আন্দোলনকারীদের সাফ কথা ‘দাবি না মানলে আলোচনা নয়’ 

বগুড়ায় বিএনপির পদ বঞ্চিতদের সমঝোতার প্রস্তাব দিলেন আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২২ মে ২০১৯ ১১:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৭১ বার।

বগুড়ায় আন্দোলনরত বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগনের পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফজলুল বারী তালুকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য বিকেলে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে তালাবদ্ধ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভরত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে ওই প্রস্তাব দেন।
তবে পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আহবায়ক কমিটি বাতিল এবং পদ-পদবী স্থগিত ও বহিস্কার করা নেতা-কর্মীদের স্বপদে বহাল করা ছাড়া তারা কোন সমঝোতায় যাবেন না। বেলা সাড়ে ৩টায় আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে আবারও সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে গঠিত আহবায়ক বাতিলের দাবি জানানো হয়। 
বগুড়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বিএনপির জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহবায়ক করে গত ১৫ মে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে পদ বঞ্চিত নেতা এবং তাদের অনুসারীরা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ‘সংস্কারপন্থী’ উল্লেখ করে তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ওইদিন থেকেই বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিল। এমনকি ওইদিন ইফতারের পর পরই তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। 
ওই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারও আগে জেলা বিএনপির আরও দুই নেতার পদবী স্থগিত করা হয়। তবে তার পরেও আহবায়ক কমিটি বিরোধীদের তৎপরতা থামেনি বরং ১৬ মে বিকেলে আবারও দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। পরদিন ১৭ মে বিকেলে আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ তালা খুলে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও পদ-বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যায় আবারও তালা ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তীতে পদবী-স্থগিত এবং বহিস্তৃত ১৬ নেতার পক্ষে ১৬টি তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন।
  বুধবার বেলা ৩টার দিকে আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, সদস্য রেজাউল করিম বাদশা ও আলী আজগর হেনার নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এ সময় আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে দেলোয়ার পশারী হিরু ও শাহ্্ মেহেদী হাসান হিমু সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে গঠিত আহবায়ক কমিটি বাতিল এবং পদবী স্থগিত এবং বহিস্কৃত ১৬ নেতা-কর্মীকে স্বপদে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। পরে আহবায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর হেনা আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদেরকে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বুধবার রাত ১০টায় স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনায় বসারও প্রস্তাব দেন।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ চলে যাওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত দেলোয়ার পশারী হিরু। তিনি বলেন, বিএনপিতে কিছু স্বার্থান্বেষী নেতৃবৃন্দ রয়েছে যারা বরাবরই স্বার্থের রাজনীতি করে। দল যখন ক্ষমতাসীন হয় তখন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। আবার যখন বিরোধী দলে যায় তখন দেউরিয়ার লেবাস ধারণ করে। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বিরুদ্ধে গম কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী এবং বর্তমান আহবায়ক সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ওয়ান ইলেভেনের হোতা দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘যারা ওয়ান ইলেভেনের হোতা, যার কারণে আপনার শরীর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, যার দরুণ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জেল খাটছেন তাদের নেতৃত্ব বাদ দিয়ে কর্মী বান্ধব ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে বিএনপির নতুন কমিটি উপহার দিন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৬ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।
সমঝোতার প্রস্তাবের ব্যাপারে জানতে চাইলে আহবায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর হেনা বলেন, যারা আজ বিক্ষোভ করছে তারা আমাদের দলেরই নেতা-কর্মী। হাইকমা- আমাদেরকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। তারা কি চায় সেটি শুনতে বলেছেন। সেজন্য আমরা তাদেরকে আজ রাতে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছি। তারা গ্রহণও করেছেন। আশাকরি আর কোন সমস্যা থাকবে না।
তবে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের পক্ষের অন্যতম নেতা জেলা বিএনপি থেকে পদবী স্থগিত রাখা নেতা পরিমল কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা বলেছি দাবি আদায় না হলে বসে লাভ হবে না।’