তিন মাস ধরে শিশুকে ধর্ষণ, ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা করলেন যুবলীগ নেতা!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৯ ১৩:২৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০৮ বার।

কুড়িগ্রামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তিন মাস ধরে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে সোহেল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিশুটির পরিবারকে সোহেলের পরিবার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন দুলালের মাধ্যমে ২০ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করে নেয়। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌর এলাকায় বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) রাজু আহমেদ।খবর বাংলা ট্রিবিউন

স্থানীয়দের অভিযোগ, কুড়িগ্রাম শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সরানিপাড়া কলোনির আবু তালেবের ছেলে সোহেল (২৪) তিন মাস ধরে প্রতিবেশী পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে আসছিল। শিশুটির বাবা-মা ও দাদির অনুপস্থিতিতে সে এ কাজ করতো।  শিশুটি সোহেলের স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে সে কাউকে জানাতে নিষেধ করে। গত বৃহস্পতিবারও (১৩ জুন) সকাল ১১টার দিকে সোহেল শিশুটিকে ধর্ষণ করার সময় প্রতিবেশীরা দেখে ফেলে। এরপর শিশুর পরিবার থানায় যেতে চাইলে সোহেল তাদের বাধা দেয়।

অভিযোগ পাওয়া গেছে,  বিষয়টি মীমাংসার জন্য সোহেলের পরিবার কুড়িগ্রাম জেলা শাখা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দুলালের কাছে যায়। এরপর শিশুটির পরিবারকে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকায় মীমাংসার প্রস্তাব দেন রুহুল আমিন দুলাল। শিশুটির পরিবার এতে রাজি না হলে দুলাল ২০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় শিশুটিকে ৫/৬ মাসের জন্য নানার বাড়িতে রাখতেও বলেন তিনি।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, শিশুটিকে তার নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির বাবা মানসিক রোগী। শিশুটির মা ও দাদি ওই যুবলীগ নেতা এবং অভিযুক্ত সোহেলের হুমকিতে এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এ বিষয়ে শিশুটির দাদি বলেন, ‘হাজি দুলাল ডাকি নিয়া যায়া কইছে, ২০ হাজার টাকা দেওয়া হইবে। এ নিয়া আর কোনও বাড়াবাড়ি করবেন না। তোমার ছাওয়াক (সন্তান) বাড়িত না থুইয়া ৫/৬ মাসের জন্যে তার নানার বাড়িত পাঠে দেও।’

তার প্রশ্ন, ‘এটা কেমন বিচার? ট্যাকা দিয়া হামরা কী করমো? ওমরা (ওই লোক) হামার ছাওয়ার ওপর নির্যাতন করি যদি বাড়িত থাইকপার পায়, তাইলে হামার ছাওয়া বাড়িত থাইকপার পাবার নয় ক্যা?’

পুলিশের কাছে কেন গেলেন না—এ প্রশ্নে শিশুটির মা ও দাদি বলেন, ‘হামরা ওমার সাথে (সোহেলের পরিবার ও যুবলীগ নেতা) পাবার নই (পারবো না)। গরিব মানুষ কোনও বিচার পাই না। পুলিশের কাছত গেইলে হামার বাড়িত থাকায় হবার নয়। আল্লায় ইয়ার (এর) বিচার করবে।’

সালিশ করে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা এখন পর্যন্ত শিশুর পরিবারকে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশুটির এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ওই শিশুর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা ভয়ে কারও কাছে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে জানতে সোহেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, সোহেলের বড় ভাই সেলিম যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় হাজি সাহেবের বাসায় ফয়সালা হয়েছে। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব নিয়ে লিখলে মেয়েটারই সমস্যা হবে। এসব নিয়ে লেখালেখি করিয়েন না।’

ধর্ষণের মতো অভিযোগ সালিশের মাধ্যমে দফারফা করা নিয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা দুলাল বলেন, ‘কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আপনি ভালো করে খোঁজ নিন। আর আমি মোবাইল ফোনে এসব নিয়ে কোনও কথা বলতে পারবো না। আপনি খোঁজ নিয়ে তারপর দেখা করুন।’

ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি তাহলে কিসের বিচার করলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল বলেন, ‘আমার কাছে ওই মেয়ে বলেছে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’

সালিশে ধর্ষণের বিচার করার বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ এভাবে মীমাংসা মারাত্মক অপরাধ। আদালতের বাইরে যিনি এটা মীমাংসা করবেন তিনিও আলামত নষ্টের অভিযোগে অপরাধী হবেন। এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) রাজু আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’