টাইগাররা আজ ঘুরে দাঁড়াবেই

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৯ ০৬:১২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৮ বার।

প্রেসবক্সে ওঠার লিফটের মুখেই মোহাম্মদ নবি, চেনামুখের জিজ্ঞাসায় সৌজন্যতা- গলফ খেলে এলাম। কয়েক ঘণ্টা পর বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ, ক্রিকেট ছেড়ে গলফ প্র্যাকটিস! এটা কি ভারত ম্যাচের হ্যাংওভার কাটানোর চেষ্টা, নাকি টাইগারদের সঙ্গে নামার আগে রিলাক্স থাকার চেষ্টা? লাজুক হাসিতে যা বুঝে নেওয়া যায়। আসলে স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষা পাঁচতারকা হোটেলে রয়েছে আফগানিস্তান দল। রুমের পর্দা সরালেই মাঠের পিচ দেখা যায়, হোটেল থেকে দৌড়ে গিয়েও টস করা যায়! ভারতের সঙ্গে ম্যাচটি ফসকে যাওয়ার পর স্নায়ুর চাপ কাটাতেই গলফের আশ্রয় নবিদের। এ অবস্থায় আজকের ম্যাচটিকেই 'বিশ্বকাপ জয়' বলে ধরে নিয়েছে আফগানরা। সেখানে টাইগারদের কাছে এটা এখন বিশ্বকাপের 'নকআউট' পর্বের প্রথম ম্যাচ। অবশ্য কেউ কেউ মজা করে বলছেন যে, এটা এখন মাশরাফিদের কাছে 'এশিয়া কাপ'- যেখানে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, ভারত আর পাকিস্তান। এর একটিতে হারলেই সেমির স্বপ্ন শেষ। এশিয়া কাপে যেমন আফগানিস্তান আর পাকিস্তানকে চাপের মুখে হারিয়ে ফাইনাল খেলা গিয়েছিল, তেমনিই আজও দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবেই টাইগাররা।

প্রতিপক্ষ র‌্যাংকিংয়ের নিচে থাকা আফগান বলেই যে ম্যাচটি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে- এই ভাবনা ভুলেও কেউ মাথায় আনছেন না। বিশেষ করে ভারতকে এই মাঠে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পর, রিলাক্সের এতটুকু সুযোগও নেই। সে কারণেই গতকাল সেন্টার উইকেটের পাশে প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাটিং করতে দেখা গেল সাকিবকে। ব্যাটিং শেষে বোলিংও করতে দেখা গেল তাকে। স্পট বোলিং করতে দেখা গেল মাশরাফি, মুস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিনকে। এই একটি ম্যাচ, যেখানে বাংলাদেশ খেলতে নামলে প্রচণ্ড স্নায়ু চাপে থাকে, রশিদ খানকে নিয়ে আতঙ্কে থাকে। অঘটনের একটা ভয় কাজ করে ভেতরে ভেতরে। 'আমি ভয় বলব না, তবে এটা বলব যে, প্রতিপক্ষের প্রতি সমীহ রেখেই ম্যাচটি খেলতে নামবে ছেলেরা। রশিদ খান বিশ্বমানের বোলার; কিন্তু এ বিশ্বকাপেই মরগান কিংবা ইংল্যান্ড দেখিয়ে দিয়েছে, তাকে খেলা কোনো সমস্যা নয়।' টাইগার কোচ স্টিভ রোডসই মনে করিয়ে দিলেন, আবুধাবিতে এশিয়া কাপে এই আফগানকেই হারানোর স্মৃতি আছে এবং সেটিও ছিল 'নকআউট' পর্বের মতোই। জিততে হবে, না হলে বিদায় নিতে হবে- এমন একটা চাপের মুখেই সেদিন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দল। এবারও বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে হলে হাতে থাকা বাকি তিন ম্যাচ জিতে সমীকরণের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩৩৩ রান তোলার পর ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের পারদ এখন উঁচুতে। কাঁচা ফিল্ডিং নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে ঠিকই এবং আজকের এ মাঠটি আকারে খানিকটা বড়। সুতরাং ফিল্ডারদের আজ তুখোড় হতে হবেই। বোলিং নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তা করছেন না মাশরাফি। সাকিব, মিরাজের সঙ্গে মোসাদ্দেককে পাওয়ার আশা করছেন এবং ডেথ ওভারের জন্য সাইফউদ্দিনকে। রোজ বোলের পিচ দেখে টিম মিটিংয়ে এটা অনুমেয় হয়েছে যে, এখানে ২৮০ থেকে ৩০০ রান নিরাপদ। আফগানিস্তানের মূল অস্ত্রই রশিদ, নবি আর মুজিব। এই ত্রিশ ওভার থেকে যতটা রান বাঁচিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আফগানদের লড়াই দেখেছেন টাইগাররা। ওই ম্যাচের পর তাদের নিয়ে অবশ্য বাড়তি দুশ্চিন্তা করার কিছু দেখছেন না। কোনোভাবেই প্রত্যাশার চাপকে মাথায় আনতে দিতে চাচ্ছেন না মাশরাফি নিজেও। কোচ একটি কথা পরিস্কার বলে দিয়েছেন, 'এই ম্যাচ ঘিরে ভয়ভীতির কিছু নেই। আমরা কৌশল সাজিয়ে রেখেছি। আমাদের বাউন্ডারির ওপর বেশি ভরসা না করে খুচরো খুচরো রানে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।'

এক সাইফউদ্দিন ইস্যুটি ছাড়া দলের মধ্যে আর কোনো সন্দেহের আবহ নেই। অন্যদিকে গৃহবিবাদে জর্জরিত আফগান দলে এখনও অশান্তি দানা বেঁধে আছে। ওপেনার শাহজাদকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি নাকি নবি-রশিদের মতো সিনিয়ররা মেনে নিতে পারেননি। কাবুল থেকে আসা দুই সাংবাদিক বলছিলেন যে, অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবকেও নাকি পছন্দ নয় সিনিয়রদের। বোর্ডের আনুকূল্য পেয়েই তিনি বিশ্বকাপের আগে আগে অধিনায়ক হয়েছেন এবং সেটা যে ঠিক হয়নি, তা বুঝতে পেরে বোর্ড থেকে নাকি শাহজাদকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপে তাকেই অধিনায়ক করা হবে এবং তার পছন্দেই দল গড়া হবে। এই বলে আপাতত তার মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ভারত ম্যাচের পর নাকি দলের মধ্যে ঐক্য বেড়েছে। আফগান বোলাররা রহস্যময় হলেও ব্যাটসম্যানরা কিন্তু ততটা নন। ওপেনার জাজাই বিপিএলের শুরুতে ঝড় তুললেও পরে টাইগার বোলারদের কাছে তিনি খেলা বইয়ের পাতা হয়ে গেছেন। রহমত শাহ, হাসমাতউল্লাহ শহিদি আর আসগর আফগান- চাপের মুখে আফগানদের এই মিডল অর্ডার ভেঙে দেওয়ার জন্য সাকিব-মিরাজ রয়েছেন।

বোলারদের শুধু নিশ্চিত করতে হবে, রান যে কোনো কারণেই তিনশ' পার হতে না পারে এবং রশিদ খানের ভূত যেন কোনো কারণেই ব্যাটসম্যানদের কাঁধে চড়তে না পারে। এই দুটো ব্যাপার নিশ্চিত হলেই কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই সাউদাম্পটন থেকে বার্মিংহাম যেতে পারবে টাইগাররা। সেখানে যে অপেক্ষা করে আছে ভারত।