যুদ্ধাপরাধী আজহারের আপিল শুনানি শুরু

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯ ০৭:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭০ বার।

মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এ শুনানি শুরু হয়।   

এই আপিল বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি দশম মামলা, যার শুনানি শুরু হল।

আসামির অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন শুনানি শুরুর আগে আরও সময় চেয়ে আবেদন করলে আপিল বেঞ্চ তা নাকচ করে দেয়। 

প্রধান বিচারপতি বলেন, “এতদিন সময় দিলাম, আপনারা প্রস্তুতি নেননি কেন। আজই শুনানি শুরু করেন। পরে দেখা যাবে “

এরপর আজহারের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন পেপারবুক থেকে উপস্থাপন শুরু করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা শুনানিতে উপস্থিত রয়েছেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে ২০১৪ সালে।  আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের এক মাসের মধ্যে খালাস চেয়ে আপিল করেন দণ্ডিত এই যুদ্ধাপরাধী।

এরপর ২০১৭ সালের ১৩ অগাস্ট এক আদেশে আপিল বিভাগ আসামিপক্ষকে আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেয়। ওই বছর ১০ অক্টেবর আপিলের ওপর শুনানি শুরুর কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়।

প্রায় দেড় বছর পর গত ১০ এপ্রিল মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতের কার্যতালিকায় আসে। সেদিনই আপিল বেঞ্চ শুনানি শুরুর জন্য ১৮ জুন দিন ঠিক করে দেয়। 

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

প্রসিকিউশনের আনা নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১৪০০ লোককে হত্যা এবং ১৪ জনকে খুনের অপরাধে।

এছাড়া ওই অঞ্চলের বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ার অভিযোগে একাত্তরের এই বদর কমান্ডারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল

 ১৯৬৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে পরের বছর আজহারুল ইসলাম ভর্তি হন রংপুর কারামাইকেল কলেজে। একত্তরে বাঙালি যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আজহার তখন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি হিসাবে আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের তত্ত্বাবধানে এই সশস্ত্র দলটি গড়ে তোলা হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী সে সময় রংপুর টাউন হলকে  নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত করে এবং বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে সেখানে নির্যাতন করা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পর দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন আজহার। ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পান এবং ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন।

২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল এটিএম আজহারের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা এস এম ইদ্রিস আলী। ওইবছর ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

যুদ্ধাপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর আজহারের বিচার শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।