কী চ্যালেঞ্জ মোদির সামনে?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৯ ১১:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৯ বার।

ভালোভাবেই খুব কঠিন এক পরীক্ষায় পাস করে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি ঝড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে বিরোধীপক্ষগুলো। লোকসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ের পর ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ আবারও ক্ষমতায় বসছে।

এত কঠিন পরীক্ষায় পাস করলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশে থাকা সব সংকটই কি মিটেয়ে ফেলতে পারবেন দিল্লির মসনদে বসতে যাওয়া নরেন্দ্র মোদি? ব্যাপারটি হয়তো এত সহজ হবে না। বেশ কিছু বিষয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদির সামনে সম্ভাব্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আর্থিক সংস্থার ঋণখেলাপির প্রভাব পড়েছে ভারতের আর্থিক বাজারে। ঘাটতি কমাতে নিত্যপণ্যের ওপর ভর্তুকি নিয়েও সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রানীতিসহ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

নতুন সরকারের সামানে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ দারিদ্র্য দূরীকরণ। বিজেপির পিএম-কিষাণ কর্মসূচিতে দরিদ্র কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ছয় হাজার রুপি জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছেছিল। বিষয়টি কত দূর এগুবে সেটিই এবার দেখার বিষয়।

গত কয়েক বছর ধরে বেশ সংকটে পড়েছেন ভারতের কৃষকরা। ২০১৪ সালেরর মতো এই নির্বাচনেও দরিদ্র শ্রেণির ভোটের ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হয়েছে বিজেপির। কৃষি ব্যবস্থা আর কৃষকের সংকট মোকাবেলা মোদির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও খুব সম্ভবত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদি সরকারকে। পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে চিরদ্বন্দ্ব এই দেশের। সর্বশেষ পুলওয়ামায় হামলা-পাল্টা হামলা নিয়ে সেই উসকে যাওয়া উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে সংকট কতদূরে গিয়ে পৌঁছায় সে চ্যালেঞ্জ রয়েই যাচ্ছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে সংকট রয়েছে ভারতের।

সবাইকে নিয়ে একটি ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও গতবারের সরকারে বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন ভারতের অনেক অঞ্চলের মুসলমানরা। গোমাংস খাওয়া, গোহত্যা ও বাণিজ্যের দায়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। অসাম্প্রদায়িক এক দেশ গড়ার সংকট থেকেই যাচ্ছে এখনও।

কর্মসংস্থান নিয়ে বেশ বড় চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে হতে পারে মোদি সরকারকে। চাকরির বাজার বাড়লেও সংকট কাটেনি। সরকারি চাকরিতে আবেদনের সংখ্যা নিয়ে হইচই তৈরি হয় এখনও। এই সংকট মোকাবেলায় বিজেপি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং তা কতটা কার্যকর হবে তা এখন দেখার বিষয়।

সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি শিল্প বিস্ফোরণ ঘটছে। দেশটিতে বিশুদ্ধ খাবার পানির গুরুতর সঙ্কট রয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কতটা মোকাবেলা সম্ভব হবে; তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সর্বজনীন নীতিমালায় স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও বড় স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংকট রয়েছে ভারতে। স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিতে আরো অর্থ ব্যয় ও দক্ষ উপায় বের করার বিকল্প নেই। এটিও মোদি সরকারে সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে।

গুজরাটের রেলস্টেশনে যে বালকের শৈশব কেটেছে চা বিক্রি করে, সে বালকই একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ১২০ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হবেন- কে জানত! এ তো রূপকথাকেও হার মানিয়েছে।

দেশব্যাপী রীতিমতো সুনামি বইয়ে দিয়ে ভারতের মসনদে বসছেন তিনি। হয়তো নরেন্দ্র মোদি নতুন কোনও চমকে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ দূর করে ভারতকে নিয়ে যাবেন অন্য এক উচ্চতায়। তবে বাকিটা দেখতে অন্তত অপেক্ষা করতে হবে আরও পাঁচ বছর।