আমাদের মা জননী-১৫

চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর প্রথম পদক্ষেপে বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৯ ১৬:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৩২ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
হযরত আয়েশা রা: এর ওপর চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার প্রতিবাদে আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনের (সূরা আন নূর- এর ১১-২০ নং পর্যন্ত দশটি) আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে মানুষকে যেসব শিক্ষা দীক্ষা দিয়েছেন আমরা সেসব নিয়ে আলোচনা করছি। এবারের প্রসঙ্গ- চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর প্রথম পদক্ষেপে বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে।
যখন কোনো সতী সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ আরোপ করে প্রচার চালানো হয়, তখন একজন মুসলমানকে সেটার কারণ বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাইলে সে ঘটনার সঠিক কারণটা বুঝতে পারবে। মানুষের বিবেক তার মন-মগজকে সঠিক যুক্তি পেশ করতে সাহায্য করে। বিবেককে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করলে ঘটনার সত্যতা বুঝতে কোনোই অসুবিধা হবার কথা নয়। তখন অন্তর সঠিক কথা বলে দেয়। যেকোনো বিষয় বোঝার জন্যে আল-কোরআন প্রথম পদক্ষেপেই বিবেককে আহ্বান জানায়। সত্য-মিথ্যার মূল্যায়ন করতে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে বলে। হযরত আয়েশা রা: এর ওপর চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার ঘটনায় আল্লাহ তায়ালা মানুষের এই বিবেককে শুরুতেই প্রয়োগ করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। অপবাদ ঘটনার প্রতিবাদে আল্লাহ রাগান্বিত হয়ে বলছেন ঃ
“যদি সেই (মিথ্যা ঘটনা)-টি শোনার পর মোমেন পুরুষ ও মোমেন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে একটা ভালো ধারণা পোষণ করতো! (কত ভালো হতো) যদি তারা একথা বলতো, এটা হচ্ছে এক নির্জলা অপবাদ মাত্র! -সূরা আন নূরঃ ১২।”
যখন মোমেন মুসলমানরা হযরত আয়েশা রা: এর ওপর অপবাদ দেয়ার প্রোপাগান্ডা শুনতে পেলো তখন তাদের প্রথম কর্তব্য ছিলো যে, যখনই তাদের কানে এ কথাটা পৌঁছালো তখনই স্পষ্ট করে তাদের বলা উচিত ছিলো, “অসম্ভব কথা! এটা হতেই পারে না,” অবশ্যই এটা নির্জলা মিথ্যা।” তাদের বিবেক খাটিয়ে দেখা উচিত ছিলো কে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে? অভিযোগকারী তো হলো একজন মোনাফেক সরদার (আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের)। সে ইতিপূর্বে কয়েকবার মোনাফেকী কর্ম তৎপরতা চালিয়েছিলো। এই ঘটনার কিছুদিন আগেও তো সে আরো একটা বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিলো। এক কথায় তার সমস্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে সবাই অবগত ছিলো। অতএব তথ্য যাচাইয়ের মানদণ্ডে- খবর প্রচারকারী নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী হওয়ায় তার প্রচারকৃত সংবাদ বিশ্বাসযোগ্য হতেই পারে না। 
অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে চারিত্রিক ত্র“টির অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি কে ? তিনি তো সাধারণ পরিচয়ের কোনো নারী নন; বরং তিনি তো দুনিয়ার মহামানব মোহাম্মদ সাঃ-এর স্ত্রী। শুধু কি তাই? তিনি উচ্চ বংশীয় সিদ্দীকে আকবার হযরত আবু বকর রা: এর তনয়া। এখানে দুই পক্ষের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, একদিকে অভিযোগকারী ভয়ংকর রকমের কপট চরিত্রের অধিকারী, অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি অতি উচ্চমানের ঈমানদার নারী, মনের মধ্যে আল্লাহ ভীরূতা ও আখেরাতের জবাবদিহিতা বিদ্যমান, তিনি উচ্চ বংশীয় ঘরের মেয়ে, মহামানব রাসূল সা: এর স্ত্রী। সুতারাং দুপক্ষের মধ্যে তুলনার মানদণ্ডে সর্বপ্রথমেই বিবেক বলবে- অপবাদ রটনাকারী মন্দ চরিত্রের অধিকারী হওয়ায় তার রটানো অপবাদ এক উড়ন্ত ভূয়া সংবাদ।
চারিত্রিক অপবাদ আরোপ সংক্রান্ত খবরা-খবরে বিবেককে আরো একটা দিকে ব্যবহার করা দরকার। তাহলো এই ধরনের ঘটনার লক্ষ ও উদ্দেশ্য কী ? মোনাফেক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের উদ্দেশ্য তো এটাই ছিলো যে, নব উত্থিত মুসলমান শক্তিকে হতবল করা। সামনা সামনি লড়াইয়ের ময়দানে তারা যখন পেরে উঠছিল না, ঠিক তখনই চরিত্র হননের পরিকল্পনা করা হয়। সবচেয়ে সাচ্চা মুসলমান, যিনি রাসূল সা: এর স্ত্রী- তাঁকে চরিত্রহীন প্রমাণ করতে পারলে তাতে মোনাফেক নেতার এক মহা বিজয় হতো। এখানে মোনাফেকদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার। এই উদ্দেশ্য সাধনে তারা এমন কোনো নিকৃষ্ট কাজ নেই যা করতে পারে না। হযরত আয়েশা রা: এর ওপর অপবাদ দেয়ার ঘটনাটাও তাদের দ্বারা সংঘটিত এমনই একটি নিকৃষ্ট কাজের উদাহারণ। অতএব অপবাদ ঘটনার সত্যতা প্রথমেই একবাক্যে উড়িয়ে দেয়া যায়। 
বিবেককে আরো একটা দিকে ব্যবহার করা যায়। নিজের মনকে প্রশ্ন করা যায়, আমার মা-বোন-স্ত্রী যদি বিশ্বাসী ও আল্লাহ ভীরু মোমেন মুসলমান হয়ে থাকেন, যদি তারা প্রকাশ্যে ও অগোচরে সর্বক্ষেত্রেই সবসময় আল্লাহর হুকুম মেনে চলেন, আর এমতাবস্থায় যদি তাঁদের বিরুদ্ধে চারিত্রিক অপবাদের অভিযোগ ওঠে, তখন সেটা কি আমি বিশ্বাস করতে পারি? অবশ্যই তা আমি পারি না। তাহলে অপর একজন মুসলমান যার মধ্যে আল্লাহ ভীতি ও আখেরাতের চিন্তা আছে, তার সম্পর্কে ভালো ধারনাই তো প্রথমে আসা দরকার। এখন আরো অগ্রসর হয়ে চিন্তা করে বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা যাক- আমাদের সাধারণ মানের বিশ্বাসী-আল্লাহভীরু-আখিরাতের জবাবদিহিতায় চিন্তিত মা-বোন-স্ত্রীর দ্বারা কোনো অন্যায় অপকর্ম হতে পারাটা যদি অসম্ভব বলে মনে হয়, তাহলে সর্বোচ্চ মানের ঈমানদার রাসূল সা: এর স্ত্রীর দ্বারা অন্যায় হবে সেটিকে কী করে সম্ভব মনে করা যায়? বিবেকই উত্তর দিয়ে বলবে, অপবাদ ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।
এটাই হচ্ছে আল কোরআনে উপস্থাপিত যেকোনো বিষয়ে মাথা ঘামানোর পদ্ধতি। তাই চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর প্রথমেই বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে। এটাই হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম কর্তব্য এবং সমস্যাদি সমাধানের ব্যাপারে তাদের পথম পদক্ষেপ।

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]