বগুড়াকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়তে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

রাগেবুল আহসান রিপুঃ
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭২৫২ বার।

ঐতিহাসিকগণ বলছেন, দশ হাজার বছরেরও বেশি বয়স এই নগরীর। ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিকরা মহাস্থানের মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করেছেন আড়াই হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন। শ্রীলঙ্কাসহ নানা দেশ থেকে মানুষ আসতো শিক্ষার জন্য, জ্ঞানের জন্য আমাদের এই নগরীতে।গৌতম বুদ্ধ এসেছিলেন এবং আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফকির মজনু শাহ্ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তার ঐতিহাসিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন মহাস্থানগড় থেকে। সন্ন্যাস বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠকও একাধিকবার বগুড়া এসেছিলেন। বগুড়ার সকল ছাত্র, যুবক, তরুণকে আমাদের এই গৌরবময় অতীত বুকে ধারণ করতে হবে। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে আমরা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক জাতি। আমরা পারি ভবিষ্যতে বগুড়াকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে। এখনই এই স্বপ্ন দেখার সময়।

উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব সরকারের সময়ে বগুড়ার কম-বেশি উন্নয়ন হয়েছে। জাতীয় পার্টি সরকারের সময় বগুড়ার গ্রাম-গঞ্জে অনেক রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপির শেষ সময়ে বগুড়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রূপান্তর, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, মাটিডালী-বনানী সুপ্রশস্ত সড়ক নির্মাণ অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকার বগুড়ায় ৩৭টি খাদ্য গুদামসহ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি আধুনিক খাদ্য গুদাম (সাইলো) নির্মাণ, প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বহু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। 

এই সরকার বগুড়ার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে- (১) বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ (২) বগুড়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন (৩০) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (৪) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (৫) বগুড়া-সান্তাহার ও বগুড়া-জয়পুরহাট রাস্তা সম্প্রসারণ, বিশ্বরোডকে ছয় লেনে রূপান্তর ইত্যাদি। এই প্রকল্পের কাজগুলি সম্পন্ন হলে বগুড়ার জনসাধারণের কাছে এই সরকারের উন্নয়ন কাজগুলি দৃশ্যমান হবে। এই উন্নয়ন কর্মকা-ের বাইরে আজ কয়েকটি অতি জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বগুড়ার সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে যুবক ও তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


পুণ্ড্র-প্রাচীন নগরী
বগুড়া একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নগরী। ইতিহাসে যা পু-্রনগরী হিসেবে প্রসিদ্ধ। বিশেষজ্ঞ অভিমত হচ্ছে পু-্রই বাঙালি জাতির উৎসমুখ, আমাদের জাতি সত্বা তৈরির মূল কেন্দ্র। ঐতিহাসিকগণ বলছেন, দশ হাজার বছরেরও বেশি বয়স এই নগরীর। ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিকরা মহাস্থানের মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করেছেন আড়াই হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন। জলপথে জাহাজে করে সুদূর স্পেনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে চীনের সাথে আমাদের যুদ্ধ বেঁধেছিল তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কাসহ নানা দেশ থেকে মানুষ আসতো শিক্ষার জন্য, জ্ঞানের জন্য আমাদের এই নগরীতে। গৌতম বুদ্ধ এসেছিলেন এবং আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। ফকির মজনু শাহ্ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন মহাস্থানগড় থেকে। সন্যাস বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠকও একাধিকার বগুড়া এসেছিলেন। বগুড়ার সকল ছাত্র, যুবক, তরুণদের আমাদের এই গৌরবময় অতীত বুকে ধারণ করতে হবে। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে আমরা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক জাতি। আমরা পারি ভবিষ্যতে বগুড়াকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে। এখনই এই স্বপ্ন দেখার সময়।


শিক্ষা ও সংস্কৃতি
শিক্ষা-দীক্ষায় ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বগুড়ার মানুষ আদিকাল থেকেই অগ্রসর। বর্তমানে বগুড়ার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় ভাল করছে। বিভাগের মধ্যে তারা প্রথম হচ্ছে। দেশের মধ্যেও তারা অন্যতম। এই ভাল ফলাফলের পরেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনার ছেলে-মেয়েদের মত সুযোগ-সুবিধা বগুড়ার ছেলে- মেয়েরা পাচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করার জন্য বগুড়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কয়েকটি স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করা এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরী। শজিমেক ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডা. মোঃ রেজাউল আলম জুয়েল বলেন- ‘আমাদের ৫০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ১৬০০ থেকে ১৭০০জন। সরকার এই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই ৯১ কোটি টাকা বরাদ্দসহ কলেজে ১১টি নতুন বিভাগ চালু করেছে। হাসপাতালটি ৪তলা থেকে ৮ তলায় উন্নীত করা হবে। হাসপাতালটি ২০০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ক্যাজুয়ালটি ও আইসিইউ পূর্ণাঙ্গ ইউনিট চালুসহ এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ডায়ালেসিস, লিনিয়ান এক্সিলেটর এর মত গুরুত্বপূর্ণ মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো গেলে বগুড়ায় চিকিৎসা সেবার নবদিগন্তের সূচনা হবে। বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে সাধারণ সম্পাদক জনাব তৌফিকুর রহমান বাপ্পি ভা-ারী বলেন, ডায়াবেটিক হাসপাতাল শুধু রক্ত পরীক্ষার জন্য নয়, এখানে মানবদেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা করা হয়। সকলে উদ্যোগী হলে বগুড়া ডায়াবেটিস হাসপাতালকে স্পেশালাইজড মেডিকেল কলেজ ও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করা সম্ভব।

বগুড়ার ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলায় এখন বিশ্বমানের। সারা পৃথিবীতে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ বগুড়ার সাধারণ ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার কোন মাঠ নেই। বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক জনাব মাসুদুর রহমান মিলন ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নিজ উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম’। এখন শহরের উত্তর পাশে রেল লাইনের ওপারে খেলার মাঠ প্রয়োজন। এই মাঠটি সরকারি বা বেসরকারিভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশের জন্য একটি লাকী গ্রাউন্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। সকল সুযোগ-সুবিধার পরও বিসিবি’র অবহেলায় ভেন্যুটি বন্ধ হয়ে গেছে। শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের পুরানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য সকল ক্রীড়ামোদীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের জন্ম এই বগুড়ায়। যার ধারাবাহিকতায় বগুড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক উজ্জ্বল মানুষ রয়েছেন। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এই সাংস্কৃতিক কর্মীদের বহু দিনের একটা প্রাণের দাবী ছিল-উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলা। এই দাবী পূরণ করা কি খুব কঠিন ছিল? নেতৃস্থানীয়রা একটু আন্তরিক হলে এটা কি করা যায় না? বঙ্গবন্ধু শিল্পকলা একাডেমিক প্রতিষ্ঠা করে জেলায় জেলায় তা সম্প্রসারিত করেছিলেন। এখন এই শিল্পকলা একাডেমি প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করার সময় এসেছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী শহীদ মিনার (যা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে) তা পুনঃনির্মাণ করা জরুরী।
বগুড়া এক সময় শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন পত্রিকার শহর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। দেশের অন্য কোন জেলায় এত বেশি পত্রিকা প্রকাশিত হয় না। পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণ ও সাংবাদিকদের আবাসনসহ সকল দাবী বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।

শিল্প ও কৃষি
কৃষিপণ্য ও কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বগুড়া দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। আমরা ধান-চাল, মাছ-মাংস, শাক-সবজি উৎপাদনে দেশের মধ্যে শীর্ষে। তারপরেও বগুড়ায় কোন সার কারখানা নেই। সার কারখানা ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বিশেষায়িত হিমাগার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দলমতের উর্ধ্বে বগুড়াবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। ভেজাল সার, কীটনাশক ও বীজ আমাদের কৃষককে প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত করছে। বগুড়ার কৃষিখাতকে টিকিয়ে রাখতে এইসব ভেজালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশ দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে। আমাদের উৎপাদিত ফাউন্ড্রি পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, চীন ও ইউরোপে রপ্তানী করা সম্ভব। প্রয়াত তরুণ শিল্পপতি আইনুল হক সোহেল সব সময় বলতেন, গার্মেন্ট শিল্প যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একদিন বগুড়ার ফাউন্ড্রি শিল্পও সেই রকম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। আমাদের কৃষি যন্ত্রাংশ, ফাউন্ড্রি এবং ওষুধ শিল্পকে আধুনিক ও বিকশিত করার জন্য সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করা দরকার। পশু পালন, মৎস্য উৎপাদন ও পোল্ট্রি শিল্পকে কৃষিখাত হিসেবে ঘোষণা করে কৃষি ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হলে এই খাতগুলি বেঁচে থাকার প্রেরণা পাবে।

করতোয়া, নগর ও বাঙালি নদী রক্ষা
সম্প্রতি ভারতের হাইকোর্ট এবং নেদারল্যান্ডের একটি কোর্ট তাদের মূল্যবান রায়ে বলেছেন- নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে, নদীর মৃত্যু মানে জীবনের মৃত্যু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সাতটি নদীর জীবন বাঁচাবার দাবী করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম আমাদের প্রিয় ‘করতোয়া’ নদী। এই নদীকে বাঁচাবার জন্য সকলের আজ এক হওয়া দরকার। শহরের ভিতর দিয়ে নদী প্রবাহিত হওয়া আল্লাহ্র রহমত, চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। পৃথিবীর বহু দেশে বহু শহরের মানুষ তাদের নদীকে পরম যতেœ রক্ষা করে। যার শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ লন্ডনের টেমস্্ নদী। দেশের ভিতরে আমাদের পাশের ছোট জেলা নওগাঁ। এই শহরের বুকের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ‘ছোট যমুনা’। এই ছোট শহরের একজন বড় মানুষ মরহুম আব্দুল জলিল। এই মহান মানুষটি তাঁর জেলার সকল মানুষকে নিয়ে ‘ছোট যমুনা’ কে দৃষ্টি নন্দন করে গড়ে তুলেছিলেন। চমৎকার দুই পাড়, সুন্দর পাথর দিয়ে বাঁধা ঘাট, সারি সারি জানা অজানা কত ফল-ফুলের গাছ, শিশুদের জন্য পার্ক। সকাল-সন্ধ্যা মানুষের বুক ভরে শ্বাস নিবার এক স্বর্গীয় স্থান এই ‘ছোট যমুনা’।
আমরা ‘করতোয়া’ কে বাঁচাতে পারি ও তার জীবন ফিরে দিতে পারি। গড়ে তুলতে পারি ছোট যমুনার মত আরও সুন্দর করে। সরকার করতোয়া ও নাগর নদী খননের জন্য চারশত পঞ্চাশ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটিতে ‘করতোয়া’র দুই পাশে আঠার ফিট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ, বনায়ন, শিশুদের পার্ক, নৌ চলাচল ও মা মাছ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরেও প্রকল্পটি আজও বাস্তাবায়িত হচ্ছে না কেন? আমাদের জাতির নাম বাঙালি। বগুড়ায় একটি নদীর নাম ‘বাঙালি’। আজ সেই ‘বাঙালি’ নদী মরে যাচ্ছে। এটা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়। ‘করতোয়া’ ও ‘বাঙালি’ নদী রক্ষার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।

সিটি কর্পোরেশন, বেতার ও টেলিভিশন
বগুড়ার অতীত ঐতিহ্য, বর্তমানে কৃষি শিল্প ও শিক্ষার যে অভাবনীয় উন্নয়ন তা বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো করেছে। এই দাবী এখন বগুড়ার মানুষের প্রাণের দাবী। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের বিচারে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বগুড়ায় পূর্ণাঙ্গ বেতার ও টেলিভিশন সেন্টার অতি জরুরী।

পর্যটন কেন্দ্র
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প বিকাশে যারা কাজ করছেন তারা মনে করেন বগুড়ার মহাস্থান গড়, কালীদহ সাগর, বেহুলার বাসর ঘর, ভাসুবিহার, বগুড়ার নবাব প্যালেস ও করতোয়া নদী নিয়ে যে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে তা উপমহাদেশের মধ্যে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। অনেক যুবক-তরুণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।

বিমানবন্দর ও বিমান ঘাঁটি
বগুড়া ভৌগলিক কারণে উত্তরবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র, রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপরূপ সম্ভাবনা। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় এখানে বিমানবন্দর স্থাপন জরুরী যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করবে। চীনের সঙ্গে এক সময় এই অঞ্চলে বাণিজ্য নিয়ে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ভবিষ্যতে কখনো যদি বাংলাদেশকে প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে হয়, সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সেই সময় বগুড়া বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবে। এই মাটিতে ট্যাংক রেজিমেন্ট নিয়ে যত সফলভাবে যুদ্ধ করা সম্ভব অন্য অঞ্চলে সম্ভব নয়। ট্যাংক রেজিমেন্টকে সাপোর্ট করার জন্য দরকার যুদ্ধ বিমান। ভবিষ্যতে দেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনে বগুড়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানঘাঁটি গড়ে তোলা দরকার।

যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন শহর
ঢাকা শহরের যানজট আর বগুড়ার যানজট প্রায় একই রকম। যানজটে জীবন অতিষ্ঠ। যানজট মুক্ত পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে শহরবাসীর মধ্যে এক ধরনের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শহরের ভিতর থেকে সমস্ত কাঁচা বাজার, ফলের আড়ৎগুলি ও জেলখানাসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান শহরের বাইরে নিতে হবে। মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত করতোয়া নদীর দুই পাশে আঠারো ফিট রাস্তা নির্মাণ, চেলোপাড়া থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত রেল ওভার ব্রীজ নির্মাণ করা গেলে শহরের যানজট অনেকাংশেই মুক্ত হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার বগুড়ার কৃতি সন্তান আমিনুল ইসলাম সেহেরী তাঁর জীবদ্দশায় এই রেল ওভার ব্রীজ নিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন, আর্থিক সহায়তার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে সেহেরী ভাইয়ের সেই স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বগুড়াকে যানজট মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপরের কাজগুলি জরুরীভাবে করা দরকার।

সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বগুড়া
এই সময়ে বগুড়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা ভূমি দস্যুতা, সীমাহীন সন্ত্রাস আর অসহনীয় চাঁদাবাজি। যারা নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন, বাড়ি বানাচ্ছেন তারা জানেন এরা কি পরিমাণ হিংস্র প্রকৃতির। বিশ্বাস করুন এদের কোন দল নেই, এদের কোন নেতা নেই, নেই কোন আদর্শ। এদের একটাই পরিচয় এরা সন্ত্রাসী। একদিন সবাই মিলে সাতমাথায় দাঁড়ালে ওরা বগুড়া ছেড়ে পালাবে। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বগুড়া সকলের আকাঙ্খা।
আপাতদৃষ্টিতে বগুড়ার উন্নয়ন ও আগামির স্বপ্ন বাস্তবায়নে উপরের কাজগুলি করা কঠিন কিন্তু সকলে ঐক্যবদ্ধ হলে তা অসম্ভব নয়।
[লেখকঃ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি-বাঙালি সংস্কৃতি সংসদ। ফোনঃ ০১৭১২১৯৬৬৫৫, email:[email protected]]