বিশ দিন পর দলীয় কার্যালয়ের তালা খুললো

বগুড়ায় বিএনপি’র বিদ্রোহীরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০১৯ ১২:০৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৭০ বার।

বগুড়ায় বিএনপির আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে চালিয়ে আসা আন্দোলন থেকে অবশেষে সড়ে দাঁড়ালেন দলের বিদ্রোহী নেতারা। প্রায় ২০ দিন আগে লাগানো তালাও বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা খুলে দিয়েছেন। 
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশনা পেয়েই বিদ্রোহীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছেন যুবদলের বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার। তাঁর মাধ্যমেই বিদ্রোহীরা সমঝোতায় রাজি হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন। 
সূত্রগুলো বলছে, হাইকমা-ের নির্দেশনা অনুযায়ী আহবায়ক কমিটি বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসা নেতাদেরকে আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থী জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রচারণায় সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। ভেদা-ভেদ ভুলে যদি তারা সক্রিয় হন তাহলেই কেবল তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হবে।
বগুড়ায় বিএনপির পুনর্গঠন নিয়ে সম্প্রতি দুই গ্রুপের বিরোধ তুঙ্গে উঠে। বগুড়ার নেতৃবৃন্দকে গত ২৫ এপ্রিল  ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে নেওয়ার মাধ্যমে যার চুড়ান্ত বহিপ্রকাশ ঘটে। সেখানে আগামীতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবেন না-এমন সিনিয়র নেতৃবন্দৃকে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত করে একটি অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠনের জন্য জেলা নেতৃবৃন্দকে বলা হয়। তবে ওই সভায় বগুড়ার সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে জেলা বিএনপির দুই নেতার পদবী স্থগিত করা হয়। প্রতিবাদে ওইদিন রাতেই ওই দুই নেতার অনুসারীরা দলের জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয় দেন এবং সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তার ৪ দিনের মাথায় জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং চেয়ারপার্সনের উপেদষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের পক্ষে পাল্টাপাল্টি দু’টি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
তবে কেন্দ্র ওই দুই কমিটির কোনটিকেই অনুমোদন না করে ১৫ মে ৩১ সদস্যের নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। যাতে সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহবায়ক মনোনীত করা হয়। আর সেদিন থেকেই বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। ওই ঘটনায় কেন্দ্র থেকে যুবদলের ৬ নেতাকে বহিষ্কারসহ বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আরও ৮ নেতার পদবী স্থগিত করা হয়। এতে আহবায়ক কমিটি বিরোধীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন আরও জোরদার করে। মাঝে একদিন আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলেও পরে আবারও তাতে তালা ঝুলিয়ে দেন পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। 
পরে আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেটি তারা মানতে রাজি হননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি বরং আহবায়ক কমিটির পক্ষের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং পাল্টা হিসেবে বিরোধী পক্ষের নেতা বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের বাসভবনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে জেলা কমিটির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থী করায় বিরোধীদের ক্ষোভ আরও চড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকীও দুই পক্ষ আলাদাভাবে পালন করে। তাছাড়া ওইদিন আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হলেও বিদ্রোহী পক্ষ তাতে না গিয়ে তালাবদ্ধ দলীয় কার্যালয়ের সড়কে বসে ইফতার সারেন।
বগুড়া জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও সদর আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ গত ২৯ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহীদের ওই দিনের মধ্যে দলে ফেরার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন যারা ফিরবে না তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কিন্তু তার ওই ঘোষণার পরেও বিরোধী পক্ষ আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দাবিতে অনড় থাকে। তবে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করেই বিদ্রোহী গ্রুপ তাদের রণে ভঙ্গ দেন। বিলুপ্ত যুবদল বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যান এবং বিশ দিন আগে লাগানো তালা খুলে দেওয়া হয়। হঠাৎ সমঝোতার কারণ জানতে চাইলে বিদ্রোহী গ্রুপের অন্যতম নেতা বিলুপ্ত জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিমল কুমার দাস বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা সমঝোতায় রাজী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লিডার (তারেক রহমান) আমাদের দলে সক্রিয় হতে বলেছেন। তিনি তো আমাদের নেতা। তার নির্দেশ তো আমরা অমান্য করতে পারি না।’ বিদ্রোহীদের ‘সমঝোতার পথে’ আনার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে যিনি মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন বিলুপ্ত যুবদলের জেলা কমিটির সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার বলেন, ‘আমাদের মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে আমরা সবাই শহীদ জিয়ার অনুসারী ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। আগামীতে উপ-নির্বাচনে আমরা সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।’
এ প্রসঙ্গে যার বিরুদ্ধে আন্দোলন সেই জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমরা তাদের (বিদ্রোহী) অনেক আগে থেকেই ফিরে আসার আহবান জানিয়ে আসছিলাম। ভেতরে ভেতরে কথাও হচ্ছিল। এ ব্যাপরে যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিপার আমাদের কাছে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা দলে ফিরে এসেছে এতে আমি এবং আমার দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী অত্যন্ত খুশি।’