কোরআনের কিছু কথা-১২

সাহাবিগণ বিনা দ্বিধায় মদ্যপান ত্যাগ করার আদেশ পালন করলেন

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২০ মে ২০১৯ ০৫:৫৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৪০ বার।


[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে]
মদ্যপান ত্যাগ করার আদেশ পাওয়া মাত্র সাহাবিগণ নিজ নিজ ঘরে ব্যবহারের জন্য রক্ষিত মদ তৎক্ষণাৎ ফেলে দিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেছেন যে, যখন রাসূল করীম (সা:)-এর প্রেরিত এক ব্যক্তি মদীনার অলি-গলিতে প্রচার করতে লাগলেন যে, মদ্যপান হারাম করা হয়েছে, তখন যার হাতে শরাবের যে পাত্র ছিলো, তা তিনি সেখানেই ফেলে দিয়েছিলেন। যার কাছে মদের কলস বা মটকা ছিলো তা ঘর থেকে তৎক্ষণাৎ বের করে ভেংগে ফেলেছেন। হযরত আনাস (রা:) তখন এক মজলিশে সাকীর কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবু তালহা, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহা, উবাই ইবনে কাব, সোহাইল (রা:) প্রমুখ নেতৃস্থানীয় সাহাবি সে মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌঁছার সংগে সংগে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেনএবার সমস্ত শরাব ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাঁড়ি ভেংগে ফেলো। অন্য বর্ণনায় আছে- হারাম ঘোষণার সময় যার হাতে শরাবের পেয়ালা ছিলো এবং যা ঠোঁট স্পর্শ করেছিলো, তাও তৎক্ষণাৎ সে অবস্থাতেই দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সেদিন মদীনায় এ পরিমাণ শরাব নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো যে, বৃষ্টির পানির মতো শরাব প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছিলো এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত মদীনার অলি-গলির অবস্থা ছিলো যে, যখনই বৃষ্টি হতো তখন শরাবের গন্ধ ও রং মাটির উপর ফুটে উঠতো। 
যখন আদেশ হলো যে, যার কাছে যে রকম মদ রয়েছে, তা অমুক স্থানে একত্র করো, তখন মাত্র সেসব মদই বাজারে ছিলো, যা ব্যবসার জন্য রাখা হয়েছিলো। এ আদেশ পালন কল্পে সাহাবিগণ বিনা দ্বিধায় নির্ধারিত স্থানে সব মদ একত্র করেছিলেন। হুজুর (সা:) স্বয়ং সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বহস্তে সাহাবিগণের দ্বারা পাত্র ভেংগে ফেলেন এবং অবশিষ্টগুলো সাহাবিগণের দ্বারা ভাংগিয়ে দিলেন। জনৈক সাহাবি মদের ব্যবসা করতেন এবং সিরিয়া থেকে মদ আমদানী করতেন। ঘটনাচক্রে তখন তিনি এ পণ্য নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং মদীনায় প্রবেশ করার পূর্বেই যখন মদ হারাম হওয়ার সংবাদ তাঁর কানে পৌঁছালো তখন সেই সাহাবিও সমুদয় মাল, যা অনেক মুনাফার আশায় আনা হয়েছিলো, এক পাহাড়ের পাদদেশে রেখে এসে হুজুরে আকরাম (সা:)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে এসব সম্পদের ব্যাপারে কি করতে হবে তৎসম্পর্কে নির্দেশ প্রার্থনা করলেন। মহানবী (সা:) হুকুম করলেন মটকাগুলো ভেংগে সমস্ত শরাব ভাসিয়ে দাও। অত:পর বিনা আপত্তিতে তিনি তাঁর সমস্ত পুঁজির বিনিময়ে সংগৃহীত এ পণ্য সম্ভার স্বহস্তে মাটিতে ঢেলে দিলেন এ ঘটনায় সাহাবিগণ যে বিস্ময়কর আনুগত্যের নিদর্শন দেখালেন সেটাও ইসলামের একটি মুজিযা । যে জিনিসের অভ্যাস হয়ে যায় সবাই জানে যে, তা ত্যাগ করা বড় কঠিন হয়ে পড়ে। মদ্যপানে তারা এমন অভ্যস্ত ছিলেন যে, অল্পদিন তা থেকে বিরত থাকাও স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু নবী করীম (সা:)-এর একটি নির্দেশই তাঁদের অভ্যাসে এমন অপূর্ব বিপ্লব সৃষ্টি করলো যে, তারপর থেকে তাঁরা শরাবের প্রতি ততটুকুই ঘৃণা পোষণ করতে লাগলেন, যতটুকু পূর্বে তাঁরা এর প্রতি আসক্ত ছিলেন।    
এখানে উল্লেখ্য যে, সূরা আল-মায়িদা-এর ৯০নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার পূর্বে হযরত নবী করীম (সা:) এক ভাষণে লোকদেরকে সাবধান করে বললেন যে, মদপান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দীয় কাজ। তা চূড়ান্তভাবে হারাম হওয়ার নির্দেশ নাযিল হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। অতএব যাদের কাছে মদ বা শরাবের পণ্য মওজুদ রয়েছে সে যেন তা বিক্রয় করে ফেলে। এর কিছুকাল পরেই এ আয়াত নাযিল হয়। তখন রাসূলে করীম (সা:) ঘোষণা করে দিলেন যে, এখন যাদের কাছে শরাব মজুদ রয়েছে তারা তা না পান করতে পারে, না পারে বিক্রয় করতে; বরং তা তাদেরকে বিনষ্ট করে ফেলতে হবে। ফলে মদীনার অলিতে গলিতে শরাব প্রবাহিত হতে লাগলো। 
কেউ, কেউ জিজ্ঞেস করলো: “এটা আমরা ইহুদীদেরকে উপঢৌকনস্বরূপ দিতে পারি কিনা?” উত্তরে নবী করীম (সা:) বললেন, “যিনি এটা পান করতে নিষেধ করেছেন, তিনি এটা উপঢৌকনস্বরূপ দিতেও নিষেধ করেছেন।” অপর একজন জিজ্ঞেস করলো “শরাব দ্বারা আমরা সিরকা বানাতে পারি কিনা?” হযরত নবী করীম (সা:) তাও নিষেধ করলেন। বললেন: না, তাকে ফেলে প্রবাহিত করে দাও।” এক ব্যক্তি বার বার জিজ্ঞেস করলো: “ঔষধ হিসাবে তো ব্যবহারের অনুমতি আছে? নবী করীম (সা:) বললেন: “না, ঔষধ নয়; তা বরং রোগ।”
অপর একজন জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! আমরা অত্যন্ত শীতপ্রধান এলাকায় বসবাস করি, আমাদের শ্রম-মেহনত ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়। এ সময় মদ পান করে আমরা ক্লান্তি দূর করি ও শীত প্রতিরোধ করি।” তখন হযরত নবী করীম (সা:) জিজ্ঞেস করলেন: “তোমরা যা পান করো তাতে নেশা হয় কি?” সে বলল, ‘জ্বি হ্যাঁ’। তখন নবী করীম (সা:) বললেন ‘তাহলে তা পরিহার করো।” সে বললো, কিন্তু আমাদের এলাকার লোকেরা তো এটা মেনে নিতে প্রস্তুত হবে না।” তখন নবী করীম (সা:) এরশাদ করলেন, “তারা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করো।”

(পরবর্তী অংশ আগামীকাল)