নয়নের অপকর্ম মুখে মুখে, রিফাত ও রিশানেরও গ্রেপ্তার চায় এলাকাবাসী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০১৯ ১৪:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৪ বার।

বরগুনার রাস্তায় স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় নয়নের অপকর্মের কথা তাদের মুখে মুখে ঘুরছে। পাশাপাশি, বাকি আসামিদের, বিশেষ করে রিফাত ও রিশান ফরাজীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। খবর দেশ রুপান্তর।

মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া চারটার দিকে বরগুনার বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে ডিকেপি রোড, কলেজ রোড, কেজি স্কুল রোড, ক্রোক ও ধানসিঁড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের আনন্দ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নয়ন বন্ড এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পরে সেই আতঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এলাকাবাসী।

পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়ে বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান এলাকাবাসী। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্ত্রাসী তৈরি হওয়ার আগেই ধ্বংস করার দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

ডিকেপি রোডের বাসিন্দা নোমান জানান, নয়ন বন্ড একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল, তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করার সাহস পেত না। এলাকার মধ্যে সে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। নয়ন বন্ডের মৃত্যুর ফলে এই ভীতিকর পরিবেশের হাত থেকে ডিকেপি রোডের মানুষ মুক্ত হলো।

ধানসিঁড়ি রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলম বলেন, আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারতাম না। নয়নের মতো উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমরা সাধারণ মানুষ যদি আগে থেকেই এই ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতাম তাহলে হয়তো রিফাতের মতো একটি তাজা প্রাণকে অকালে মরতে হতো না।

কলেজ রোড এলাকার সাইফুদ্দিন সবুজ বলেন, বিভিন্ন সময় কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্ত, এলাকার কোমলমতি বাচ্চাদের মাদকাসক্ত করা, কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মোবাইল, ল্যাপটপ ছিনতাইসহ একাধিক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল এই সন্ত্রাসী নয়ন। একাধিক বার গ্রেপ্তার হলেও বারবার আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতেন এই সন্ত্রাসী নয়ন।

তিনি আরও বলেন, কলেজ রোডসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় তিনি একচ্ছত্র মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। শুধু নয়নকেই নয় রিফাত ও রিশান ফরাজীকেও গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, কেউ যদি বিপথে চলে যায় তাকে অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। সংশোধিত না হলে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে যাতো নয়নের মতো আর কোন সন্ত্রাসী তৈরি হতে না পারে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ভবিষ্যতে আর যাতে কোন নয়নের জন্ম না হতে পারে সেই জন্য আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সচেতন হতে হবে। ছেলে মেয়েদের সময় দিতে হবে। তাদের সাথে বেশি বেশি মিশতে হবে। কোথায় কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে এসব বিষয়ে সকলকে সচেতনভাবে প্রশাসনের নজরে এনে এই সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের সমূলে ধ্বংস করতে হবে।

বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মণির হোসেন কামাল বলেন, একজন মানুষ যখন বিপথে চলে যায় তখন তার চলন বলেন সবকিছু বদলে যায়। এসব বিষয়ের দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সেই সঙ্গে কোন সন্ত্রাস জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অঙ্কুরে ধ্বংস করে দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।