বছরের পর বছর তিমি শিকার করে আসছে জাপান

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০১৯ ০৯:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯০ বার।

আন্তর্জাতিক সমালোচনা গায়ে মেখে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক তিমি শিকারের যুগে ফিরে গেল জাপান। বলা হয়ে থাকে, ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ এ ধরনের শিকার করেছিল দেশটি, কিন্তু আসলে তা কখনো থেমে থাকেনি। বরং গবেষণার নামে প্রতি বছর শত শত তিমি হত্যা করেছে।

বৃহৎ এই সামুদ্রিক প্রাণীটি শিকার নিষিদ্ধ করেছিল ইন্টারন্যাশনাল হোয়েলিং কমিশন (আইডব্লিউসি)। ওই সংস্থা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে ১ জুলাই জাহাজ ভাসিয়েছে জাপান, চলতি বছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা ২২৭। আর প্রথম শিকার হওয়া তিমিটি ছিল মিঙ্কে প্রজাতির।

১৯ শতক থেকে ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত শিকারিরা তিমিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। এতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ১৯৬০ এর দশকের দক্ষ শিকার পদ্ধতি ও বড় ফ্যাক্টরি শিপের আবির্ভাব। ১৯৮৬ সালে আইডব্লিউসি’র সদস্যরা তিমিকে টেকসই সংখ্যায় নিয়ে আসতে শিকার স্থগিত রাখতে রাজি হয়।

এতে সংরক্ষণবাদীরা খুশি হলেও জাপান, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মতো দেশগুলো একে স্থায়ীভাবে বন্ধের বিপরীতে সাময়িক স্থগিত আকারে দেখেছিল। এই সময় শিকার পুরোপুরি বন্ধ ছিল- এমন নয়। প্রান্তীয় গোষ্ঠীগুলোর জীবন ধারণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য তিমি শিকার স্বীকৃত ছিলো।

আর ব্যতিক্রমটুকু ভালোভাবে গ্রহণ করে টোকিও। ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২০০ থেকে ১২শ’ তিমি হত্যা করেছে। অভিযোগ আছে, এই সুযোগে বাজারে চলে আসতো তিমির মাংস। বিষয়টিকে চাপা দেওয়ার জন্যই গবেষণার অজুহাত দেখাতো।  এই বাবদ দেশটি গত বছর ৫২টি মিঙ্কে, ১৫০টি ব্রাইডে ও ২৫টি সেই তিমি শিকার করে।

২০১৮ সালে শেষবার আইডব্লিউসিকে জাপান বোঝানোর চেষ্টা করে- টেকসই কোটার মধ্যে শিকারের অনুমতি দেওয়ার। সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি জুলাইয়ে সংস্থাটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

তিমি শিকার জাপানে খুবই ছোট শিল্প। মাত্র ৩শ’র মতো মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। এই জুলাইয়ে পাঁচটি জাহাজ সাগরে ভাসবে। দেশটির মৎস্য সম্পদ মন্ত্রী জানান, নিজস্ব জলসীমা ও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে তারা শিকার করবেন। এর মানে হলো অ্যান্টার্কটিকায় দেশটি শিকার করবে না।

অন্যান্য শিকারি দেশের মতো, জাপানের যুক্তি- তিমি ধরা ও খাওয়া তাদের সংস্কৃতির অংশ। শতকের পর শতক ধরে উপকূলবর্তী অনেক সম্প্রদায় তিমি শিকার করে থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী খাদ্য সংকটের সময় এটি ব্যাপক আকার ধারণ করে। ১৯৪০ এর দশকের শেষ থেকে ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাপানে মাংসের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল তিমি। ১৯৬২ সালে যা ২ লাখ ২৩ হাজার টনে গিয়ে পৌঁছে। অবশ্য বিকল্প মাংসের জোগান বাড়লে আস্তে আস্তে তিমির চাহিদা কমতে থাকে। ১৯৮৬ সাল নাগাদ ৬ হাজার টনে নেমে আসে। আর ২০১৭ সালে জাপানে বিক্রি হওয়া মাত্র ০.১ শতাংশ মাংস ছিল তিমির।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, জাপানের পরিকল্পনা কতটা আইনসম্মত। বিশেষজ্ঞরা জানান, নিজেদের ১২ মাইল উপকূলীয় জলসীমা যা ইচ্ছা করতে পারে তারা। তবে ২০০ মাইল এক্সক্লুসিভ ইকোনমি জোন ও দূরবর্তী সাগরে তাদের জাতিসংঘ কনভেনশনে স্বীকৃত সমুদ্র আইন মেনে চলতে হবে।

অবশ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায় নেই মিঙ্কে ও ব্রাইডে। বিপন্নের তালিকায় সেই থাকলেও সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই আপাতত জাপানের তিমি বাণিজ্যের প্রভাব খুবই সামান্য। তবে অনেকে নৈতিক ও পরিবেশবাদী যুক্তি তুলছেন এর বিপরীতে।