জানেন। তবে শরীয়তের নির্দেশসমূহের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, কোনো বিষয়ে কোনো হুকুম প্রদান করতে গিয়ে মানবীয় আবেগ অনুভূতিসমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে যাতে মানুষ সেগুলোর অনুসরণ করতে গিয়ে বিশেষ কষ্টের সম্মুখীন না হয়। যেমন কোরআন নিজেই সূরা আল-বাকারা-এর ২৮৬ নং আয়াতের প্রথম অংশেই ঘোষণা করছে: 
“আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষকেই এমন আদেশ দেন না, যা তার শক্তি ও ক্ষমতার ঊর্ধ্বে।” 
সূতরাং আল্লাহর এই দয়া ও রহস্যের চাহিদা ছিলো ইসলামী শরীয়তেও মদ্যপানকে হারাম করার ব্যাপারে পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ। 
মদ্যপানকে পর্যায়ক্রমিক নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোরআনের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম হচ্ছে এই যে, মদ্যপান সম্পর্কে চারটি আয়াত নাযিল হয়েছে। তার মধ্যে সূরা বাকারা-এর ২১৯ নং আয়াতটি প্রথম নির্দেশ। এতে মদ্যপানের দরুণ যেসব পাপ ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়, তার বর্ণনা দিয়েই ক্ষান্ত করা হয়েছে। মদ্যপান হারাম করা হয়নি, বরং এ আয়াতটিকে এই মর্মে একটা পরামর্শ বলা যেতে পারে যে, এটা বর্জনীয় বস্তু। কিন্তু বর্জন করার কোনো নির্দেশ এতে দেওয়া হয়নি। 
দ্বিতীয় নির্দেশ সূরা নিসা-এর ৪৩নং আয়াতে বিশেষ করে নামাজের সময় মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সময়ের জন্য অনুমতি রয়ে গেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ নির্দেশসূরা আল মায়িদা-এর ৯০ ও ৯১ নং আয়াতে পরিষ্কার ও কঠোরভাবে মদ্যপান নিষিদ্ধ ও হারাম করে দেয়া হয়েছে। 
এ বিষয়ে শরীয়তের এমন পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ ছিলো এই যে, আজীবনের অভ্যাস ত্যাগ করা, বিশেষত নেশাজনিত অভ্যাস হঠাৎ ত্যাগ করা মানুষে পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হতো। 
আলেমগণ বলেছেন: “যেভাবে শিশুদেরকে মাতৃস্তনের দুধ ছাড়ানো কঠিন ও কষ্টকর, তেমনি মানুষের কোনো অভ্যাসগত কাজ ত্যাগ করা এর চাইতেও কষ্টকর।” এজন্য ইসলাম একান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথমে শরাবের মন্দ দিকগুলো মানব মনে বদ্ধমূল করেছে। অত:পর নামাজের সময়ে একে নিষিদ্ধ করেছে এবং সবশেষে বিশেষ বিশেষ সময়ের পরিবর্তে কঠোরভাবে সর্বকালের জন্যেই একে নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেছে। তবে শরাব হারাম করার ব্যাপারে প্রথমত ধীরে মন্থর গতিতে এগিয়ে যাওয়াটাই ছিলো বৈজ্ঞানিক পন্থা। তেমনিভাবে কঠোরভাবে হারাম ঘোষণার পর এর নিষিদ্ধতার আইন-কানুন শক্তভাবে জারি করাও বিজ্ঞতারই পরিচায়ক। এজন্য রাসূল (সা:) শরাব সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: “সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে শরাব। এটি পান করে মানুষ নিকৃষ্টতর পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে।” 
নাসায়ী শরীফে উদ্বৃত এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, “শরাব ও ঈমান একত্র হতে পারে না।” তিরমিযীতে হযরত আনাস (রা:) হুযুর (সা:)-এর নিকট হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুজুর (সা:) মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণির ব্যক্তির উপর লানত করেছেন।
(১) যে লোক নির্যাস বের করে (২) প্রস্তুতকারক (৩) পানকারী (৪) যে পান করায় (৫) আমদানীকারক (৬) যার জন্য আমদানী করা হয় (৭) বিক্রেতা (৮) ক্রেতা (৯) সরবরাহকারী (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী।
[আলোচনা বিস্তৃত না করার স্বার্থে মদ সম্পর্কিত আরো কিছু হাসীদের বর্ণনা করা হলো না।]
অত:পর রাসূল (সা:) শুধু মৌখিক শিক্ষা ও প্রচারের উপরই ক্ষান্ত হননি। বরং যথাযথ আইনের মাধ্যমেও ঘোষণা করেছেন যে, যার নিকট কোনো প্রকার মদ থেকে থাকে, তা অমুক স্থানে উপস্থিত করো।

(পরবর্তী অংশ আগামীকাল)