বগুড়া-৫ আসনে বিএনপির প্রস্তুতিঃ লন্ডনের সিগন্যাল পেয়ে জি এম সিরাজ বললেন ‌'আমার শোডাউনের প্রয়োজন নেই'

পুণ্ড্রকথা ডেস্কঃ
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৬১ বার।

সংসদ নির্বাচনে বগুড়ায় বিএনপি’র মনোনয়ন দৌড়ে কারা এগিয়ে- প্রশ্নটি অনেক কঠিন শোনালেও ওই দলের নেতা-কর্মীদের কাছে উত্তরটা যেন খুবই সহজ। তাদের মতে যাঁরা লন্ডনের সিগন্যাল পাবেন কিংবা পেয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে তারাই এগিয়ে থাকবেন। বগুড়ায় বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতা তো বলেই ফেললেন, সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া থেকে যারা লন্ডন সফরে গিয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছেন তারাই মনোনয়ন প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকবেন। ‘লন্ডনে হাইকমান্ডের সিগন্যাল’ বলতে যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতির কথা বলা হচ্ছে সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই লন্ডন সফর করেছেন কিন্তু সবাই তারেক রহমানের সাক্ষাৎ পাননি। তবে সেদিক থেকে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত টানা তিন দফা নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ) নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে দাবি করতেই পারেন। কারণ এতদিন দলের ভেতরে ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিত হয়েও প্রায় দশ বছর পর চলতি বছরে জুলাই মাসের শেষ দিকে তিনি লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সাক্ষাত পেয়েছেন। আবার হাইকমান্ডের নির্দেশেই দেশে ফিরে বগুড়ায় দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে অংশ নিয়ে আগামীতে আন্দোলন ও নির্বাচনের  জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।দলীয় সূত্রগুলো জানায়, শুধু সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। একই কারণে বগুড়ায় বিএনপির কোন কমিটিতেও তাকে আর রাখা হয়নি। এমনকি এক বছর আগে থেকে অন্য আসনগুলোর মত ওই আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য অর্ধডজন প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ লক্ষ্য করা গেলেও তার তেমন উপস্থিতি ছিল না। অনুসারীরা বলছেন, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এতদিন তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

লন্ডন সফর এবং সেখানে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করেছেন জি এম সিরাজ। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়।’ ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গণমাধ্যমে ‘কেবলা পরিবর্তনের’ কথা বলে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা মুখে পড়া সাবেক এই সাংসদ বলেন, ‘এক-এগারোতে কি প্রেক্ষাপট ছিল সেটা তিনি (তারেক রহমান) নিজেও জানেন। সে সময় আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেটা না পাওয়ায় আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। এগুলো তাঁর জানা আছে। তাছাড়া ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পনেরটি বছর আমি দলের জন্য কাজ করেছি, নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করেছি। বর্তমান সরকারের সময়ে বহু নেতা-কর্মী রাজনৈতিক মামলার আসামী। তাদেরকে আমি আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এসব তথ্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। তাই তিনি আমাকে আমার এলাকায় কাজ করতে বলেছেন।’দশ বছর মাঠে না থাকার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক সময়ের অনুগত নেতা-কর্মীরা আবারও তার ডাকে সাড়া দেবে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে  গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা সব সময় দলের জন্য কাজ করে থাকেন। তারা কখনও ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন না। কাজেই কোন নেতা-কর্মীই দল থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাছাড়া সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে।’

নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিজ এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শো-ডাউনের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমরা পুরাতন মানুষ। আমাদের শো-ডাউনের প্রয়োজন নেই। যারা নতুন কেবল তাদেরই হয়তো শো-ডাউনের প্রয়োজন থাকতে পারে। আমার এলাকার প্রতিটি নেতা-কর্মী এমনকি প্রতিটি বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। কাজেই এখানে শো-ডাউনের কোন প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন তখনই মানুষ আমাদের ডাকে সামিল হবে।’