ধর্ষক ছেলের কারণে পিতার আত্মহত্যা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯ ১৩:১৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৯ বার।

শ্যালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের পর স্ত্রীর পাশেই শুয়ে ছিল খুনি নাঈম ইসলাম (২৭)। এদিকে, অভিযুক্ত নাঈমের পিতা নৈশ প্রহরী বসু মিয়া (৫৫) অপমান ও হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

আটক নাঈম পুলিশকে জানায়, ধর্ষণের পর চিৎকার করাতে শ্বাসরোধ করে শ্যালিকা তামান্নাকে (১৫) খুন করে সে। নাঈম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই (দক্ষিণ) ইউনিয়নের শালগাঁও গ্রামের বসু মিয়ার ছেলে। খবর দেশ রুপান্তর।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় সদর থানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল কবীর সাংবাদিকদের জানান, নাঈমকে ভোররাত তিনটার দিকে সদর উপজেলার তালশহর (পূর্ব) ইউনিয়নের অষ্টগ্রাম থেকে আটক করেন সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বাবু।

তিনি আরও জানান, আটকের পর নাঈম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১৬১ ধারায় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশা করছি বিজ্ঞ আদালতেও সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করবে। এরপর পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন এবং ডিএনএ ম্যাচিং করে দ্রুতই চূড়ান্ত অভিযোগপত্র প্রদান করতে পারব।

এ সময় এসআই শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসী নাঈমের গতিবিধি খেয়াল রাখে। এলাকাবাসী ও আমাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তাকে অনুসরণ করে অষ্টগ্রাম তার মামা শফিক মিয়ার বাড়িতে প্রবেশ করার সময় তাকে আটক করতে সক্ষম হই।

সদর থানার ওসি (তদন্ত) আতিকুর রহমান নাঈমের দেয়া জবানবন্দির বর্ণনা করে বলেন, সে তার পিতা বসু মিয়ার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সড়ক বাজারে নৈশ প্রহরীর কাজ করে। বুধবার বিকেলে স্ত্রীর সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। রাতে দোচালা টিনের ঘরের এক কক্ষে নাঈম স্ত্রী ও সন্তানের সাথে শুয়ে পড়ে। পর্দা দেয়া পাশের কক্ষে বেড়াতে আসা স্ত্রীর ছোট বোন তামান্না ঘুমান। রাত ১ টার দিকে তামান্নাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে নাঈমকে ব্যাপকভাবে বাঁধা দিয়ে পরাস্ত হয়। নাঈম ধর্ষণ শেষে উঠে যাওয়ার সময় তামান্না চিৎকার শুরু করলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

নাঈম পুলিশকে জানিয়েছে, তার বাবা বসু মিয়া বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বাড়ি ফিরে নাঈমকে ডাকাডাকি করলে স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ঘরের দরজা খুলে পাশের কক্ষে তামান্নাকে ডাক দিয়ে সাড়াশব্দ না পেয়ে চিৎকার করে উঠলে নাঈম ঘর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়।

নিহত তামান্নার বড়বোন ও নাঈমের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ১৭ জুন তামান্না তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। ১৯ জুন রাতে স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ও শিশু কন্যা জান্নাতকে আমের জুস খাইয়ে অচেতন করে তার বোন তামান্নাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও খুন করে নাঈম।

উল্লেখ্য তামান্না ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার আমিনপুর গ্রামের নোয়াব মিয়ার মেয়ে। সে ওই গ্রামের একটি বিদ্যালয় নবম শ্রেণির ছাত্রীর ছিল।

এদিকে শ্যালিকাকে ঘর্ষণ ও খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত নাঈম ইসলামের পিতা নৈশ প্রহরী বসু মিয়া আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার দুপুরে নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বসু মিয়া তার খালাতো ভাই মোবারক হোসেন এর বাড়ি গোসাইপুরে আসে। রাতে সেখানে ঘুমিয়ে পড়লেও শনিবার ভোরে এলাকাবাসী একটি গাছে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেয়।

নবীনগর থানার ওসি (তদন্ত) রাজু আহমেদ জানান, বসু মিয়ার আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ছেলে নাঈম কর্তৃক শ্যালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পারিবারিক অপমান ও হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।