আমাদের মা জননী-১৮

নারীকে চারিত্রিক অপবাদ দিলে আল্লাহ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন-১

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৯ ১০:২৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৮০ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
আমরা ইতিমধ্যেই হযরত আয়েশা রা: এর ওপর চারিত্রিক অপবাদ দেয়ার কাহিনীটা জেনেছি। কোরআন ও হাদীসের পাতায় এটা ইফ্ক এর ঘটনা বলে পরিচিত। ইফ্ক-এর ঘটনায় আমরা জানতে পেরেছি যে, আল্লাহ পাক সেই ঘটনায় কি রকমের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে কোরআনের দশটি আয়াত নাযিল করে হযরত আয়েশা রা:-কে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। এই দশটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে অপবাদকারীদের প্রতি ভর্ৎসনামূলক প্রশ্ন রেখেছেন, সতর্ক করেছেন, আযাবের কথা ঘোষণা করেছেন, ভবিষ্যতে এসব অপরাধ আর না করার উপদেশ দিয়েছেন এবং কয়েকজন (তিন জনের নাম জানতে পারা যায়) বিভ্রান্ত হয়ে পড়া মোমেন মুসলমানদের অনুগ্রহ করে তাদের তাওবা কবুল করেছেন। সর্বোপরি আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন যে, অপবাদকারীদের কাছে এটা তুচ্ছ ব্যাপার হলেও আল্লাহর কাছে তা এক বিরাট ব্যাপার। ঐ দশটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালার জিজ্ঞাসা, ক্ষুব্ধতা, সতর্কতা জারি, হুশিয়ারি উচ্চারণ, তিরস্কার করণ, নসিহত (উপদেশ) এবং শাস্তিদানের ওয়াদা- এ সকল কিছু এটাই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীর প্রতি চারিত্রিক অপবাদ দেয়াকে ভীষণ অপছন্দ করেন এবং তিনি তাতে রুষ্ট হয়ে যান। হযরত আয়েশা রা: এর অপবাদ সংক্রান্ত ঘটনায় আল্লাহ বলেন:
“যারা (নবী পরিবার সম্পর্কে) মিথ্যা অপবাদ নিয়ে এসেছে, তারা (ছিলো) তোমাদেরই একটি (ক্ষুদ্র) দল; এ (বিষয়টি)-কে তোমরা তোমাদের জন্য খারাপ ভেবো না; বরং (তা) তোমাদের জন্যে (একান্ত) কল্যাণকর, এদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তি যে যতোটুকু গুনাহ করেছে যে ততোটুকুই (তার ফল) পাবে, আর তাদের মধ্যে যে সবচাইতে বেশি (এ গর্হিত কাজে) অংশগ্রহণ করেছে, তার জন্যে আযাবও থাকবে অনেক বড়।-সূরা আন নূর ১১।”
“যদি সেই (মিথ্যা ঘটনা)-টি শোনার পর মোমেন পুরুষ ও মোমেন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে একটা ভালো ধারণা পোষণ করত! (কত ভালো হতো) যদি তারা বলতো, এটা হচ্ছে এক নির্জলা অপবাদ মাত্র! সূরা আন নূর: ১২।”
“(যারা অপবাদ রটালো) তারাই বা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী হাজির করলো না, যেহেতু তারা (প্রয়োজনীয়) সাক্ষী হাজির করতে পারেনি, তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী।-সূরা আন নূর: ১৩।”

উপরোক্ত তিনটি আয়াত সম্পর্কে আমরা কমবেশী আলোচনা করেছি। এখন আমরা আরো অগ্রসর হয়ে পরের আয়াতগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন:
“(হে মোমেনরা,) যদি দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার দয়া অনুগ্রহ না থাকতো, তাহলে (একজন নবী পত্নীর) যে বিষয়টির তোমরা চর্চা করছিলে, তার জন্যে এক বড় ধরনের আযাব এসে তোমাদের স্পর্শ করতো।- সূরা আন নূরঃ ১৪।”
অর্থাৎ হে ঐ লোকসকল! যারা আয়েশা রা:-এর ব্যাপারে মুখে মন্দ ও অশোভনীয় কথা উচ্চারণ করেছে, জেনে রেখো যে, তোমাদের ওপর যদি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ না থাকতো, তাহলে তোমরা মুখ দিয়ে যে কথা বের করেছো সেটার কারণে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি স্পর্শ করতো। এখানে, আল্লাহ তায়ালা ঐ সকল লোকদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ এইভাবে করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় তাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং আখেরাতে তাদের ঈমানের কারণে তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। এই আয়াতটি ঐ লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের অন্তরে ঈমান ছিলো কিন্তু ধোঁকায় পড়ে মোনাফেকদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আটকা পড়েছিলো। তবে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে মোনাফেকরা বঞ্চিত থেকেছে। কেননা তাদের অন্তরে ঈমান ছিলো না এবং তারা তাদের মিথ্যাকে প্রত্যাহারও করেনি। তাই তারা আল্লাহর এই আয়াতের হুকুমের বহির্ভূত। তাদের মধ্যে আখেরাতে রয়েছে ভয়ংকর আযাব।
যাহোক, ওপরের আয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা উদীয়মান মুসলিম মিল্লাতকে অত্যন্ত কঠোরভাবে এক শিক্ষা দিলেন, তারপর তাদের ওপর মান মর্যাদা ও দয়ার বৃষ্টি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে তাঁর কঠিন পাকড়াও এবং ভীষণ আযাব থেকে রেহাই দিলেন, যদিও তাদের আচরণ তাদেরকে আযাবের হকদারই বানিয়ে দিয়েছিলো। রাসূল সা: এর স্ত্রী এবং তাঁর এমন এক সাহাবির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো যার সম্পর্কে কেউ কোনোদিন ভালো ছাড়া মন্দ পায়নি। মোনাফেকদের ষড়যন্ত্রে আটকা পড়ে তারা এসব পবিত্রতম লোকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলো।  এদেরকে তারা যে কষ্টের মধ্যে ফেলেছিলো সেটার প্রতিদানে তারা অবশ্যই বিরাট শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়ে গিয়েছিল। আর তাদের প্রতি সেই শাস্তি অবধারিত হয়ে গিয়েছিলো এবং সেই শাস্তি তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যে ডেকে এনেছিলো। তারা মোনাফেকদের অপপ্রচার চালানোর সহযোগী হয়ে মুসলিম মিল্লাতকে কঠিন কষ্টের মধ্যে ফেলেছিল। তারা সেই সব পবিত্র বিষয়গুলোকে মলিন করার চেষ্টা করেছিলো যেসবের ওপর মুসলিম সমাজ জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে। মুসলমানদের দলীয় জীবন ও সামষ্টিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্যে এবং আল্লাহ ও নবী সা: এর প্রতি মুসলমানদের যে গভীর বিশ্বাস ছিলো সেটাকে মূলোৎপাটিত করার জন্যে পূর্ণ একটি মাস ধরে যে মারাত্মক চক্রান্ত মোনাফেকরা করেছিলা তারা (ক্ষুদ্র একটি মুসলমান দল) সেই চক্রান্তের সহযোগী হয়ে সেটার জন্যে আল্লাহর মহা গযবের হকদার হয়ে গিয়েছিলো। গোটা মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে দেয়ার জন্য মোনাফেকরা যে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে দিয়েছিলো তারা (মুসলমানদের ক্ষুদ্র একটি দল) সেই জালে আটকা পড়েছিলো। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বেদনাদায়ক এক শিক্ষা দান করার পর, তাদেরকে নিজ মেহেরবাণী ও রহমত দ্বারা নাজাত দিলেন।

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]