বগুড়ায় আরডিএ’র মতিনসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট:
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৯১১ বার।

বগুড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’র (আরডিএ) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম এ মতিনসহ অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য গ্রাম পর্যায়ে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য নেওয়া ‘পল্লী জনপদ’ নামে বড় একটি প্রকল্পসহ ২০১২ সাল থেকে নেওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নথি, ব্যাংক হিসাব, নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র তলব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওইসব নথি ও রেকর্ডপত্র চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এম এ মতিনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী সকল নথি ও রেকর্ডপত্র দুদক বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলামের কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতিপূর্বে বাস্তবায়ন করা চরজীবিকায়ন প্রকল্পসহ পানি সরবরাহ এবং খামার এবং স্কুল প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিঠিতে আরডিএ’র গঠনতন্ত্র, বিভিন্ন প্রকল্পের নীতিমালা ও খরচের বিলভাউচারসহ মোট ১১ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
বসত-বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে ফসলি জমি নষ্ট না হয় সেজন্য গ্রাম পর্যায়ে সরকারিভাবে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ২০১৪ সালের ১ জুলাই ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। দেশের ৭টি বিভাগের অধীন সাত জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আরডিএ-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪২৪ কোটি টাকা।
রাজশাহী বিভাগের জন্য বগুড়ায় আরডিএ কার্যালয়ের অদূরে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর মৌজায় ৩ দশমিক ৯১ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রায় তিন বছর আগে ওই প্রকল্পের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভুমি হুকুম দখল শাখার (এলএ) মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ অর্থাৎ কেনার কথা থাকলেও আরডিএ তা মানেনি। বরং স্থানীয় কিছু মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩০ জুন সম্পাদিত দলিলে প্রকৃত মূল্যের চাইতে দ্বিগুণের বেশি দাম দেখানো হয়। এভাবে আরডিএ’র মহাপরিচালকের (ডিজি) নামে জমি কিনতে গিয়ে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই দৈনিক সমকাল-এর শেষ পৃষ্ঠায় ‘সরকারি আবাসন প্রকল্পের ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরেও ওই দুর্নীতির খবর প্রচার করা হয়। বিষয়টি  নিয়ে নিয়ে  সে সময় তদন্ত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পল্লী জনপদ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধু বগুড়াতেই নয় অন্য বিভাগের অধীন জেলাগুলোতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে নির্ধারিত সময় ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে বলা হলেও আরডিএ তা পারেনি। যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে।
বগুড়ায় আরডিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম এ মতিন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীন মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম বদলী হয়ে গেলে পরিচালক এম এ মতিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা সম্পন্ন আরডিএর মহাপরিচালকের পদটি বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এম এ মতিন নন ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও নানা কৌশলে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাপরিচালকের পদ আঁকড়ে আছেন। এমনকি নিজে ওই পদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি সবখানে নিজেকে মহাপরিচালক পরিচয় দেন। তাছাড়া আরডিএ’র ওয়েব সাইটেও তার পদবী ‘মহাপরিচালক’ লেখা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, এম এ মতিন আরডিএ’র একজন পরিচালক। তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এম এ মতিনসহ ৯/১০জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদক সদর দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নথি ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারই ভিত্তিতে তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এম এ মতিন বলেন, ‘দুদকের চিঠি আমি পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলবো না। আগে তাদের প্রশ্নের জবাব দিই। তারপর আপনাদের সব জানাবো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মহাপরিচালক নই। ওই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’ তাহলে আরডিএ’র ওয়েব সাইটে মহাপরিচালক পদবী লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের কোন পদ না রাখা হয়নি। তাই আমাকে মহাপরিচালক হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।’