আমাদের মা জননী-২২

নারীর চরিত্র নিয়ে অপবাদ রটানো চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ

জুবাইর হাসান মোহাম্মদ জুলফিকার আলী
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৭:১৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৪৪ বার।

[গতকালের পর থেকে পড়তে হবে] 
আল্লাহ তায়ালা কোরআনের আয়াত নাযিলের মাধ্যমে গোটা মানব জাতিকে জানাচ্ছেন যে, ব্যভিচারের বিষয়ে দোষারোপ করার ব্যাপারটি কোনোভাবেই হাসি-তামাশা, আমোদ-স্ফূর্তির বিষয় নয়; শুধু আড্ডার কথাবার্তার ছলে যত্রতত্র বলে বেড়ানোর মতো কোনো কাজও এটা নয়। মূলত এটা একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। অভিযোগকারীর অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে তাকে সাক্ষী পেশ করতে হবে। ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া নারী পুরুষকে শিক্ষামূলক শাস্তি দেয়া হবে। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা হয় তাহলে অভিযোগকারীর পিঠের ওপর ৮০ ঘা চাবুক মারা কর্তব্য। যেন ভবিষ্যতে সে কখনো কোনো নারী প্রতি আর মিথ্যা অভিযোগ করার দু:সাহস না দেখায়।
ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে কোনো লোকই দায়-দায়িত্বহীনভাবে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বসে থাকতে পারে না। কেননা এটা মুলমানদের সমাজ সংস্থার ব্যাপার। দুনিয়ায় প্রকৃত কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ। এ সমাজে না ব্যাভিচার কোনো আনন্দদায়ক জিনিস হতে পারে, না তার চর্চা-আলোচনা ও বৈঠকী আড্ডার হাস্যরসের বিষয় হতে পারে। নারী চরিত্র নিয়ে অপবাদ রটানো আল্লাহর আইনে চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় স্থানেই সেটার জন্যে শাস্তি রয়েছে । কোনো অপবাদ রটনাকারী যদি দুনিয়ায় শাস্তি নাও পায়, তবে আখেরাতে সে শাস্তি পাবেই পাবে। নারী চরিত্র নিয়ে মিথ্যা অপবাদ রটনাকারীদের হুশিয়ার করে দিয়ে আল্লাহ বলেনঃ
“যারা (খামাখা) সতী সাধ্বী নারীদের ওপর (ব্যভিচারের) অপবাদ আরোপ করবে এবং এর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী হাজির করতে পারবে না, তাদের ৮০টি বেত্রাঘাত করবে এবং (ভবিষ্যতে) আর কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না, কেননা এরা হচ্ছে নিকৃষ্ট গুনাহগার।-সূরা আন নূরঃ ৪।”
সুতরাং ওপরের আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে, বদনাম রটনাকারী তিনটি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়ে যায়। প্রথমত: তাদেরকে ৮০টি চাবুক মারা হবে, দ্বিতীয়তা ভবিষ্যতে চিরদিনের জন্যে তাদের সাক্ষ্য অগ্রাহ্য হবে এবং তৃতীয়ত: তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ বলা হবে না বরং সত্যত্যাগী বলা হবে। 
হযরত আয়েশা রা: এর ওপর মিথ্যা অপবাদ রটনাকারীদের প্রতি আল্লাহ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে ঘোষণা করেছেনঃ
“.. ... .. ... .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. ..   এদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তি যে যতটুকু গুনাহ করেছে, সে ততটুকুই (তার ফল) পাবে, আর তাদের মধ্যে যে সবচাইতে বেশি (এ গর্হিত কাজে) অংশগ্রহণ করেছে, তার জন্যে আযাবও থাকবে অনেক বড়।- সূরা আন নূর: ১১।”
হযরত আয়েশা রা: এর চরিত্র নিয়ে অপবাদ রটানোর কাজে যারা মাথা ঘামিয়েছিলো, সেই অপরাধের জন্য তারা সবাই কিছু না কিছু দায়ী। তাই শাস্তিও সবাইকে পেতে হবে। প্রত্যেকের জন্যেই শাস্তি থাকবে, যা তারা তাদের অপরাধের বিনিময়ে অর্জন করেছে। যদি কেউ দুনিয়াতে শাস্তি না পায়, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর কাছে তাকে দোষ অনুযায়ী সমুচিত শাস্তি পেতে হবে এবং সেই শাস্তি হবে আরো যন্ত্রণাদায়ক, আরো কঠিন। আর যারা জেনে বুঝে কাউকে কষ্ট দেয়ার বদ নিয়তে ইচ্ছাকৃতভাবে এ মিথ্যা রটনার কাজে শরীক হয়েছে তারা অবশ্যই গুনাহে কবীরায় লিপ্ত এবং যেহেতু তা বান্দার হকের সাথে জড়িত, তাই তাদেরকে আল্লাহ মাফ করবেন না। দুনিয়াতে তাদের যেমন শাস্তি রয়েছে, তেমনি রয়েছে আখেরাতেও। এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেনঃ 
“যারা (সতী) সাধ্বী, সরলমনা ও বিশ্বাসী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি।- সূরা আন নূর: ২৩।”
হযরত আয়েশা রা: এর ওপর মিথ্যা চারিত্রিক অপবাদ রটানোর কাজে ভূলবশত মানবীয় দুর্বলতার কারণে মুসলমানদের ক্ষুদ্র একটি দলও জড়িয়ে পড়েছিলো। তবে মাত্র তিনজন মুসলমানের নাম হাদিস ও সীরাত গ্রন্থের পাতায় পাওয়া যায়, যারা ভুলবশত মোনাফেকদের পাতানো ফাঁদে আটকা পড়েছিলেন। এই তিনজন হলেন- কবি হাসনান ইবনে সাবেত, মিসতাহ ইবনে উসাসা এবং হামনা বিনতে জাহাশ। চারিত্রিক অপবাদের ভিত্তিহীন খবর প্রচার এবং সেটার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে না পারার কারণে শরীয়তের নিয়ন অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়।১ তবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ দিয়ে তাদের তাওবাহ কবুল করেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (সূরা আন নূরের ২৪নং আয়াতে বর্ণিত)। সেজন্য আমরা বর্তমান কালের মুসলমান ঐ তিনজনের প্রতি কোনোরূপ ক্ষোভ-বিদ্বেষ পোষণ করতে পারি না। কারণ আল্লাহর ক্ষমাই চূড়ান্ত ফয়সালা। সুতারাং তাদের নামের শেষে রাদিয়াল্লাহু আনহু পড়তে হবে, নচেত ভীষণ গুনাহের কাজ হবে। যাহোক, নারীদের চরিত্রের ওপর অপবাদ রটনাকারীরা কি পরিমাণে আল্লাহর দ্বারা অভিশপ্ত তা বোঝানোর জন্য একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করছি। রাসূল সাঃ বলেছেন ঃ 
সাতটি ধ্বংসকারী পাপ থেকে তোমরা বেঁচে থাক। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসুলঃ সাঃ ঐ গুলো কী ? উত্তরে তিনি বললেনঃ ঐগুলো হলো- আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু করা, বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী, সরল মোমেনা স্ত্রী লোকের ওপর অপবাদ আরোপ করা।২ 
[তথ্য সূত্র: ১.মা’ আরেফুল কোরআন, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৬২, ৩৭৬। ইবনে হিশাম, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৩১২। ২. ফাতহুল কারী ৫/৪৬২, মুসলিম ১/৯২, উদ্ধৃত: তাফসীরে ইবনে কাসীর।]

[পরবর্তী অংশ আগামীকাল]