হাদিয়া: কিভাবে দিবেন,কাকে দিবেন?

আরিফ রেহমান
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০১৯ ১৬:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৬৯৮ বার।

হাদিয়া আরবী শব্দ। হাদিয়া শব্দের বাংলা অর্থ হল, উপহার দেয়া, উপঢৌকন দেয়া । আর ইংরেজি গিফট। কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া উপহার দেয়াই ইমলামী শরিয়তে হাদিয়া। হাদিয়া একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা, সম্প্রীতি, বন্ধন আরো শক্তিশালী করে। আমাদের পারিবারিক জীবনে, চলার পথে, কর্ম জীবনে একে অপরকে প্রায় সময়ই আমরা হাদিয়া দেই। ইসলাম একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখতে, ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে হাদিয়া আদান-প্রদানের রীতি প্রচলন করা হয়েছে। হাদিয়া দেয়া ও নেয়া দুটাই জায়েজ আছে। ইসলামে হাদিয়া দেওয়া ও নেয়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ কারনেই মুসলীম সমাজে মধ্যে হাদিয়া আদান- প্রদানের এই রেওয়াজ শুরু থেকেই চলে আসছে।

হাদিয়া দেয়া ও নেয়ায় কোন শর্ত নেই। হাদিয়া কোন ঋণও নয়। আবার কোন কাজের বিনিময়েও হাদিয় দেয়া যাবেনা। কোন উপলক্ষ ছাড়াই হাদিয় আদান -প্রদান করা যায়। আবার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও হাদিয়া প্রদান করা যায়। তবে সদকা আর হাদিয়ার মধ্যে পাথর্ক্য আছে। সদকা হল, আল্লাহর হুকুমে ছওয়াবের নিয়তে দান।

আলেমদের মতে,হাদিয়া উচ্চ পর্যায়ের অনুদান বা ছদকা। হাদিয়াতে দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই সন্মানীত হন। হালাল যে কোন কিছুই হাদিয়া দেয়া যায়। সেটা ছোট হোক বা বড় হোক ।

আমাদের অনেকেরই প্রচলিত ধারনা এটাই যে, সমাজ ব্যবস্থায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, হুজুর, মুফতিদের আলেম, ওলামা, পীর, মাশায়েখ, ওস্তাদকে ভক্তি করে কিংবা দোয়ার নিয়তে যে উপহার দেয়া হয়, সেটাকেই হাদিয়া বোঝানো হয়। আসলে হাদিয়া শুধু সেটা নয়। আমরা আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু বান্ধব, বাবা- মা, ভাই-বোন, শ্বশুড়-শাশুড়ি, প্রতিবেশীকে ভালোবেসে যে উপহার দিচ্ছি সেটা্ও হাদিয়া। এমনি স্ত্রী–সন্তানদের যা দিচ্ছি সেটা্ও । বিশেষ করে, রমজান কিংবা ঈদে যে উপহার একে অপরকে দেই তাও হাদিয়া।

হাদিয়া দেয়া ও নেয়া দুটাই সুন্নাত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হাদিয়া দিতেন ও নিতেন। হাদিয়া দেয়ার মধ্যে দিয়ে রাসুল(সা:) একটি সুন্নাত আদায় হচ্ছে। এটা অনেক ছোয়াবের কাজ। হাদিয়া নিয়ে কিছু আলেমের কিছুটা ভিন্নমতও আছে। তাদের মতে, শুধুমাত্র দোয়ার মানষে উপহার দেয়াই হাদিয়া।

কোরআন- হাদিসের আলোকে হাদিয়া

পবিত্র কোরাআনেও হাদিয়া দেয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। সুরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ নির্দেশ করেছেন,আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই (আল্লাহ) মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন , ইয়াতীম, মুসাফির-মিসকীন, ভিক্ষুক আর মুক্তিকামী কৃতদাসের জন্য।

হাদিস শরীফে আছে, তোমরা হাদিয়া বা উপহার দাও, তোমাদের মধ্যে প্রীতির বন্ধন দৃঢ হবে। (তিরমিজি)। আবার হযরত আতা ইবনে আব্দুল্লাহ খোরাসানী (রা:) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ(সা:) বলেছেন, তোমরা পরস্পর মুসাফাহা কর, এতে অন্তরের হিংসা, বিদ্বেষ দুরীভুত হয়ে যাবে। আর পরস্পরের মধ্য হাদিয়া আদান –প্রদান কর। এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।(মুয়াত্তা মালেক)। এই দুই হাদিসে সরাসরি হাদিয়া আদান-প্রদান করতে বলা হয়েছে। আরেক হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, হে মুসলিম রমণীবৃন্দ! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্যে সামান্য উপঢৌকনকেও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়। [ হাদীস নং- ২৪২৭] এখানে হাদিয়া যত ছোটই হোক, সন্মান করতে বলা হয়েছে। যিনি হাদিয়া দিচ্ছেন তাকেও অসন্মান করতে নিষেধ করা হয়েছে। ছোট হাদিয়া দিয়ে তিনি যেন উপহাস কিংবা অবহেলার পাত্র না হন, সেটা খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

হাদিয়া বৈধ হওয়ার শর্ত

শরিয়ত সম্পত যে কোন কিছুই হাদিয়া দেয়া যায়। খাদ্য বস্ত, ব্যবহারের সামগ্রী কিংবা অন্য কিছু। তবে হাদিয়া বৈধ হওয়ার কিছু শর্ত আছে।

১। হাদিয়া বৈধ হতে হলে অবশ্যই হালাল বস্ত হাদিয়া আদান- প্রদান করতে হবে। কোন হারাম বস্তু যেমন মদ, ঘুষ, শুকুরের মাংস, হাদিয়া আদান -প্রদান করা ইসলামে জায়েজ নেই।

২। কোন অন্যায় উদ্যেশে হাদিয়া লেন-দেন করা যাবেনা। যেমন পরীক্ষায় পাশ করে দেয়া, বিচারে রায় পাওয়া, প্রশাসনিক পদ পাওয়া, চাকরী পাওয়া, কোন বাড়তি সুবিধা দেয়া বা নেয়ার জন্য হাদিয়া দেয়া যাবেনা।

৩। হাদিয়া সম্মতিতে দিতে হবে। হাদিয়া পাওয়া যাবে এই নিয়তেও হাদিয়া দেয়া যাবেনা।

৪। বৈধ সম্পদ থেকে হাদিয়া দিতে হবে। জোর করে কেড়ে নেয়া, ছিনতাই করা কিংবা চুরি করা সম্পদ থেকে হাদিয়া দেয়া যাবেনা।

নিয়ত করে হাদিয়া দেই

ক। যেকোন উপহার পেলে সবারই ভাল লাগে। যিনি হাদিয়া পান তিনি খুশি হন। আবার যিনি হাদিয়া দেন তিনিও খুশি হয়েই হাদিয়া দেন। ঈদ, রোজা, বিয়ে জন্মদিন, সামাজিক অনুষ্টান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আমরা প্রিয়জনদের, পরিচিতদের হাদিয়া দেই। কিন্ত হাদিয়া দেয়ার জন্যও নিয়ত থাকা দরকার। আমি লোক দেখানো হাদিয়া দিচ্ছি, না সেই মানুষকে খুশি করার জন্য হাদিয়া দিচ্ছি, না হক আদায়ের জন্য, না নিজের বড় লোকী দেখানোর জন্য হাদিয়া দিচ্ছি, না সেই লোকের প্রয়োজন মেটানোর জন্য হাদিয়া দিচ্ছি, সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার।

মুসলমানদের সব কাজেরই নিয়ত থাকা দরকার। নিয়ত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে। (বুখারী শরিফ: ১) ।

একথা থেকে বোঝা যায়। নিয়ত থাকাও জরুরী। আমরা নিয়ত ছাড়াই এমনি এমনি একে অপরকে হাদিয়া দেই। সুতরাং মনে মনে একটি নিয়ত থাকা দরকার। মহান আল্লাহর সন্তষ্টি আর রাসুল (সা:) সুন্নাত পালনের উদ্যেশে হাদিয়া দিচ্ছি। হাদিয়া দেয়ার আগে বা পরে মনে মনে এ ধরনের একটি নিয়ত করা উত্তম। এতে নিশ্চয় আরো বরকত হবে। মনে প্রাণে আরো প্রশান্তি আসবে। রাসুলের একটি সুন্নাত আদায় হবে। আর আমাদের জীবনে একটি সুন্নাত পালনের ছোওয়াব লেখা হবে। এটিও হবে একটি নেক আমল।

হাদিয়াদাতাকেও হাদিয়া দেওয়া
ইসলাম আমাদের সৌহাদ্য আর ভ্রাতৃত্ব বোধ শেখায়। প্রতিদান দিতে শেখায়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো পুণ্যের কাজকেই তুচ্ছ জ্ঞান করো না; এমনকি হাসিমুখে কোনো ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকেও না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৬৮৫৭)অন্য একটি হাদীসে এসেছে, আল্লাহর নামে কেউ আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দাও। আল্লাহর নামে কেউ যাঞ্চা করলে তাকে দাও। কেউ অনুগ্রহ করলে প্রতিদান দাও। প্রতিদান দিতে না পারলে অন্তত তার জন্যে দোয়া করো। (সুনানে কুবরা লিন নাসায়ী, হাদীস নং- ২৩৪৮)

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায়, হাদিয়া পেলে কেউ কেউ খুশি হন, শুকরিয়া আদায় করেন। তার প্রয়োজন মেটান। আবার অনেকেই খুশি হন না। তাদের চোখে–মুখে বিরক্তির ভাব ফুটে ওঠে। তারা মনে করেন. পছন্দ হয়নি। ভাল হয়নি। অনেক  কম দাম। কাপড় হলেতো কথাই নেই। এত কম দামের কিছুতো আমি ব্যবহার করিনা। এটা ঠিক হয়নি। এটা দিল কেন ? এটাতো আমার আছেই। কেন দিল?  স্বার্থ কি? কি চায়? পিছনে মতলব কি? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন অনেকেই। এগুলো একেবারেই ঠিকনা। আমরা যাকে হাদিয়া দিচ্ছি, হাদিয়া পেয়ে তাকেও খুশি হতে হবে। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তার জন্য দোয়া করতে হবে। একটা বিষয় ভোবে দেখা দরকার, যিনি আপনাকে হাদিয়া দিলেন, তারতো আপনার মত আরো আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজন আছেন, তাদেরকে বাদ দিয়ে উনি আপনাকেই হাদিয়া দেয়ার জন্য মনোনীত করেছেন। এতে একটা কথা প্রমাণীত হয়, উনি আপনাকে তাদের চেয়ে বেশি মহব্বত করেন। ভালোবাসেন। আপনার কথা ভাবেন। একারনেই উনি হাদিয়া দিয়ে আপনাকে শুধু খুশিই করেননি। আপনাকে সন্মানীতও করেছেন। এ জন্য আপনারও উচিৎ সাধ্যমত, সুবিধা মত সময়ে তাকে যৎসামান্য হলেও হাদিয়া দেয়া। এতে উভয়ের মধ্যে আন্তরিকতা, ভালোবাসা আরো শক্ত হয়। আবার কেনাকাট কিংবা আয়োজনের ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করে হাদিয়া দেয়ার পর যদি যিনি হাদিয়া দিলেন, উনি আপনার অখুশির বিষয় জানতে পারেন, তাহলে তিনিই বেশি কষ্ট পান। আপনার সম্পর্কে তার ধারনা খারাপ হয়। চীর জীবনের জন্য আপনার দিক থেকে উনি মুখ ফিরিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, অনেক মানুষ আছেন, যারা অন্যকে দিতে পছন্দ করেন। আপনার এ ধরনের একটি আচণের কারনে ঐ মানষুটির মন ভেঙ্গে যায়। সেই অভ্যাসটিও একসময় নষ্ট হয়ে যায়। সুতারাং পছন্দ–অপছন্দ যাই হোক, খুশি মনে হাদিয়া গ্রহন করা উত্তম। আর হাদিয়া শুধু নেয়া নয়, দেয়ারও অভ্যাস গড়ে তুলি।

হাদিয়া কি দিবেন ?

অতি ক্ষুদ্র বা বড় সব কিছুই হাদিয়া দেয়া যায়। হাদিয়া নিরবাচনের ক্ষেত্রে গ্রহীতার প্রয়োজন আর মানষিকতাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। যার যেটা প্রয়োজন সেটা পেলেই গ্রহীতা বেশি খুশি হন। তবে কাপড়-চোপড় আর তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রেই মানুষের আগ্রহ বেশি। আবার নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যও দেয়া যেতে পারে। আবার নতুন কিছু পণ্যের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি। নতুন কিছু হলেতো আরো ভালো।

আমাদের সমাজে একসময বিয়ে, বিদায়, চাকরী কিংবা কর্মজীবন থেকে অবসর কিংবা পারিবারিক অনুষ্টানে কোরআন, হাদিস কিংবা ধর্মীয় বই দেয়া হত। আত্মীয়- স্বজনদের বিয়ের অনুষ্টানে দেখা যেত, হরেক উপহার সামগ্রীর মধ্যে কিছু ধর্মীয় বই কেউ না কেউ দিয়েছেন। এখন আর সে রেওয়াজ নেই। কেউ দেননা। আবার দিলেও পছন্দ করেননা। দাতাকে গেয়ো জাতীয় কিছু একটা মনে করেন অনেকেই। এখন সেখানে স্থান পেয়েছে শো’ পিছ, কাঁচের সামগ্রী আর নানা ক্রোকারিজ আইটেম। যা দেয়া হয় ব্যবহারে অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্ত আগের দিনের সেই রীতিই অনেক ভাল ছিল। একারনেই হাদিয়া নিবাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। তবে বিয়ে, জন্মদিন, আর সামাজিক অনুষ্ঠানে সেই আগের রীতিই সবাই আবার চালু করা দরকার। পবিত্র কোরআন শরীফ, হাদিস শরীফ, ধমীয় বই, জায়নামাজ, আতর, তসবিহ, টুপি, নানা ইসলামী আদলে শো’ পিছ দেয়া যেতে পারে। এধরনের হাদিয়ায় শুধু রাসুলের (সা:) সুন্নাতই আদায় হবে না, ছদকার ছওয়াব পাওয়া যাবে । ধরেন, কাউকে কোরআন, হাদিস কিংবা জায়নামাজ (তবে কাবা শরীফের ছবিওয়ালা দেয়া ঠিকনা) দিলেন, যতদিন ওটা ব্যবহার হবে, এর ছওয়াব কিন্ত ততদিনই আপনি পাবেন। আজকাল ধর্মীয় চোখ ধাঁধানো বিভিন্ন দামের নানা শো পিছ, ওয়াল ম্যাট, ডিজিটাল হরেক পণ্য বাজারে এসেছে। এগুলো হাদিয়া দেয়ার অভ্যাস করা দরকার। এগুলো দিলে স্ট্যাটাসও থাকবে। আর গ্রহীতাও খুশি হবেন।

হাদিয়া কাকে দিবেন

ছোট-বড় সবাইকে হাদিযা দেয়া যায়। বাব-মা, ভাই- বোন, চাচা-চাচী, নানা-নানী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি, দাদা, দাদী, প্রতিবেশি, ওস্তাদ, আলেম ও ওলামা, শিক্ষক, বন্ধু, সহকর্মি সবাইকেই হাদিয়া দেয়া যায়। তবে আত্মীয়কে হাদিয়া দেয়া বেশি উত্তম। এতে আত্মীয়তার হক আদায় হয়। সেই সাথে ইয়াতিম, মিসকিনদের হাদিয়া  দেয়া যাবে। হাদিয়া গোপনে দেয়া আদব। নেককার ও ভালো মানুষকে হাদিয়া দেয়া মুস্তাহাব।

আলেমদের হাদিয়া দেয়া

আলেম ও ওলামা, মুফতি কিংবা দীনের সেবায় নিয়োজিতদের মহবব্বত করে হাদিযা দেয়া জায়েজ আছে। তারা যেহেতু ইসলামের কাজে আছেন, তাদেরকে দেয়াটাই উত্তম। এতে তারা দিনের কাজে বেশি মনোনিবেশ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে ইসলামের নামে অনৈসলামিক কিছু প্রচার, কিংবা মিথ্যা বক্তব্য,ফেৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য প্রচার করে তাদেরকে হাদিয়া দেয়া ঠিক হবেনা। মুসলীম সমাজে সাধারণত আলেম, ওলামা, ইমাম, মুফতি, পীরদের অনেকেই মহব্বত করে হাদিয়া দেন। রমজান মাসে এ রেওয়াজ বেশি। তাদেরও উচিৎ মুসুল্রীদের মাঝে হাদিয়া দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। একটা অথবা তিনটা খেজুর, একটা টুপি কিংবা আরো ছোট কিছু দিয়েও হাদিয়া দেয়ার রীতি চালু করা যায়।

একটা উদাহরণ অনেকেরই মনে দাগ কেটেছে। রমজান মাসে বেশিরভাগ মসজিদে হাফেজ সাহেবরা তারাবীর নামাজে কুরআন খতম করান। খতম শেষে মুসল্লীরা হাফেজ, ইমাম আর মুয়াজ্জিনদের হাদিয়া দেন। নিশিন্দারা কারবালা মসজিদের খবিত মওলানা কাজী ফজলুল করিম রাজুর ছেলে কাজী রিযওয়ানুল করিম এবার হাফেজ হয়েছেন।  বগুড়া শহরের কানছগাড়ি জামে মসজিদে আরো তিনজন হাফেজের সাথে তিনিও তারাবীর নামাজ এবার পড়িয়েছেন। এবার ১৪৪০ হিজরী, ২০১৯ এর ২৭ রাতে তারাবীর নামাজ শেষে কাজী রেযওয়ানুল করিমের কন্ঠে কুরআনুল কারিমের তেলওয়াত শোনানোর জন্য, তার পক্ষে মুসুল্লীদের দোয়া চেয়ে খেজুর, তসবিহ আর টুপি হাদিয়া দেয়া হয়। এ উদ্যোগ সকল মুসল্রীদের খুশি করেছে। আর হাদিযা নিয়েও নতুন ধারনা তৈরি করেছে।

প্রশাসনের কাউকে হাদিয়া দেওয়া

শরিয়তে প্রশাসনের ব্যক্তিদেরকে হাদিয়া দেয়া জায়েজ নেই। তিনি যেহেতু জনগনের টাকায় বেতন ভাতা গ্রহন করেন, মানুষের সেবামুলক কাজের জন্যই নিযুক্ত আছেন সেকারনে তাদেরকে জনগনের পক্ষ থেকে কাজের বিনিময়ে হাদিয়া দেয়া জায়েজ নেই। তবে তাদের কাজে সরকার নির্ধারিত ফি দেয়া যাবে। রাসুল(সা:) এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন।

হাদিয়া ফেরৎ দেওয়া

মুলত পরস্পরের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টির জন্যই হাদিয়া দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফেরৎ দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসূল (সা:) বলেন, তোমরা দাওয়াত কবুল কর এবং হাদিয়া ফেরৎ দিয়ো না …’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৫৭; আহমাদ হা/৩৮৩৮, সনদ ছহীহ)

আরেক স্থানে তিনি বলেন, কারো নিকটে তার মুসলিম ভাইয়ের পক্ষ থেকে যদি কোন হাদিয়া আসে, অথচ তার প্রতি তার কোন কামনা নেই, এক্ষেত্রে তা ফিরিয়ে না দিয়ে সে যেন তা গ্রহণ করে কারণ এটা এমন রিযিক, যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন (আহমাদ; ছহীহাহ হা/১০০৫)   তবে যৌক্তিক কোন কারন থাকলে হাদিয়া ফেরৎ দেয়া যায়। হাদিসে রাসুল্লাহ (সা:)  এর ইহরাম অবস্থায় হাদিয়া ফেরৎ দেয়ার নজির পাওয়া যায়।

রাসূল (ছাঃ) আবওয়া নামক স্থানে ইহরাম থাকার সময় এক ব্যক্তি একটি বন্য গাধা হাদিয়া দিলে তিনি ফেরৎ দেন এতে লোকটি মন খারাপ করলে তিনি বলেন, আমরা হাদিয়া ফেরৎ দেই না কিন্তু ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে ফেরৎ দিলাম (বুখারী হা/১৮২৫; মুসলিম হা/১১৯৩; মিশকাত হা/২৬৯৬)

শেষ কথা: সুতরাং ইসলামে হাদিয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। মহান আল্লাহকে খুশি আর রাসুল(সা:)) সুন্নাত পালনের উদ্দেশ্যে নিয়েই আমরা হাদিয়া দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।  এই রমজান আর ঈদে যাকে যা দিচ্ছি সেখানেও নিয়ত করে নেই। শুধু নেয়া না, হাদিয়া দেওয়ারও অভ্যাস গড়ে তুলি। আমীন। তারিখ:০৩ জুন ২০১৯, কানছগাড়ি মসজিদ, বগুড়া, ইত্তেকাফ থেকে।

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, এস এ টিভি। মোবাইল:০১৭১১৯৩৫২১৫। ই মেইল: [email protected]