আমাদের মা জননী-২১

নারীকে চারিত্রিক অপবাদ দিলে আল্লাহ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন-৪

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৯ ১২:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩২৩ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
হযরত আয়েশা রা: এর ওপর চারিত্রিক মিথ্যা অপবাদ আরোপের ঘটনায় আল্লাহ তায়ালা মোমেন কুলের মা জননিকে পবিত্র ঘোষণা করে কোরআনের যে দশটি আয়াত নাযিল করেছিলেন আমরা তা নিয়ে আলোচনা করছি। এসব আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তায়ালা আমারদেরকে যেসব শিক্ষা দিয়েছেন সেসবই আমাদের আলোচ্য বিষয়। এই অপবাদ ঘটনা যে সামাণ্য বিষয় নয় বরং তা বিরাট ব্যাপার এ কথা স্বয়ং আল্লাহই ঘোষণা করেছেন। এ জন্যেই তিনি কোরআনের দশটি আয়াত নাযিল করে ঘটনা সম্পর্কে বিশদ ও বহুবিধ শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের এতক্ষণের বিস্তৃত আলোচনায় সেসবের কিঞ্চিৎ অংশই তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর এসব আয়াত নাযিলের উদ্দেশ্য ও সেটার মর্মার্থ তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। এসবের রহস্য ভেদ করে ততটুকুই বোঝা যেতে পারে যতটুকু আল্লাহ তায়ালা বুঝবার তৌফিক দেন। আল্লাহর কাছে বান্দার প্রার্থনা বারবার এটাই হওয়া উচিত যে, মহান আল্লাহ যেন তাঁর আয়াতসমূহ আমাদেরকে বুঝবার জন্যে বেশি বেশি তৌফিক দেন। আমরা বর্তমানে যে শিরোনাম দিয়ে আলোচনা চালু রেখেছি তা হলো, নারীকে চারিত্রিক অপবাদ দিলে আল্লাহ পাক ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। সূরা আন নূরের ১১নং থেকে ২০ নং আয়াতের বিভিন্ন অংশের মধ্য দিয়ে আল্লাহর এই ক্ষুব্ধতার বহি:প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। হযরত আয়েশা রা: এর প্রতি চারিত্রিক অপবাদ রটানোর কাজে মুসলমানদের ক্ষুদ্র একটি দলও ভুলবশত জড়িয়ে পড়েছিলো। আল্লাহ পাক সেসব লোকদের উদ্দেশ্য করে সতর্কতা, তিরস্কার ও উপদেশমূলক কথা বলেছেন, এর পাশাপাশি আল্লাহপাক তাদেরকে স্মরণ করে দিয়েছেন যে, তাদের প্রতি আল্লাহর দয়া অনুগ্রহ, রহম-করম যদি না থাকতো তবে ভয়াবহ আযাব তাদেরকে র্স্প করতো। এই কথা আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ১৪নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা ঐ একই কথা সূরা নূরের ২০নং আয়াতেও বলছেন। অপবাদ ঘটনা রটানোর জেরে আল্লাহ তায়ালা একই কথা দুইবার স্মরণ করে দেয়ার অর্থই হলো এই ঘটনায় আল্লাহ তায়ালা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তাঁর এই ক্ষুব্ধতা শুধুমাত্র সেই ঘটনার সেই সময়কালীন অবস্থার জন্যে প্রযোজ্য নয়, বরং ভবিষ্যতে ঐ ধরণের ঘটনার শিকার যে নারীই হবেন, সেই ক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত ক্রোধান্বিত হয়ে পড়বেন।
যাহোক, হযরত আয়েশা রা: কে অপবাদ দেয়ার প্রচার কাজে সহযোগী হয়ে পড়া ঐ সকল (মুষ্টিমেয়) মুসলমানদেরকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের কথা দ্বিতীয় বারের মতো স্মরণ করে দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করলেন এবং তা থেকে তারা যেন শিক্ষা নিতে পারে সে ব্যাপারে উপদেশ দিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
“(হে মোমেনরা,) যদি তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ না থাকতো (তাহলে মোনাফেকদের এ রচনার ফলে একটা বড় বিপর্যয় ঘটে যেতো), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বড়ই দয়ালু ও স্নেহ প্রবণ!- সূরা আন নূরঃ ২০।”
অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহম-করম যদি তোমাদের প্রতি না থাকতো, তিনি স্নেহশীল ও দয়াবান না হতেন, (তাহলে এই যে বিষয়টি তোমাদের মধ্যে ছড়ানো হয়েছিলো, তার পরিনাম হতো ভয়ংকর।)
এভাবেই আল্লাহ তায়ালা হযরত আয়েশা রা:-এর চরিত্রের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় তাঁর ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এই একই ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করে থাকেন যখন কোনো সতী-সাধ্বী সহজ সরল নারীকেও মিথ্যা চারিত্রিক অপবাদ দেয়া হয়।

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]