মাশরাফির সমালোচনা করা চিকিৎসককে 'রাঙামাটি বদলি'

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০১৯ ১৫:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯৯ বার।

নড়াইল সদর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার তৎপরতার সমালোচনা করা চিকিৎসককে রাঙামাটি বদলি করা হয়েছে।

ওই চিকিৎসকের নাম অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজির একমাত্র অধ্যাপক বলে জানা গেছে।

শুক্রবার ফেসবুকে এসব তথ্য জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক আহমাদ হাবিবুর রহিম।

এপ্রিলে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন অনেক অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পান। এরপর হাসপাতালের চার চিকিৎসককে শাস্তিস্বরূপ ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়।  

যদিও মাশরাফীর অনুরোধে পরদিন ওই চিকিৎসকদের শাস্তি স্থগিত করা হয়। তবে এ ঘটনায় ফেসবুকে সমালোচনা করায় ছয় চিকিৎসককে শোকজ করা হয়।

তাদের একজন ছিলেন ডা. এ কে এম রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে আহমাদ হাবিবুর রহিম তার ফেসবুকে লেখেন-

'চমেকের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের এখন কী হবে?

এমপি মাশরাফি ইস্যুতে ফেসবুকের একটা কমেন্টের জের ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজির একমাত্র অধ্যাপককে ডা. রেজাউল করিম স্যারকে সম্প্রতি শোকজ করা হয়। এবার তাঁকে শাস্তিমূলক ওএসডি করা হয়েছে। এটাচমেন্টে রাখা হয়েছে দুর্গম রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্বাভাবিক কারণেই সেখানে হেমাটো অনকোলজি বিভাগ নাই। সুতরাং আপাতত তাঁর অর্জিত জ্ঞান কাজ লাগানোর সুযোগ বন্ধ। অতএব আপাতত তিনি কাজের চাপ মুক্ত!

তাঁকে ট্রান্সফার করলেন যারা তারা কি জানেন কতো ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটেছে? চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবছর লক্ষাধিক ক্যান্সার শিশু চিকিৎসা নেয়। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকে শতাধিক শিশু। হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর জীবনের সাথে অনেক বড় একটা অবিচার হয়ে গেলো। স্যার দেশের মাত্র তিনজন পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজির অধ্যাপকের একজন। অথচ এখন তার এই জ্ঞান কাজে লাগানোর রাস্তা সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। ব্লাড ক্যান্সার সহ আরও অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুগুলো এখন কোথায় যাবে? কার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেবে?

অসহায় পরিবার গুলোর কী অবস্থা হবে আমরা কি একটু চিন্তা করতে পারছি?

সরকারী দপ্তরের শৃঙখলা রক্ষার্থে অনেক সিদ্ধান্তই নিতে হয়। কিন্তু সেখানে রিস্ক বেনিফিট রেশিওটা কী মাথায় রাখতে হবে না? স্যার কি কোন দুর্নীতি করেছেন? অন্যায় ভাবে রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? অফিসে না গিয়ে দিনের পর দিন বেতন তুলেছেন? মোটেও না। সামান্য এক কমেন্টে কী এমপি মাশরাফি সাহেবের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে? কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষতিটা কিন্তু এখন অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এমপি মাশরাফি সাহেব এ ব্যাপারটা জানেন না। নাহলে উনি নিজেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের হাজারো ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু গুলোর জন্য সমবেদনা। এখানে অধ্যাপক রেজাউল করিম স্যারের কোন ব্যক্তিগত ক্ষতি নেই। বরং প্রতিদিন শত শত ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের যে কষ্ট আর দুঃশ্চিন্তা ছিলো তা থেকে তিনি আপাতত মুক্তি পেয়ে গেলেন। এখন তিনি রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে আগের তুলনায় অনেক কম কাজের চাপেই থাকবেন। কিন্তু ক্ষতিটা হয়ে গেলো আমাদের; অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের; এই হতভাগ্য বাংলাদেশের।

এই সিদ্ধান্তটা নিয়ে কী আবার একটু চিন্তা করবেন কর্তা ব্যক্তিরা? আমরা কী দিনশেষ অসংখ্য জীবনের বিপরীতে কী সামান্য কিছু কথাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করবো? নাকি মানবতার পাল্লাই বেশি ওজন পাওয়ার দাবী রাখে?'

বানান ও ভাষা লেখকের নিজস্ব।