তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালের সাথে মোদীর বৈঠক

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৯ ০৫:৩২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৯ বার।

 

ভারতের সন্দেশখালিতে ভোট-পরবর্তী হিংসায় তিন জনের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কার্যত সম্মুখসমরে নামল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রের বার্তার জবাব দিলেন মুখ্যসচিব। তার পাশাপাশিই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী চিঠি দিয়ে অমিত শাহকে জানালেন, কেন্দ্রের পদক্ষেপ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেই তাঁরা মনে করছেন। খবর : আনন্দবাজার অনলাইন।

 

এ রাজ্যে আইনের শাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে। লোকসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক হিংসার ঘটনা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে রবিবার কড়া ভাষায় ‘অ্যাডভাইসরি’ পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীরও আজ সোমবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা। তার আগে এ দিন রাজ্য সরকারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘পরামর্শ’—রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যে সব আধিকারিকের দায়িত্বে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

 

রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চিঠির জবাবে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেই, এমন মনে করার কোনও কারণ ঘটেনি বলে দিল্লিকে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।

 

আইনশৃঙ্খলা ‘অবনতি’র কারণ দেখিয়ে দিল্লির সরকার ব্যবস্থা নিক, তা যে তাঁরা চান, এ দিনই ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা সমস্ত ঘটনা জানিয়েছিলাম। তিনি তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। রাজ্যে যে আইনশৃঙ্খলা নেই, সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের বিশ্বাস, দিল্লি ব্যবস্থা নেবে।’’

আর এই বিষয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যে রাজ্যে গণ্ডগোল, হিংসা নেই, সেই রাজ্যে এমন নোট পাঠাচ্ছে! বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করছেন তারা। উত্তরপ্রদেশে যাদবদের হত্যা বা শিশু ধর্ষণ ও হত্যার সময় কোথায় ছিলেন আপনারা? বাংলা যখন শান্তির মরূদ্যান, তখন তাকে অশান্ত করার জন্য বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে ব্যবহার করে এমন নোট পাঠাচ্ছেন। এটা বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া কিছুই না।’’

 

সূত্রের খবর, বাংলার ঘটনাপ্রবাহ এবং কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এ দিন দেশের অন্যান্য বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে আদানপ্রদানে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্র কি এই ভাবে বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারির পথে এগোচ্ছে? প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা উল্লেখ করছেন, উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলার হাল শোচনীয়। সেখানে কী ভূমিকা নিচ্ছে মোদীর সরকার?

 

শনিবারই সন্দেশখালিতে ভোট পরবর্তী সংঘর্ষে তিন জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে এক জন তৃণমূল কর্মী, দু’জন বিজেপি কর্মী। এর  পরেই বিজেপি নেতারা সরাসরি বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। কৈলাস বলেন, ‘‘আমাদের আশা, রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট পাঠাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ও রাজ্যের পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।’’ এর পরেই বিকেলে নর্থ ব্লক সূত্রে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যকে হিংসা রোখার ‘পরামর্শ’ পাঠিয়েছে।

 

এমন ‘পরামর্শ’ পেয়ে গোড়াতেই নবান্নের শীর্ষ মহলের বক্তব্য ছিল, এই বার্তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যে তৃণমূলের একের পর এক লোক খুন হয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ নিমতা। এমনকি, গঙ্গারামপুর বা সন্দেশশখালিতেও বিজেপি প্রথম আক্রমণ করেছে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হলে তখন ‘গণতান্ত্রিক বোধোদয়’ হয় না। বিজেপি হিংসার রাজনীতি, খুন-জখম চালালে কেন্দ্রের মাথাব্যথা থাকে না। আসলে এ সবই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের ব্যর্থতা দেখানোর জন্য ‘পরিকল্পিত চক্রান্ত’। এই বক্তব্য জানিয়েই রাতে তৃণমূলের তরফে বক্সী চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে, যিনি একই সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।

রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জবাবি চিঠিতে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেই, এমন মনে করার কোনও কারণ ঘটেনি বলে দিল্লিকে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।

 

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠকও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিতই ছিল। কিন্তু সন্দেশখালির ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়ায় সে-প্রসঙ্গও উঠে আসা অনিবার্য বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। রাজ্যপালের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল করতে একটি ‘নোট’ দেওয়ার কথা। তার দু’টি অংশ। প্রথমাংশে ভোট বিশ্লেষণ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বলা থাকবে। পরের অংশটি ভোট-পরর্বর্তী হিংসা নিয়ে। তাতে আগামী দিনে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘ভোট মিটে যাওয়ার পরেও যে ভাবে লাগাতার অবাধ হিংসা চলছে, তাতে কেন্দ্র গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গিপাড়া, হাতগাছায় নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়েছে। এর আগেও রাজ্যের নানা জায়গা থেকে হিংসার রিপোর্ট এসেছে। সেখানেও মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই কারণেই রাজ্যের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে।’’

কী রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ‘অ্যাডভাইসরি’-তে? রাজ্যকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার একই মাত্রার হিংসা দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্যের প্রশাসন আইনের শাসন বজায় রাখতে ও মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে ব্যর্থ। রাজ্যকে স্পষ্ট ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা, সার্বজনিক শান্তি বজায় রাখতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক। যে সব আধিকারিক নিজেদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’