আমাদের মা জননী-২০

নারীকে চারিত্রিক অপবাদ দিলে আল্লাহ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন-৩

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০১৯ ১২:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৬৫ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
মহান আল্লাহ তায়ালা চান না যে, নারীদের প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং তা নিয়ে রঙ্গরস বানিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানো হোক। এমনটা অব্যাহতভাবে করা হলে তখন মানুষের মনে ধারণা জন্মাবে যে, এসব অশ্লীল ঘটনা বুঝি খুবই স্বাভাবিক ও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর ফলে মানুষের মনে তথা সমাজে এ ধরণের কাজ করতে আরো উৎসাহ-উদ্দীপনা-কৌতুহল জাগতে থাকবে। সুতরাং এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বোঝা যায় যে, চরিত্রহীনতার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন তথা যত্রতত্র আড্ডার মাধ্যমে গল্প-গুজব-আলোচনা- এ জাতীয় সবকিছুই মূলত নির্লজ্জ অশ্লীলতারই প্রসার ঘটায়। তাই আল্লাহ তায়ালা এ ধরণের ঘটনা নিয়ে প্রচার প্রচারণার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এ ধরণের ঘটনার কথা শুনবে তার জন্যে সেটা ছড়িয়ে দেয়া হারাম করা হয়েছে। যারা এ ধরণের জঘন্য কথা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের জন্যে যেমন পার্থিব শাস্তি রয়েছে, পাশাপাশি তাদের জন্যে পারলৌকিক শাস্তি অর্থাৎ জাহান্নামে নিক্ষেপের শাস্তিও রয়েছে। কোন্ ঘটনা কতটুকু সত্যি, আদৌ কোনো পাপাচার হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে তা কোন স্তরের কোন্ পর্যায়ের, প্রকৃত দায়ী ব্যক্তি কে ?- এসব কিছুই মহান আল্লাহপাকই ভালো জানেন, আমরা কিছুই জানি না। তাই আমাদেরকে সমস্ত বিষয় আল্লাহর দিকেই ফিরিয়ে দেয়া উচিত। হযরত আয়েশা রা:-এর মিথ্যা অপবাদ সংক্রান্ত ঘটনায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ পর্যায়ে বলেন ঃ
“যারা মোমেনদের মাঝে (মিছে অপবাদ রটনা করে) অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি; আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন, তোমরা (কিছুই) জানো না।- সূরা আন নূরঃ ১৯।”
ওপরের আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, যারা মিথ্যা অপবাদের অভিযোগ রচনা করে এবং সেটার প্রচার করে মুসলিম সমাজে অনৈতিকতার বিস্তার করে ও মুসলিম উম্মাতের নৈতিক চরিত্রে কলংক আরোপের চেষ্টা করে তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। 
এই আয়াতটিকে এভাবেও বুঝে নেয়া যায় যে, “অশ্লীলতার প্রসার শুধুমাত্র অপবাদ রটানোর মাধ্যমেই ঘটে না; বরং আরো বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে নির্লজ্জতা-অশ্লীলতার প্রসার ঘটে। যেমন- ব্যভিচারকে আকৃষ্ট করে নানান জাতীয় আবেগ-উচ্ছাস সৃষ্টিকারী গল্প কাহিনী তৈরী করা, ব্যভিচারকে উৎসাহ দিতে অনৈতিক কাব্য-কবিতা রচনা করা, ব্যভিচারকে ছড়িয়ে দিতে অশ্লীল-অসুস্থ নৃত্য-গান-নাটক-সিনেমা তৈরী করা, ব্যভিচারকে প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন স্থানে আমোদ-স্ফূর্তির নামে নারী পুরুষের যৌথ অবাধ উন্মাদনার আয়োজন করা, এমনকি সরাসরি ব্যভিচারের আড্ডা-আসর-মঞ্চ গঠন করা ইত্যাদি। এসব কাজই অশ্লীলতার প্রসার ঘটায়। সুতারাং এসকল কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট অপরাধী বলে বিবেচিত হবে। আর সেজন্য তারা দুনিয়া ও আখেরাত এই উভয় স্থানেই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়ে যাবে।”
এই আয়াতে শেষ অংশে আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।” এ কথার মর্মার্থ এভাবেও করে নেয়া যেতে পারে যে, “অশ্লীলতার প্রসার ঘটানোর মতো প্রতিটি কাজের কুপ্রভাব সমাজে কোথায় কোথায় সংক্রমিত হয়, কত লোক সেটার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজকে সেটার দরুণ কতখানি ক্ষতি স্বীকার করতে হয়, তা তোমরা জানো না, বোঝোও না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা খুব ভালোভাবেই জানেন। অতএব তোমরা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করো। যেসব অন্যায় ও অবৈধ কাজকে তিনি চিহ্নিত করে দিচ্ছেন, সেগুলো থেকে নিবৃত থাকো ও দমন করার চেষ্টা করো। এগুলো কোনোভাবেই ছোট খাটো ও নগণ্য ব্যাপার নয় যে, এগুলোর প্রতি উদারতা দেখানো যেতে পারে। আসলে এগুলো অনেক বড় বিষয়। কাজেই এ ধরনের কাজ যারা করবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির মুখে পড়বে।” সুতারাং আল্লাহ তায়ালার এই আয়াতের ভাবানুবাদ এটাই দাঁড়াই যে, “যেসব লোক চায় যে, ঈমানদার লোকদের সমাজে নির্লজ্জতা বিস্তার লাভ করুক, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।”

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]