চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৯ ০৫:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৬ বার।

রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) চিকিৎসা উপকরণ ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে দরপত্রে উপকরণের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ রকম অভিযোগের প্রেক্ষিতে টেন্ডার কমিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে যে পরিমাণ দুর্নীতির নথিপত্র হাতে পাওয়া গেছে তাতে বিস্মিত হয়ে পড়েছে তদন্ত কমিটি। ৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে সোয়া ৩ কোটি টাকা। খবর যুগান্তর অনলাইন

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি যন্ত্রপাতি ও মালামাল ক্রয়ে বাজার দরের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অসঙ্গতি। যেমন- ইমমিনুসারি অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি টাকা, অথচ প্রকৃত বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। একইভাবে ভিডিও অ্যান্ডোসকোপ যন্ত্রের টেন্ডারে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা অথচ প্রকৃত বাজার মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। সব মালামাল ক্রয়ে এভাবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতি করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কান্তা রায় রিমিকে কন্ডাক্টিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাকে দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি অধ্যাপক একেএম হাবিবুল্লাহর অভিযোগের ভিত্তিতে এ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে রমেক সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজের ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড আদারস ইন্সট্র–মেন্ট বাবদ ৫ কোটি টাকার উপকরণ দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। যোগসাজশের মাধ্যমে দরপত্রে প্রতিটি পণ্যের মূল্য ৪-৫ গুণ বাড়িয়ে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল দেয়া হয়। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, দরপত্রে কাটাকাটি করে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে সর্বনিম্ন দরদাতা করা হয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ টেন্ডারে জেনারেল কোম্পানির ২ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৩২টি এসি কেনা হয়। প্রতিটির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অথচ প্রকৃত বাজার মূল্য ৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। প্রকৃত বাজার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ডায়েটারমাই মেশিন টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু বাজার মূল্য ১০ লাখ টাকা। আলট্রাসাউন্ড মেশিন ফর সাইথেরাপি টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা, বাজার মূল্য ৪ লাখ টাকা। শর্ট ওয়েভ ফর সাইথেরাপি যন্ত্র টেন্ডারে ক্রয় ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়, প্রকৃত বাজার মূল্য ১২ লাখ টাকা, বায়োলজিকেল মাইক্রোস্কোপ টেন্ডারে ক্রয়মূল্য এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা, প্রকৃত বাজার মূল্য ৫৫ হাজার টাকা, ইলেকট্রোলেট অ্যানালাইজার টেন্ডারে ক্রয়মূল্য ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, বাজার মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে মোট ৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আল আরাফাহ ইন্টারন্যাশনালসহ মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিক্রয়কারী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজে সরবরাহ করা যন্ত্রপাতিগুলোর কোম্পানি ও মডেল নম্বর অনুযায়ী প্রকৃত মূল্য জানা গেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নূর ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে চিকিৎসা উপকরণ কেনা হয়েছে। টেন্ডার কমিটির পক্ষ থেকে কোনো দুর্নীতি করা হয়নি। একটি ২ টন এসির মূল্য কীভাবে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা হয়- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, টেন্ডারের আগে মূল্য যাচাই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূল্য যাচাই কমিটির আহবায়ক ডা. হৃদয় রঞ্জন রায় বলেন, রংপুর ও ঢাকার বাজার যাচাই করে তারা যন্ত্রপাতিগুলোর প্রকৃত সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করে টেন্ডার কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের দেয়া ক্রয়মূল্য আর টেন্ডারের ক্রয়মূল্য এক কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে তিনি স্বীকার করেন, ২ টন এসির মূল্য ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা হওয়ার কথা নয়।