বগুড়ায় প্রচুর চাঁদাবাজ রয়েছে এবং ছিনতাইকারীদেরও প্রতিপালন করা হয়, কাউকে ছাড়বো না: পুলিশ সুপার

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৪৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৩৪ বার।

বগুড়ায় প্রচুর চাঁদাবাজ রয়েছে এবং এ জেলায় ছিনতাইকারীদের প্রতিপালন করা হয় মন্তব্য করে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেছেন, ‘বিল্ডিং করতে গেলে চাঁদা দাবি করা হয়। তাদের কাছ থেকে বালু ও রড নিতে বাধ্য করা হয়। এগুলো কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, বগুড়ায় চাঁদাবাজী চলবে না। ছিনতাইকারীদের যারা প্রতিপালন করছে আমরা তাদের তালিকা করছি। তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’ রোববার সকালে বগুড়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গুরুত্বপূর্ণ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী।
সভায় উপস্থিত বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনও স্বীকার করেন বগুড়ায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘বগুড়ায় বড় চাঁদাবাজী হচ্ছে। বাসগুলোতে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘অপরাধীরা যত বড়ই হোক, তারা যদি সাংবাদিক হয়, তারা যদি আওয়ামী লীগের জয়েন সেক্রেটারি কিংবা আমার ছেলেও হয়; তাহলেও তাদের ছাড়বেন না। ব্যবস্থা নিন। আমি কখনোই তাদের পক্ষে কোন স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিইনি, ভবিষ্যতেও দেব না।’


সভায় অংশ নেওয়া জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সম্প্রতি জেলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মোঃ সাহজাহান কবিরের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ এসব কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কালো ব্যাজ পরে ওই সভায় যোগ দেন। কর্মকর্তাদের অনেকে বলেন তারা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এভাবে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকলে তারা কাজ করতে পারবেন না। বগুড়া জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন,‘আমরা প্রোটেকশন চাই। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না তার নিশ্চয়তা চাই।’
বগুড়ার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাহজাহান কবির গত ২৯ মার্চ দুপুরে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে স্থানীয় একটি বাসস্ট্যা-ে যাওয়ার পথে একদল সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি রিকশা থেকে নেমে বন বিভাগের অফিসে গেলে সন্ত্রাসীরা সেখানেই তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত ওই কর্মকর্তাকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

ওই ঘটনায় বগুড়া জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রায় দেড় বছর আগে বগুড়া আঞ্চলিক অফিসে সহকারি পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েই মোঃ সাহজাহান কবির পাসপোর্ট অফিসকে ‘দালালমুক্ত’ বলে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন ভোগান্তি ছাড়াই দ্রুত পাসপোর্ট পেতে পারেন সেজন্য নানা ধরনের উদ্যোগও নেন তিনি। সহকর্মীদের ধারণা এ ধরনের পদক্ষেপের কারণেই পাসপোর্ট কর্মকর্তা স্থানীয় দালাল চক্র ও সন্ত্রাসীরা টার্গেটে পরিণত হন। ওই হামলার ঘটনায় জড়িত এজাহারভুক্ত আসামী যুবলীগ বগুড়া শহর কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাকিম রহমানসহ ৫জনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।পাসপোর্ট কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, ‘যারা দূর থেকে চাকরি করতে এসেছি; তাদের কাছে পাসপোর্টের সহকারি পরিচালকের হামলার ঘটনা নাড়া দিয়েছে। যাদের জন্য তিনি সার্ভিস দিতে এসেছেন তারাই তাকে আক্রমণ করলো-এটা দুঃখজনক। তবে আমি সকলকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড়া হবে না। যদি আগামীতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চায় তাহলে তাকে চরম খেসারত দিতে হবে। আমরা কাউকেই ছাড়বো না। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ এ ধরনের আশঙ্কা করেন তাহলে পুলিশকে জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার দলের পরিচয়ে যদি কেউ আপনাদের অফিসে গিয়ে আপনাদের হুমকি-ধামকি দেয় তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে জানাবো।’ সভার সমাপনী বক্তৃতায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালকের ওপর হামলার ঘটনা আমাদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। বগুড়াকে কলঙ্কিত করেছে।’ এখনও দুই-চারজন হুমকি-ধামকি দেয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করে যান। যদি কোন ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে জানাবেন।’