সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে কেনা-বেচার অভিযোগ

বগুড়ায় আ’লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের ৬ নেতাসহ ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা 

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৯ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৭৯ বার।

বগুড়ায় জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে কোটি টাকা মূল্যের ৩৩ শতক (শতাংশ) সরকারি খাস জমি কেনা-বেচার অভিযোগে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের ৬ নেতা-কর্মীসহ ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়ার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার সন্ধ্যায় একই দফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 
মামলায়  আদমদীঘি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার এবং সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকেও আসামী করা হয়েছে। দুদক বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, তিনি মামলাটি গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
জালিয়াতি মামলার আসামীরা হলেনঃ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু রেজা খান, সাংগঠনিক সম্পাদক নিসরুল হামিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান মন্টি, উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রাজা, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ এবং তাদের সহযোগী আদমদীঘি উপজেলার হলুদঘর এলাকার অহির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে শহিদুল ইসলাম, একই গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে আয়ুব খান, কথিত জমির মালিক আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বাজারের শ্রী শশধর কু-র ছেলে শ্রী চন্দন কুমার, নওগাঁ জেলার দুবলহাটি গ্রামের মৃত অমরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায়, আদমদীঘি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী ও ওই অফিসের দলিল লেখক রকিব হোসেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, আদমদীঘি উপজেলার কলসা মৌজা ৮নং এমএমআর খতিয়ানভুক্ত ৩৩ শতক জমিসহ অন্যান্য দাগে মোট ১ দশমিক ১৮ একর জমি রয়েছে। নওগাঁ জেলার দুবলহাটি এলাকার জনৈক সুরেন্দ্র নাথ রায়ের স্ত্রী স্নেহলতা রায়সহ তার আরও দু’জন আত্মীয় ওই জমির মালিক। তারা ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করায় তাদের ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকাভুক্ত করে ২০১২ সালের ১৫ মার্চ গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই সম্পত্তির ওপর বর্তমানে সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রয়েছে। বিধি মোতাবেক ওই সম্পত্তির মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের ওপর বর্তায়। উল্লেখিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত সরকারি সম্পত্তি অবমুক্ত না করা পর্যন্ত কোন সাধারণ মানুষ ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারে না। ফলে ওই সম্পত্তি কোন দলিল সম্পাদন কিংবা অন্য কোন প্রকারে হস্তান্তরেরও কোন সুযোগ নেই। 
মামলার বাদী দুদক কর্মর্কা আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, উল্লেখিত ১২ আসামীর মধ্যে প্রথম ৮জন সরকারি ৩৩ শতক সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে জনৈক শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায়ের নামে ওই সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত খতিয়ান ও রেকর্ডপত্র তৈরি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই কথিত ওই মালিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদও তৈরি করা হয়। তার ৩ মাস পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর আওয়ামী, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের ৬ নেতাসহ তাদের আরও ৩ সহযোগীকে ক্রেতা দেখিয়ে ওই ৩৩ শতক জমি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন করা হয়।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, প্রায় কোটি টাকার সরকারি ওই খাস সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে কেনা-বেচার মাধ্যমে আসামীদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু রেজা খান সাংবাদিকদের বলেন, সম্পত্তিটি যে সরকারি খাস সেটি তাদের জানা ছিল না। পরে যখন জেনেছেন তখন তারা দলিল বাতিলের মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তাদেরকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তার পরেও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো।’