আমাদের মা জননী-১৬

চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর দ্বিতীয় পদক্ষেপে প্রমাণ দিয়ে বিচার করতে হয়

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯ ১২:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮০ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
হযরত আয়েশা রা: এর ওপর চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার প্রতিবাদে আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনের (সূরা আন নূর- এর ১১-২০ নং পর্যন্ত দশটি) আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে মানুষকে যেসব শিক্ষা দীক্ষা দিয়েছেন আমরা সেসব নিয়ে আলোচনা করছি। এবারের প্রসঙ্গ- চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর দ্বিতীয় পদক্ষেপে প্রমাণ দিয়ে বিচার করতে হয়।
কারো চারিত্রিক দুর্নাম শোনার পর মুসলমানদের জন্যে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে, বাস্তব দলিল প্রমাণ দ্বারা কোনো কিছুর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। হাওয়া থেকে পাওয়া কাহিনী দিয়ে ঘটনার সত্যতার নিরুপণ হয় না। মুসলমান সমাজকে একটা মূলনীতি মেনে চলতে হয়। নীতিটি এই যে, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিই নির্দোষ, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অপরাধী হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া না যাবে। প্রতিটি ব্যক্তিই নিজের কথায় সত্যবাদী, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অবিশ্বাসী হওয়ার কোনো দলিল পাওয়া না যাবে। হযরত আয়েশা রা: এর অপবাদ ঘটনায় আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ
“(যারা অপবাদ রটালো) তারাই বা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী হাজির করলো না, যেহেতু তারা (প্রয়োজনীয়) সাক্ষী হাজির করতে পারেনি, তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী। -সূরা আন নূর: ১৩।”
চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার নির্জলা ও ডাহা মিথার দৌড় বহুদূর পর্যন্ত ডানা মেলে উড়ন্ত গতিতে ভেসে বেড়ায়। এসব মিথ্যার বিহিত না করলে এর দ্বারা ছোট-বড়, গরীব-ধনী এবং সর্বোচ্চ সম্মানি ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়ে পড়বে। যেমন এর ধাক্কা থেকে আল্লাহর মহান নবী ও তাঁর পবিত্র পরিবার পর্যন্ত রেহাই পায়নি। সুতরাং চারিত্রিক অপবাদ দিয়ে মিথ্যা রটনার মতো এমন অপরাধকে সহজে ছেড়ে দেয়া যায় না এবং তুচ্ছ মনে করাও উচিত হবে না। বিনা সাক্ষীতে এবং বিনা দলিল প্রমাণে যে যার নামে যা চাইবে, মুখোরোচক গল্প হিসাবে আলাপ আলোচনা করতে থাকবে, যার মুখে যা আসবে সে তাই বলবে এবং এভাবে মানুষের ইজ্জত আবরুকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রাজ্যে এমন ধরনের অরাজকতা সহ্য করা সম্ভব নয়। আল্লাহ পরওয়ারদেগার এসব দেখবেন আর তিনি এর কোনো বিহিত করবেন না বা করতে পারবেন না, এমন তো হতে পারে না। তিনি কোনো আঁধার নগরীর মুকুটবিহীন ও ক্ষমতাহীন রাজা নন যে, কিছু করতে চাইলে করতে পারবেন না। তাই তিনি হযরত আয়েশা রা:-এর অপবাদ রটনা সংক্রান্ত মিথ্যা কাহিনীকে উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রাখলেন এবং অভিযোগকারীদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলেন। আল্লাহ বলেনঃ
“(যারা অপবাদ রটালো) তারাই বা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী হাজির করলো না, যেহেতু তারা (প্রয়োজনীয়) সাক্ষী হাজির করতে পারেনি, তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী। -সূরা আন নূর: ১৩।”

সুতরাং তারা যদি এ রকম (দেখা) সাক্ষী হাজির না করে তাহলে অবশ্যই তারা মহান আল্লাহ কাছে মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত হবে, মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ীই তারা মিথ্যাবাদী। আর আল্লাহর কোনো ঘোষণার কথা পরিবর্তন হয় না, তাঁর হুকুমও পরিবর্তিত হয় না এবং তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়িত হওয়া বন্ধও হয় না। সুতরাং এসব মিথ্যাবাদী অপরাধীদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি, এই শাস্তি তাদেরকে অবশ্যই দেয়া হবে এবং এই শাস্তি স্থায়ীভাবে থাকবে। এই মিথ্যা অপবাদ দেয়ার অপরাধে যে শাস্তি প্রযোজ্য হবে তা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নাই। এই শাস্তির পরিণাম অনেক ভয়ংকর অনেক যন্ত্রণাদায়ক এবং এ থেকে বাঁচারও আর কোনো পথ নেই।
অতএব এতক্ষণের (১৫-১৬ পর্বের) আলোচনায় এটাই বুঝা গেলো যে, চারিত্রিক অপবাদ সংক্রান্ত কোনো খবর বা দোষারোপের কথা কানে আসার সাথে সাথে মুসলমানরা দুটি কাজ করবে। যথা-
১) নিজেদের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সে খবরের যথাযর্থতা বুঝার চেষ্টা করবে।
২) সে খবরের সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। কাউকে বলাও যাবে না, কোনো খারাপ মন্তব্যও করা যাবে না।

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]