আমাদের মা জননী-১২

আয়েশা রা: এর প্রতি চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার আসল উদ্দেশ্য

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০১৯ ১৬:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৩৭ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
হযরত আয়েশা রাঃ এর চরিত্রের ওপর অপবাদ দেয়ার চরম নিন্দনীয় প্রচারণাটা এমন সুকৌশলে চালানো হয়েছিলো যে, সেটার ছোবল গোটা মুসলিম উম্মাসহ স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সা: কে গ্রাস করে ফেলেছিলো। ইসলামের ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। আল্লাহর ভয় ও ইসলামের নৈতিকতার মানকে প্রকম্পিত করেছিলো। স্বয়ং রাসূর সা: এর জীবনে এ পর্যন্ত যত কঠিন অবস্থা এসেছে এবং যতো মারাত্মক পেরেশানির মোকাবেলা এত বছর (বিগত প্রায় ১৮ বছর) ধরে করতে হয়েছে, তার মধ্যে এই অপবাদের ঘটনা সম্ভবত ছিলো সব থেকে কঠিন।  কারণ অসহনীয় দু:খ বেদনায় জর্জরিত হয়ে চরম উদাস মনে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন, কাতরভাবে তিনি আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়েছেন, যেন আল্লাহ তাঁর ইজ্জত রক্ষা করেন। যেকোনো বড় থেকে বড় অপরাধকে ক্ষমা করার মতো প্রশস্ততা আল্লাহ তায়ালা তাঁর হৃদয়ের মধ্যে দান করেছেন এবং তাঁর মাঝে সুন্দরভাবে ধৈর্য্য ধরার তাওফিক দান করেছেন। তিনি সবসময় আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন যে, মুখ দিয়ে যেন এমন কোনো কথা না বের হয় যাতে করে বুঝা যায় তাঁর ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে কিংবা এই পরীক্ষার ভার তিনি সইতে পারছেন না তা প্রকাশ পায়। আর সত্যিকারের বলতে এই যে অপবাদ রটনার কাহিনীর ফলে তাঁকে যে পরিমাণ দু:খ বেদনার মোকাবেলা করতে হচ্ছিলো, সম্ভবত তাঁর জীবনে শারীরিক ও মানসিক কোনো দিক দিয়েই এমন কঠিন অবস্থা আর আসেনি, আর ইসলামের ইতিহাসেও এই মিথ্যার মতো কঠিন বিপদও আর কখনো আসেনি।
হযরত আয়েশা রা: এর প্রতি চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার ঘটনার (ইফ্ক এর ঘটনার) অবতারণা যেভাবে হয়েছে, তাতে ঘটনাটা শুধু ব্যক্তি আয়েশা রা: কে নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ব্যাপারটাতো রাসূল সা: এর ব্যক্তিত্বকে জড়িয়ে মুসলিম দলের মধ্যে তাঁর কর্তব্য পালনের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ করা নিয়ে সংঘটিত হয়েছে। বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা যায় যে, আল্লাহর সাথে তাঁর যে সম্পর্ক বিদ্যমান সেটাকেও ধ্বংস করার হীন চক্রান্ত করা হয়েছে। আর আয়েশা রা: এর চরিত্রের ওপর কলংক লেপনের ঘটনার দ্বারা রাসুল সা: এর আকীদা বিশ্বাসের ওপরও আঘাত করা হয়েছে। রাসূল সা: দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, “আল্লাহ তায়ালাই সব কিছুর মালিক এবং সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক তিনি এবং সকল কিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং তাঁর জ্ঞানের বাইরে বিশ্ব জাহানের কোথাও কিছু সংঘটিত হতে পারে না।” -এই বিশ্বাস ধারনকারী রাসূল সা: প্রকাশ্যে ও গোপনে জীবনের শুদ্ধি রক্ষা করে চলেন, পবিত্রতা অবলম্বন করে চলেন, স্বচ্ছ ও সৎভাবে সবকিছুই করেন। তিনি সদা সর্বদা মনে বিশ্বাস রাখতেন যে, “আল্লাহ তায়ালাই তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁর জান মাল ইজ্জতের জামিন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা নিজেই, ইচ্ছা করলেও তাঁর পরিবারের ক্ষতি কেউ করতে পারে না। শয়তানের যাবতীয় ষড়যন্ত্র তাঁর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে বাধ্য।” -এসবই হলো রাসূল সা: এর মৌলিক আকীদা বিশ্বাস। এখন মোনাফেক গোষ্ঠী রাসূল সা: এর স্ত্রীর ওপর চারিত্রিক অপবাদ রটিয়ে দিয়ে রাসূল সা: এর এসব বিশ্বাসের দৃঢ়তাও পরখ করে নিতে চাইলো। তারা ভেবেছিলো এমন প্রচণ্ড আঘাতে বুঝি রাসূল সা: এর এসব আকীদা, বিশ্বাসের ব্যাপারে ফাটল-ভাংগন-চির ধরবে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত রাসূলের চিন্তা চেতনা আকীদা-বিশ্বাস, মান ইজ্জত, ধৈর্য্য সবর- এসবের যথাযথভাবে উত্তমরূপে মূল্যায়ন করলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনের আয়াত নাযিল করে অপবাদ রটানোর ঘটনা সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করে দিলেন, বিস্তারিতভাবে বিষয়টি মানুষকে জানিয়ে দিলেন। তাই আল্লাহ তায়ালা মোনাফেকদের ষড়যন্ত্র এভাবে এই জন্যে ব্যর্থ করে দিলেন যে, ভবিষ্যতের মানুষ যেন আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার ওপর তৃপ্তি সহকারে আত্মসর্মপন করে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকতে পারে, ইসলাম বিরোধী, আল্লাহ বিরোধী ও রাসূল বিরোধী যেকোনো তৎপরতা মোকাবেলা করতে পারে, একই সাথে মানুষের কাছে যেন আল্লাহর মহা বিষ্ময়কর জ্ঞানের সুপ্রশন্ত দরজা খুলে যায়, যেখানে মানুষ বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ কিছুই জানে না, কিছুই করতে পারে না। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালা আয়েশা রা: এর পবিত্রতা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেছেনঃ
“যারা (নবী পরিবার সম্পর্কে) মিথ্যা অপবাদ নিয়ে এসেছে, তারা (ছিলো) তোমাদেরই একটি (ক্ষুদ্র) দল; এ (বিষয়টি)-কে তোমরা তোমাদের জন্য খারাপ ভেবো না; বরং (তা) তোমাদের জন্যে (একান্ত) কল্যাণকর, এদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তি যে যতোটুকু গুনাহ করেছে যে ততোটুকুই (তার ফল) পাবে, আর তাদের মধ্যে যে সবচাইতে বেশি (এ গর্হিত কাজে) অংশগ্রহণ করেছে, তার জন্যে আযাবও থাকবে অনেক বড়। -সূরা আন নূর: ১১।”

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]