‘যুদ্ধটা আমার নিজের সঙ্গেই’

পুণ্ড্রকথা
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯ ০৯:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮১ বার।

বুকের মধ্যে তার যে একটা শান্ত নদীর হুড়মুড় আছে। চুন থেকে তার পান খসলেই ফেসবুকের দেয়ালে ঘৃণাভরা প্রতিক্রিয়া। রান না পেলে সমালোচকদের তীর। শেষবার সেই ২০১০ সালে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চার ম্যাচে হয় সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি, উইকেট। 

এবার বিশ্বকাপেও সাকিবের সেই হারমোনিয়াম যেন ছন্দে ফিরেছে। এক ম্যাচ কম খেলেও আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার ৩৮৪। তার পেছনে অস্ট্রেলিয়ার অ্যারোন ফিঞ্চ আছেন ৩৪৩ রান নিয়ে। 

দু'বছর আগে যার সেঞ্চুরি এসেছিল সেই কি না পরপর দুই ম্যাচে পেলেন তিন অঙ্কের দেখা। মাঝে তাহলে কী হয়েছিল সাকিবের। কী করেছেন এখন যে দশ বছর আগের সেই সাকিব ফিরে এসেছেন বিশ্বকাপে? ম্যাচ শেষে কৌতূহলভরা প্রশ্ন ছিল সাকিবের সামনে।

উত্তরে সাকিব। ‘আসলে আমি তো গত দেড়-দুই বছর হয় পাঁচে, না হয় ছয় নম্বরে ব্যাটিং করেছি। খুব বেশি সুযোগ পেতাম না। যাও পেতাম হয়ত কাজে লাগাতে পারতাম না। এখন তিন নম্বরে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। হয়ত আমার ভালো সময় যাচ্ছে, এটা ধরে রাখতে হবে।’ মাঝের কঠিন সময়গুলোতে সমালোচকদের সঙ্গে নয় যুদ্ধটা ছিল তার নিজের সঙ্গেই। ‘নিজের মধ্যেই নিজে যুদ্ধ করেছি। কখনও জিতছি, কখনও হেরেছি। আমার এই লড়াইটা একান্তই আমার নিজের সঙ্গে।’ এদিনও তামিম যখন সঙ্গি ছিলেন তখন দু'জনে একটি কথাই নাকি বলেছিলেন। ‘আমরা দুইজনেই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারব। নিজেদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে দিইনি আমরা। এমনকি ড্রেসিংরুমেও সেটা ছিল না। এটা কোচিং স্টাফদের কৃতিত্ব। ড্রেসিংরুমে এখন কেউ আউট হয়ে গেলেই আতঙ্ক ছড়াই না। সবাই রেডিও শুনে, টেলিভিশন দেখে। বড় দলগুলো যেমন প্রোপার ক্রিকেটীয় শট খেলে আমরাও সেটা শিখে নিয়েছি। দলের বদলটা ঠিক এখানেই।’

লিটন দাসের দারুণ প্রশংসা করেছেন সাকিব। ‘বিশ্বকাপে ওর প্রথম ম্যাচ। প্রথম দশ-পনেরোটি বল ও খেলার পরই আমি বুঝে যাই ও মানিয়ে নিয়েছে। উল্টো দিক দিয়ে কোনো চাপ সে আমার ওপর দেয়নি। নন স্ট্রাইকে থেকে সত্যিই আমি ওর খেলা উপভোগ করেছি।’ 

লিটনের প্রতি সাকিবের বার্তা ছিল একটাই- রানের গতি চালু রাখতে হবে। এবং খারাপ বলগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। লিটন সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেছেন। সাকিবের সঙ্গে অপরাজিত থেকেই ম্যাচটি শেষ করেছেন লিটন। 

সাকিব মনে করেন বিশ্বকাপের আগে আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় যে টুর্নামেন্টটি খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটি এখানে এসে খুব কাজে দিচ্ছে। বিশেষ করে রান তাড়া করার ব্যাপারে। ‘আয়ারল্যান্ডে আমরা বেশিরভাগ ম্যাচই রান তাড়া করে জিতেছি। তাই এখানেও বিশ্বাসটি ছিল আমাদের। তিনশর ওপর রান তাড়া করার জন্য আমরা সবাই প্রস্তুতও ছিলাম।’ 

সাকিবের কিছুক্ষণ আগে একই চেয়ারে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার আক্ষেপ করে যান- এই উইকেটে ৩৭০ থেকে ৩৮০ রান উঠতে পারত। আর ম্যাচটি ৫১ বল হাতে রেখে সাকিবরাও বুঝিয়ে দেন চারশর পাহাড়ও এদিন ডিঙ্গানোর জন্য প্রস্তুত ছিল তারা।