দ্রুত ধনী হবার নেশা

বগুড়ার ধুনটের দুই বন্ধুর খুনী হয়ে ওঠার গল্প! ক্রাইম পেট্রোল অনুসরণ

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৯ ১৩:০৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩১০ বার।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার বকুল ও রাসেল পাশাপাশি দু’গ্রামের বাসিন্দা হলেও তারা দু’জন বন্ধু। গ্রামে, খেলার মাঠে এবং কর্ম জীবনেও পাশাপাশি ছিল এই দুই বন্ধু। এবার দুই বন্ধু একসাথে কয়েক দিনের ব্যবধানে দুই রিক্সা চালককে হত্যা করেছে। অবশ্য তাদের হত্যাকান্ডের এই মিশনে তুষার নামের আরো এক বন্ধু সঙ্গে ছিল।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের সাতটিকরী গ্রামের বাসিন্দা বকুল মিয়া। বাবা বেলাল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। দারিদ্রতার কারনে বকুল মিয়া লেখাপড়া এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে এলাকায় বকুল মিয়াকে শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবে পরিচিত। পারিবারের অর্থনৈতিক ভাগ্য ফেরাতে বেলাল হোসেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রায় ৪বছর আগে ঢাকার সাভারে চলে যায়। স্ত্রীকে নিয়ে সঙ্গে নিয়ে দিনমজুর বেলাল যোগ দেন একটি পোশাক কারখানায়। আর দু’বছর যাবত বকুল মিয়া ভাড়ায় অটোরিক্সা চালাতে শুরু করে।

অটোরিক্সা চালাতে গিয়ে বকুল মিয়ার পরিচয় হয় তুষার নামের আরেক অটোরিক্সা চালকের সাথে। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। তুষারের বাবা-মা দুজনে সাভারের শ্যামপুর বাজার এলাকার পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।  

গোপালনগর ইউনিয়নের চরখুকশিয়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে রাসেল মিয়া। এলাকায় গাঁজা ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায়ির পুত্র রাসেল ছাত্র জীবন থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স্কুল জীবন থেকে তার বিরুদ্ধে এলাকায় চুরির ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়। সে গোপালনগর ইউএকে উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়মিত ছাত্র ছিল। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে একটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষার শেষেই ধুনট ছাড়ে রাসেল। চলে যায় ঢাকায় বন্ধু বকুলের কাছে।

বকুলের মাধ্যমে তুষারের সাথে পরিচয় হয় রাসেলের। ২০-২২ বছর বয়সি তিনবন্ধু এক সঙ্গে ঢাকায় অটোরিক্সা চালানো শুরু করে। অটোরিক্সা চালানোর পাশাপাশি নিয়মিত আড্ডা দেয় তারা। হঠাৎ তিনবন্ধু দ্রুত বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দ্রুত টাকাওয়ালা হতে বকুল, তুষার ও রাসেল ভারতীয় চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রল অনুষ্ঠাকে অনুসরন করে।

সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম জানান, অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন বন্ধু দুই চালককে খুন করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ কেরানীগঞ্জের হজরতপুরে অটোরিকশাচালক জাকির হোসেনের (৩৬) লাশ উদ্ধার করা হয়। এই খুনের পাঁচ দিন পর ২ এপ্রিল সাভারের ভাকুর্তায় অপর অটোরিকশাচালক মতিউর রহমানের (২৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর মতিউর খুনের নয় দিন পর ঝাউচরে মাইনুল (২৬) নামের আরেক অটোরিকশাচালককে কুপিয়ে জখম করে তার অটোরিকশা নিয়ে যায় এই তিন বন্ধু। এসব ঘটনায় সাভার থানায় দুটি এবং কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এই তিনটি ঘটনায় বকুল, রাসেল আর তুষার জড়িত।

এদিকে হত্যান্ডের ঘটনার পর রাসেল ও বকুল গা’ঢাকা দেয়। পুলিশ বকুলের বাবা বেলাল হোসেনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পলাতক বকুলকে আটক করে। অন্যদিকে গত শনিবার ধুনটের চরখুকশিয়া গ্রামে নিজবাড়ি থেকে রাসেলকে আটক করে র‌্যাব-পুলিশ।

গত রোববার রাসেল তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে জবানবন্দি দেন তুষার ও বকুল। তিনজনই এখন কারাগারে।

গোপালনগর ইএকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, রাসেল মিয়া আমাদের স্কুলের অনিয়মিত ছাত্র ছিল। ইতিপূর্বে সে পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এ বছর পুনরায় সে পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে তার পরীক্ষার ফলাফল এ মুহুর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বকুল ও রাসেল এর বয়স কম। যার কারনে তারা খুব পরিচিত নয়। বকুলের বাবা বেলাল দিনমজুর ছিল। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যায়।লোকমুখে রাসেলের বাবা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। রাসেল স্কুলের অনিয়মিত ছাত্র এবং দুষ্টপ্রকৃতির ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই বন্ধুর খুনি হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।