সাকিবে সবুজ বাংলাদেশ : ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমির স্বপ্ন উজ্জ্বল

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯ ০৭:৫৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯০ বার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১ রান তুলে ফেলার পর মনে হচ্ছিল রানটা একটু বেশিই হয়ে গেল। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেটাই হল মধুর আফসোসের কারণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ক’টা রান বেশি করলে যে ‘সুপারম্যান’ সাকিব আল হাসানের সঙ্গে লিটন দাসেরও সেঞ্চুরি হয়ে যেত! তা না হোক, সাকিব ও লিটনের দুর্বিনীত ব্যাটে বিশ্বকাপ মঞ্চে আরেকটি রেকর্ডরাঙা হিরণ্ময় জয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকল বাংলাদেশ।

ব্যাটে-বলে সাকিবের জ্বলে ওঠার দিনে রানের পাহাড় গড়েও বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পেল না উইন্ডিজ। সাকিবের (১২৪*) অনবদ্য শতক ও লিটনের (৯৪*) সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই ইনিংসে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার কীর্তি অনায়াসে গড়ল বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডটাও লিখল নতুন করে। সোমবার টন্টনে বাঁচা-মরার ম্যাচে উইন্ডিজকে সাত উইকেটে হারিয়ে সেমির স্বপ্ন সবুজ করার পাশাপাশি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল টাইগাররা।

৩২২ রানের বিশাল লক্ষ্য মামুলি বানিয়ে ৫১ বল ও সাত উইকেট হাতে রেখেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে দুই উইকেট নেয়া সাকিব ব্যাটিংয়ে আরও উজ্জ্বল। মাত্র ৮৩ বলে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম শতক তুলে নেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত ১৬ চারে ৯৯ বলে ১২৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

দুই ফিফটির পর টানা দুই সেঞ্চুরিতে চার ম্যাচে ৩৮৪ রান নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন সাকিব। বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। সঙ্গে পাঁচটি উইকেট।

বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারলে সাকিবের হাতে উঠতে পারে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সেই সম্ভাবনা এখন যথেষ্ট উজ্জ্বল। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় জয়ে পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সেমিতে যেতে এখন বাকি চার ম্যাচের অন্তত তিনটিতে জিততে হবে। ২০ জুন ট্রেন্ট ব্রিজে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

উইন্ডিজের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশকে এখন সমীহ করবে সব দলই। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ে রেকর্ডরাঙা জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ।

এরপর দুই হার ও বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া এক ম্যাচের হতাশা পেছনে ফেলে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার আরেক কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ। সিংহ সাকিবের সামনে নতজানু হলেন উন্ডিজের সব বোলার।

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে লিটনও রাঙালেন তার বিশ্বকাপ অভিষেক। আট চার ও চার ছক্কায় ৬৯ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসে নিজেকে চেনালেন নতুন করে। চতুর্থ উইকেটে সাকিব ও লিটনের ১৮৯* রানের রেকর্ড গড়া জুটি গুঁড়িয়ে দিল ক্যারিবীয় বোলিং।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অনায়াস জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ২৩ বলে ২৯ রান করা সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি। সাকিব ক্রিজে আসার পর রান তোলার গতি আরও বেড়ে যায়।

প্রথম ১০ ওভারে এক উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশকে আর থামাতে পারেনি উইন্ডিজ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউটে কাটা পড়ে ফিফটি বঞ্চিত হন ৫৩ বলে ৪৮ রান করা তামিম।

এরপর মুশফিকুর রহিম দ্রুত ফিরলেও ম্যাচসেরা সাকিব ও লিটনের তাণ্ডবে ফেভারিটের মতোই হেসেখেলে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ আট ম্যাচে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়।

ম্যাচের আগে যে দু’জনকে নিয়ে বেশি ভয় ছিল, সেই ক্রিস গেইল ও আন্দ্রে রাসেল রানের খাতাই খুলতে পারেননি কাল। গেইলকে শূন্য রানে ফিরিয়ে শুরুতে আঘাত হানা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইনিংসের শেষ বলে ফেরান ড্যারেন ব্রাভোকে।

সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমানের তিন উইকেটের পাশাপাশি সাকিব নেন দুই উইকেট। তবু তিনশ’র নিচে আটকানো যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিন ফিফটিতে আট উইকেটে ৩২১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে উইন্ডিজ।

শুরু ও শেষে দারুণ বোলিং করলেও মাঝের ওভারগুলোয় বাংলাদেশের বোলাররা লাগামটা ধরে রাখতে না পারায় তিনশ’ ছাড়িয়ে যায় ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ। বাংলাদেশকে সামনে পেলে জ্বলে ওঠার অভ্যাস ধরে রেখে যথারীতি ১২১ বলে সর্বোচ্চ ৯৬ রান করেন শাই হোপ।

বিশ্বকাপে প্রথম ফিফটির দেখা পাওয়া এভিন লুইস ৬৭ বলে করেন ৭০ রান। তবে সত্যিকারের তাণ্ডব চালান শিমরন হেটমায়ার। চারটি চার ও তিন ছক্কায় মাত্র ২৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। যা যুগ্মভাবে এবারের আসরে দ্রুততম ফিফটি।

২৬ বলে ঠিক ৫০ রানে হেটমায়ার থামার পর মাত্র ১৫ বলে ৩৩ রানের আরেকটি টর্নেডো খেলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। এছাড়া নিকোলাস পুরান ৩০ বলে ২৫ ও ড্যারেন ব্রাভো করেন ১৫ বলে ১৯ রান। তাতেই বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কন্ডিশন মেঘলা থাকায় টন্টনের ছোট মাঠে টস জিতে উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। শুরুটা ছিল দারুণ। প্রথম পাঁচ ওভারে মাত্র আট রান তুলতে পারে উইন্ডিজ।

এর মধ্যে তারা হারায় গেইলকে। ১৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে না পারা গেইলকে চতুর্থ ওভারে ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিন। প্রথম ১০ ওভারে আসে ৩২ রান। কিন্তু চাপটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি মাশরাফিরা।

লুইসকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ রানের জুটি গড়েন শাই হোপ। এবারের আসরে যা উইন্ডিজের প্রথম শতরানের জুটি। ২৫তম ওভারে লুইসকে ফেরান সাকিব। পুরানকেও বেশি দূর যেতে দেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

কিন্তু সাকিবের জোড়া আঘাত সামলে হেটমায়ারের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে মাঝে ১০ ওভারেই ৯২ রান তুলে ফেলে উইন্ডিজ। চতুর্থ উইকেটে হোপের সঙ্গে ৪৩ বলে ৮৩ রানের জুটিতে ইনিংসের সুরটাই বদলে দেন হেটমায়ার।

৪০তম ওভারে হেটমায়ার-ঝড় থামানোর পর রাসেলকেও শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজ। পরে শাই হোপকেও সেঞ্চুরিবঞ্চিত করেন কাটার মাস্টার। শেষ পাঁচ ওভারে ঘুরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে রাখে বাংলাদেশ।

মাঝে হোল্ডারের ছোট্ট ঝড়টা না উঠলে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার চ্যালেঞ্জটা নিতে হতো না মাশরাফিদের। কাল উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আট ওভারে মাত্র ৩৭ রান দেন মাশরাফি। অন্যদিকে তিন উইকেট নিতে ১০ ওভারে সাইফউদ্দিন গুনেছেন ৭২ রান।

আর নয় ওভারে মোস্তাফিজ দিয়েছেন ৫৯ রান। এছাড়া সাকিব আট ওভারে ৫৪ রানে নেন দুই উইকেট। চার ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে সাইফউদ্দিন এখন আসরের পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১/৮, ৫০ ওভারে

বাংলাদেশ ৩২২/৩, ৪১.৩ ওভারে

ফল : বাংলাদেশ সাত উইকেটে জয়ী