অর্থমন্ত্রী অসুস্থ, তার বাজেট পড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০১৯ ১২:৪১ ।
আলোচনা
পঠিত হয়েছে ২৫৮ বার।
অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল হাসপাতাল থেকে সংসদে এলেন নিজের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করতে, কিন্তু বক্তৃতা শুরু করেও এগোতে পারলেন না বেশিদূর। ত্রাতা হয়ে এসে তার বাকি বক্তৃতা পড়ে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের সময় এমন নজিরবিহীন ঘটনাই দেখা গেল। খবর বিডিনিউজ২৪।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে কোনো সরকারপ্রধান কখনও বাজেট বক্তৃতা দেননি। অর্থমন্ত্রীর অপারগতায় কোনো প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতা পড়ে দিচ্ছেন, এমন ঘটনাও বাংলাদেশ এর আগে দেখেনি।   

কয়েক দিন জ্বরে ভোগার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলেন ৭২ বছর বয়সী মুস্তফা কামাল। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে রাতে তিনি হাসপাতালেই থেকে যান বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।

বাজেটের দুদিন আগে অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ তৈরি হলে মঙ্গলবার রাতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে বলা হয়, এবারের বাজেট মুস্তফা কামালই দেবেন ‘ইনশাল্লাহ’।

অসুস্থ শরীরেই বুধবার সংসদে গিয়ে বাজেট অধিবেশনে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এরপর আবার তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।  

বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকেই সংসদে যান অর্থমন্ত্রী। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাজেট সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি অংশ নেন। সংসদে তোলার জন্য এই বৈঠকেই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

বিকাল ৩টার পর স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি চাইতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন অসুস্থ কামাল, যার বাজেট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম।

অনুমতি কীভাবে চাইতে হবে তা পরে অর্থমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন স্পিকার। সে অনুযায়ী বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি নেন।

বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চাওয়ার সময় দাঁড়িয়েই কথা বলছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট বক্তৃতা শুরু করার আগে মাঝে মাঝে বসে কথা বলার অনুমতি নিয়ে নেন তিনি।

স্পিকারকে কামাল বলেন, “আনফরচুনেটলি আমি অসুস্থ। অসুস্থতার কারণে সকল সময় দাঁড়িয়ে বলতে পারব না, তাই আমি আপনার কাছ থেকে অনুমতি চাচ্ছি মাঝে মাঝে বসে বাজেট পড়ার অনুমতি চাচ্ছি।” 

এরপর নিজের চেয়ারে বসে নিজের প্রথম বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল। শুরুতেই দেখানো হয় দুটি ডিজিটাল উপস্থাপনা। তারপর বাজেট বক্তৃতার খানিকটা পড়েন তিনি।

 

কিছু সময় পর শরীর খারাপ লাগায় মুস্তফা কামাল ৫-৭ মিনিট বিরতি চাইলে স্পিকার তা মঞ্জুর করেন। ওই বিরতির পর অর্থমন্ত্রী আবারও বাজেট বক্তৃতা পড়তে শুরু করেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তার গলা ধরে আসছিল।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, “অর্থমন্ত্রীর শরীর খারাপ থাকায় আপনি অনুমতি দিলে আমি বাজেট বক্তৃতা পড়ে দিতে পারি।”

স্পিকার তাতে সম্মতি দিলে সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পড়ে শোনাতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।

এক পর্যায়ে একটি লাইন আসে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওই প্যারা পড়তে গিয়ে হেসে ওঠেন শেখ হাসিনা। হাসতে হাসতে বলেন, “এগুলো কিন্তু আমার কথা না… আমি কিন্তু অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট প্রস্তাব পড়ছি।”

স্পিকার তখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “বাজেট বক্তৃতায় যেখানে যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, আপনি তা পড়বেন।”

আ হ ম মুস্তাফা কামালের এবারের বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। তার বাজেট বক্তৃতার যে বইটি ছাপা হয়েছে, তা ছিল ১২৮ পৃষ্ঠার। 

ওই লিখিত বক্তৃতার একটি সংক্ষিপ্তসার অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সংসদে পড়ে শোনান। এভাবেই শেষ হয় মুস্তফা কামালের স্মার্ট বাজেটের উপস্থাপন।