আমাদের মা জননী-৪

কোন সে ঘটনা, যার তদন্ত রাসূল সাঃ করলেন

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৯ ১৭:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৫১ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে]
যে নবী সা: দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী, জুলুম বিদায় করতে আসলেন। যার আগমনে মরু সাহারায় খুশির ঢেউ লেগেছিলো। যে নবীকে দেখতে ও দেখাতে বার বার ইচ্ছা করে। হৃদয়ের গহীন মাঝে গানের কলি ভেসে ওঠে- “আয়রে সাগর, আকাশ-বাতাস দেখবি যদি আয়!” যে নবী আলোর মিনার, নূর মদিনার জান্নাতি বুলবুল। তিনি তো আমাদের রহমতে রাসূল সা:। শত উপমা দিয়ে সাজিয়ে তুলেও তো সাজানোর শখ মেটে না। তিনি তো সকাল বেলার মিষ্টি বকুল। তিনি এমন এক কাননের ফুল, যার সৌরভ আজো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তিনি তো প্রেমের নবী, ধ্যানের ছবি। তিনি এক স্নেহের ছায়া, মায়ার কায়া! তাঁর ছোঁয়া পেতে, তাঁকে কাছে পেতে হৃদয়ের ব্যাকুলতা তো শেষ হবার নয়। তিনিই মোহাম্মদ সা:, তিনিই আমাদের সর্বশেষ নবী, তিনিই আমাদের প্রাণের রবি।  যখন এই পৃথিবীর সব অন্ধকারে ছেয়ে ছিলো, তখন ধরনীর মাঝে তিনিই তো সভ্যতার আলো জ্বালালেন। তিনি না এলো আঁধারে সবাই ডুবে যেতো । তিনি পথ হারাদের পথের দিশা দেখাতে দিলেন দাওয়াত। আর সেই দাওয়াতের তরে অকাতরে সয়ে গেলেন আঘাত। তাঁর এই আঘাত যে বড্ড বেদনার, বড়ই করুণ। হৃদয় যেন ছিঁড়ে ফুঁড়ে ভেদ করে চলে যায়। সারা জাহানে আমাদের প্রিয় নাম যে মোহাম্মদ সা:! ইয়া নবী সালাম আলাইকা! ইয়া রাসূল সালাম আলাইকা! ইয়া হাবিব সালাম আলাইকা! হয়েছি যে উম্মাত তোমার, তার তরে শোকর হাজার বার। তোমারই প্রেম মন মাঝে যে অহরহ দোলা দিয়ে যায়। আমাদের রাসূল সা: তো ভোগের নয়, ত্যাগের নবী ছিলেন। তিনি তো অন্যায়ের নয়, বরং ন্যায়ের পথে সংগ্রাম করেছেন। বিজয় লাভের পর তিনি তো সোনার মুকুট মাথায় পড়েননি, ময়ূর সিংহাসনও বানাননি। দরবারে বসে ভক্তকূলের কাছ থেকে নযর-নিয়ায, উপহার-উপঢৌকন পাওয়ার আশায় আপেক্ষমানও থাকেননি। আর এসবের জন্যেই তো, নবী মোর পরশমনি, নবী মোর সোনার খনি; নবী নাম জঁপে যে জন সেই তো দো-জাহানের ধনী; সে নামে মধু মাখা, সে নামে জাদু রাখা। আমাদের সেই নবী ব্যথিত হলেন। তাঁর বিমর্ষতা অনুক্ত হলেও তা তো বোঝাই যায়। ব্যাপারটা যে বড়ই স্পর্শকাতর, খুব বেশি সংবেদনশীল। বড্ড বেশি আঘাত দেয়া হলো তাঁকে। রাসূল সা: এর মনতো ব্যথিত হওয়ারই কথা। এটাইতো স্বাভাবিক। আল্লাহর ঈশারায় যাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন সেই স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে এই মদিনারই লোক, মোনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপবাদ নামক কলঙ্কের উন্মাদনায় শয়তানগুলো যেন মদিনার আকাশ বাতাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে নবী করিম সা: এর মনে বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়লো। এই দু:সহ মানসিক যন্ত্রণার তো অবসান হওয়া দরকার। আর তাই রাসূল সা: ঘটনার তদন্ত করার মনোস্থির করলেন। সেই কাহিনীর বর্ণনা উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা তাহেরা রা: এর নিজ মুখ থেকেই শোনা যাক। সেই কাহিনী প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা: বলেন: 
“এই যে রটনার কল্পিত কাহিনী যে সময়টাতে (লোকদের) মুখে চালাচালি হচ্ছিলো, এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে ওহী আসাও বন্ধ ছিলো। তাই আমার অনুপস্থিতিতে রাসূল সাঃ হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রা: ও হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা: কে পৃথক পৃথকভাবে ডেকে এ সম্পর্কে তাঁদের পরামর্শ চাইলেন। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা: আমার পক্ষে ভালো কথাই বললেন। তিনি বললেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার স্ত্রীর মধ্যে ভালো ছাড়া মন্দ কিছু কখনো দেখতে পাইনি। যা কিছু বলে বেড়ানো হচ্ছে, তা সবই পরিষ্কার মিথ্যা কথা, বানোয়াট অভিযোগ মাত্র।” আর হযরত আলী রা: বললেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সংকটের মধ্যে না রাখুন (অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিন)। তিনি ছাড়া আরো অনেকেই তো আছেন। এই একজনের বিষয়ে আপনি এতো মন খারাপ করবেন না। আর প্রকৃত ব্যাপার যদি জানতে চান, তাহলে যে খাদেম মেয়েটি (কাজের মেয়ে) রয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। সে আপনাকে কিছু জানাতে পারবে।” রাসূল সা: খাদেম মেয়েটাকে ডাকলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি ওর (আয়েশা রা: এর) মধ্যে এমন কিছু কি দেখছো যাতে করে তোমার মনে তার চরিত্র সম্পর্কে কোনো সন্দেহ জাগতে পারে?” খাদেম মেয়েটি বললো, “জ্বি না, যিনি আপনাকে সত্যের নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন সেই মহান আল্লাহর কসম, আমি তাঁর মধ্যে খারাপ কিছুই দেখিনি। তাঁর দোষ বলতে এতটুকুই দেখেছি যে, আমি আটা মেখে রেখে যেতাম, আর বলতাম, বিবি সাহেবা! একটু দেখবেন; কিন্তু তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন আর ছাগল এসে তৈরি আটা খেয়ে যেতো।”  [পরবর্তী অংশ আগামীকাল]