এতিম শিশুদের ঈদ

মহল আরা বেগম
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৯ ০৯:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৬৬ বার।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এটি। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল মানুষ তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই  উদযাপন করে ঈদ-উল-ফিতর। মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষও অংশ নেয় পবিত্র এই উৎসবে। কিন্তু কিভাবে কাটে এতিম শিশুদের ঈদ? পিতৃ-মাতৃহীন এসব এতিমরা পায় কি ওইসব সুযোগ? রংপুর সরকারি শিশু সদন-এ বসবাসরত এতিম শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ঈদ উযাপনের কথা জানার চেষ্টা করেছি। পুণ্ড্রকথার পাঠকদের জন্য নিচে সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এতিম বলা হয় সই সব শিশুদের যারা শৈশবে পিতা-মাতা হারা অথবা পিতৃহারা হয়েছে। এতিম শিশুরা পিতামাতার আদর ও স্নেহ-ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানসিক কষ্টের শিকার হয়। অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা আর্থিক সঙ্কটে পতিত হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে নিপতিত হয়। তাদের দেখভাল করা, সঠিকভাবে গড়ে তুলবার কেউ থাকে না। মা জীবিত থাকলেও আর্থিক অনটনের কারণে তারা সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হন। এতিম শিশুদের জীবনে নেমে আসে আঁধারের কালো ছায়া। 
আজ থেকে শত বছর পূর্বের চিত্রটাও ছিল একই রকম। বৃটিশ আমল থেকে এতিমদের আশ্রয়স্থল গড়ে তুলবার চিন্তা-চেতনা দেশের কর্মধারদের মাথায় আসে। আর তখনই মানবতার তাগিদে গড়ে ওঠে এতিম খানা। ১৯০৯ সালে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ্ ‘সলিমুল্লাহ্ এতিম খানা' নামে ঢাকায় একটি এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি  ছিল ২১ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত। স্যার সলিমুল্লাহ এতিম খানার মাসিক ব্যায় ভার বহন করতেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সরকার, ধনী ও হৃদয়বান ব্যাক্তিগণ।
দেশের প্রতিটি জেলায় রয়েছে এতিম খানা। সমাজ সেবা অধিদপ্তর ৬৪টি জেলায় ৪২২৪টি এতিম খানার নিবন্ধন দিয়েছে। নিবন্ধনপ্রাপ্ত এতিম খানার ব্যায়ভার সরকারি ভাবে বহন করা হলেও তা প্রযোজনের তুলনায় পর্য়াপ্ত নয়। এইসব এতিম খানায়  ধনী ও হৃদয়বান ব্যাক্তিগণ আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। 
রংপুরের ধাপ সাতগড়া খলিফা পাড়ায় ১৯৮৬ সালে আল-আমিন নামে একটি এতিম খানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ব্যায়ভার বহন করা হয় সরকারি অনুদানের অর্থ থেকে। কিন্তু এই অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে ধনী হৃদয়বান ব্যক্তিগণ সহায়তা করেন। সেখানে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের সঙ্গে তাদের ঈদ উদযাপন নিয়ে কথা হয়। শিশুরা জানায়, শৈশবে তারা মায়ের সাথে এখানে এসেছে। এতিমখানায় ঈদের দিনটি কিভাবে কাটে তা জানতে চাইলে শিশুরা বলে, নতুন জামা-কাপড় পরার আনন্দই অন্যরকম। এরপর লাচ্ছা সেমাই, জরদা পোলাও আর মাংস খেয়ে, খেলা-ধুলা ও হইচই করে তারা ঈদের দিনটি পার করে। পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে ঈদ করতে কেমন লাগে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলে, এতিমখানায় বন্ধু, সহপাঠীদের নিয়ে দিনগুলি বেশ আনন্দের মধ্যেই কেটে যায়। এক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন না থাকলেও তাদের তেম কোন দুঃখ হয় না। কারণ এখানকার বন্ধু-বান্ধবরাও পরম আপন। 
ওসমান গণি নামের শিশুটি জানায়, সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। ভবিষ্যতে সে ইসলামিক স্কলার হতে চায়। মা থাকলেও বাবা নেই। তাই এতিমখানায় আসা।
ঈদের আনন্দ-অনুভূতি নিয়ে কথা হল ওদের সাথে। প্রথমেই জানতে চেয়ে ছিলাম ঈদে নতুন পোশাক পাওয়ার অনুভূতি কেমন।  আনন্দ মিশ্রিত কণ্ঠে ওরা ওদের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করল।  ঈদে নতুন পোষাক পাবে বলে বেশ আনন্দিত ও উচ্ছসিত ওরা। 
রংপুর শিশু সদন কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদে তাদের নিবাসীদের জন্য স্পেশাল খাবার মাংস, সেমাই, জরদা থাকছে। ওরা অপেক্ষা করছে সেই ক্ষণটির যখন সবাই নতুন পোষাক পরিধান করে এক সাথে সেইসব সুস্বাদু  খাবার খাবে। বছরে দু'বার দুই ঈদে এমন খাবারের সুযোগ রয়েছে। 
বিদায় নিলাম  খুশী মনে-এই ভেবে য়েঐ সব এতিম শিশুরা আজ আর অসহায় নয়। ওরা আজ পেয়েছে নতুন জীবনের আলাদা এক স্বাদ। ওদের জীবন হোক সফল ও সমৃদ্ধময় --সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করি।

[সম্পাদনা: মিষ্টি রহমান]