কোন হিন্দু ব্রাহ্মণরা মহরম পালন করেন, জানেন কি?

আনন্দবাজার পত্রিকাঃ
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৫৮ বার।

শুক্রবার পালিত হল মহরম। সকাল থেকে দফায় দফায় শোক মিছিল বেরিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাতে সামিল হয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু জানেন কি,এই ভারতেই এক শ্রেণির হিন্দু ব্রাহ্মণ রয়েছেন, যাঁরা প্রতি বছর মহরম পালন করেন?

শুধুমাত্র ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতেইবছরের পর বছর এই রীতি বজায় রেখে আসছেন তাঁরা। মহরম পালনকারী এই হিন্দু ব্রাহ্মণদের ‘মহিয়াল’ ব্রাহ্মণ বলা হয়। যদিও ‘হুসেইনি ব্রাহ্মণ’ বলে নিজেদের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন তাঁরা।

শুধুমাত্র মহরমের মিছিলেই যোগ দেন না তাঁরা। মহরমের মাসে বিয়ে-সহ সবরকম সামাজিক অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখেন। এই রীতিতে বিশ্বাসীদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ। হুসেইনি ব্রাহ্মণ হিসাবেই নিজেদের পরিচয় দেন তাঁরা। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রয়াত অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ সুনীল দত্ত, উর্দু সাহিত্যিক কাশ্মীরি লাল জাকির, সাবির দত্ত এবং নন্দকিশোর বিক্রম।

দেশভাগের আগে মূলত সিন্ধু ও লাহৌর প্রদেশেই হুসেইনি ব্রাহ্মণদের বাস ছিল। পরবর্তীকালে পুণে, দিল্লি, ইলাহাবাদ এবং রাজস্থানের পুষ্করে ছড়িয়ে পড়েন তাঁরা। তবে তাঁদের উত্থান জানতে হলে প্রায় ১৩০০ বছর পিছিয়ে যেতে হয়। কোনও কোনও গবেষকের মতে, এখন পাকিস্তানের লাহৌর যেখানে, ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকেআরব দেশে পাড়ি দেন রাহিব দত্ত নামের এক ব্যক্তি। সেখানে ইমাম হুসেইনের সংস্পর্শে আসেন তিনি। হুসেইনের ব্যক্তিত্বে প্রভাবিত হয়ে তাঁর অনুগামী হয়ে যান রাহিব। কারবালার যুদ্ধ শুরু হলে ইমাম হুসেইনের হয়ে এজিদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হন। নিজের সাত পুত্রকেও তাতে সামিল করেন।

যুদ্ধ শেষে জীবিত ফিরে আসেন রাহিব দত্ত। কিন্তু মৃত্যু হয় তাঁর সাত পুত্রের। ভারতে ফিরেনিজের এলাকার মানুষদেরইমাম হুসেইন ও কারবালার বৃত্তান্ত শোনান তিনি। তাতে আকৃষ্ট হয়ে রাহিবের অনুগামী হয়ে পড়েন অনেকে। ইমাম হুসেইনের সঙ্গে রাহিব দত্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে হুসেইনি ব্রাহ্মণ বলে নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করেন তাঁরা। তবে তাঁদের কেউই পুরোপুরি ইসলাম গ্রহণ করেননি।

তবে এ নিয়েও নানা মত রয়েছে। রাহিব দত্তের অস্তিত্বের কথা মেনে নিয়েছেন ইতিহাসবিদরা। তবে কারবালার যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়নি। গবেষকদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, সেই সময় লাহৌরের রাজা ছিলেন কোনও এক চন্দ্রগুপ্ত। রাহিব দত্ত তাঁর রাজসভায় কর্মরত ছিলেন। আবার অনেকের দাবি, চন্দ্রগুপ্তের আমলে দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণের হদিশ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে একজন রাহিব দত্ত হতে পারেন। জামা কাপড়ের ব্যবসা করতে সেই সময় তাঁর মতো অনেকেরই বর্তমান ইরাক বা তার আশপাশে যাতায়াত ছিল। কারবালা যুদ্ধ শুরু হলে ইমাম হুসেইনের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন তাঁরা।

তবে শুধু হুসেইনি ব্রাহ্মণরা নন, যুগ যুগ ধরে হিন্দুদের আরও কিছু কিছু অংশেরমধ্যে মহরম পালনের রীতির উল্লেখ রয়েছে। লখনউয়ের বিভিন্ন ইমামবাড়ার নকশা এবং হুসেইন ইমামের আত্মবলিদান নিয়ে রচিত একাধিক কবিতায়ও তার উল্লেখ রয়েছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, হিন্দু কবি চুন্নুলাল দিলজিরের লেখা কবিতা। হুসেইন ইমামকে নিয়ে প্রায় ৭০ হাজার পংক্তি লিখেছেন তিনি। তাতে হিন্দুদের মধ্যে মহরম পালনের উল্লেখ রয়েছে।