ঈদেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৯ ১২:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯২ বার।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করবেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। দাবি না মানা হলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনও সেখানে অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন ঘোষণা দেন পদবঞ্চিত নেতারা। খবর সমকাল অনলাইন 

সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিত, মাদকাসক্ত, অছাত্র ও অনুপ্রবেশকারীদের অবস্থান আছে অভিযোগ করে গত ১৩ মে কমিটি হওয়ার পর থেকে এই অংশটি আন্দোলন করে আসছে।

রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া হবে- এমন খবরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন পদবঞ্চিতরা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের গত কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন জানান, রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করে ঢাকায় ঈদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। যদি এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না দেওয়া হয় তাহলে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করতে থাকবেন তারা। এমনকি ঈদের দিনও রাজু ভাস্কর্যে থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি না মেনে নেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন। তাদের মূল দাবি, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মাদকাসক্ত, বিবাহিত, জামায়াত-শিবির পরিবারের যারা; তাদের অবিলম্বে বাদ দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধেই এই অবস্থান। 

লিপি বলেন, ১৭ জনের একটি লিস্ট দেওয়া হয়েছে। ১১দিন আগে তাদের নাম ঘোষণা করা হলেও এখনও তাদের পদ শূন্য করা হয়নি এবং তাদের নিয়ে ফুল দিতে যাওয়া হচ্ছে। 

তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর একটি পবিত্র জায়গা। সেখানে জাতির কলঙ্কিত যারা, তাদের নিয়ে কোনোভাবে ফুল দিতে যেতে পারে না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। 

বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যানারে বিতর্কিত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদন বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান

এর আগে রোববার রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৭ মে সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নবগঠিত কমিটির সবাইকে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এই কর্মসূচিতে নবগঠিত কমিটির সব নেতাকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা। বিজ্ঞপ্তি দেখার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাকিম চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি সেখান থেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ডাকসু ভবন, কলাভবন হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে তারা সেখানে অবস্থান নেন। বিতর্কিদের বহিষ্কার ও সেসব পদে ত্যাগী কর্মীদের পদায়ন না করেই সংগঠনটির নতুন কমিটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের ঘোষণার প্রতিবাদে রাতেই রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন তারা।

পদবঞ্চিতদের নেতৃত্বে থাকা গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এতদিনে বিতর্কিতদের বহিষ্কার করার কথা ছিলো। আর এর সঙ্গে ত্যাগী কর্মীদের সেসব স্থানে পদায়ন করারও কথা ছিলো। কিন্তু তা না করে বিতর্কিতদের নিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাচ্ছে। শ্রদ্ধা নিবেদন করলেই কমিটি বৈধ বলে বিবেচিত হবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। 

এসময় বিতর্কিতদের দ্রুত বহিষ্কার ও ত্যাগীদের পদায়ন করার দাবি জানান তিনি। অন্যথায় অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কারো কোনো বিতর্ক থাকার কথা না। আর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে কমিটিতে বিতর্কিতদের থাকা না থাকা কোনো বিষয় না। সবারই অধিকার আছে শ্রদ্ধা জানানোর। আমরা পদপ্রাপ্ত, বঞ্চিত সবাইকেই বলেছি যাওয়ার জন্য। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর ‘কনসার্নেই’ যাচ্ছি শ্রদ্ধা জানাতে।

তিনি বলেন, বিতর্কিত যে কয়জনের নাম এসেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ করছি। আমরা বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এসময় শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে যেন কেউ বিতর্ক সৃষ্টি না করে সেই আহ্বান জানান তিনি।

এর আগেও গত ১৮ মে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন পদবঞ্চিতরা।