বাঙালি কী করে উইপোকা হতে পারে?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৮:০১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৬৭ বার।

 

‘এনআরসি’ শব্দটি নিয়ে এখন উত্তাল আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত। সেই ঢেউ এসে লাগছে বাংলাদেশেও। 

 

তুমুল সমালোচনার মুখেও গত বছর দেশটির আসাম রাজ্য থেকে ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে এনআরসি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই স্রোতে এবছর নতুন করে আরও ১ লাখ ২ হাজার ৪৬২ জন আসামবাসীকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। খবর সমকাল অনলাইন।

 

আগের দফায় জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে প্রায় ৩৬ লাখ বাংলা ভাষী জাতীয় তালিকাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পুনরায় দাবি পেশ করেছেন।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবেদনকারীদের অজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় দলিল দেখাতে ব্যর্থ হয়ে বা সাধারণ ভুল–ত্রুটিতে তাদের নাম এই খসড়া থেকে বাদ পড়ে গেছে। ১৯৫৬ সালে প্রদত্ত ‘নাগরিকত্ব প্রমাণপত্র’ থাকা সত্ত্বেও কারও কারও নাম নাগরিক পঞ্জিতে শামিল হয়নি। 

 

এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, নাগরিকের হাতে থাকা সরকারি আধিকারিকের স্বাক্ষর ও কার্যালয়ের সিলমোহর যুক্ত ‘নাগরিকত্ব প্রমাণপত্র’–এর রেকর্ড নাকি সরকারি দফতরে পাওয়া যায়নি। সরকারের ঘরে রেকর্ড না থাকার জন্য প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় নাগরিকের নাম খসড়া নাগরিক পঞ্জিতে সামিল হয়নি।

 

গত ২২ জুন পর্যন্ত ‘শুনানি’, ‘বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট’ ইত্যাদি নিয়ে এই জেলা থেকে ওই জেলায় দফায় দফায় ছোটাছুটি করেছেন। এখন এই দলে যুক্ত হয়েছে আরও ১ লাখ।

 

আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যই এই নতুন বাদ পড়াদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়েছে। এই সময়য়ের মধ্যে তারা ভারতের নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে না পারলে ‘বিদেশি’ বলে প্রমাণিত হবেন এবং তাদের ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। 

 

আগের দফার খসড়াছুটদের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ লোক নিজেদের নাগরিকত্বের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেশ করতে পারেননি। তাদের গায়ে বিদেশি ছাপ পড়েই গেছে। এবার আরও এক লাখ আসামবাসী এই দলে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। 

 

আসামে এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের বেশিরভাগই বাংলা ভাষী। তাদের গায়ে নির্বিচারে ‘বিদেশি’ লেবেল সেঁটে ডিটেনশন ক্যাম্প নামক কারাগারে ভরে দেওয়া হচ্ছে। 

 

বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে যারা আসামে গিয়েছেন বলে কাগজপত্রে প্রমাণ করতে পারেননি, তাদের নাম জাতীয় নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।  জাতীয় তালিকা থেকে বাদ পড়াদের 'অবৈধ' বলে খেলা চলছে রাজনীতির অঙ্গনে। অতীতে নানা সময়ে তথাকথিত এই অবৈধ অভিবাসীদের 'বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে' বলে রাজনীতিবিদরা ঘোষণাও দিয়েছেন। আবার পশ্চিমবঙ্গেও 'অবৈধ বিদেশি'দের শনাক্ত করতে একই পথ নিতে হবে বলে অনেকে হুঙ্কারও দিচ্ছেন।

 

পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর আগে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা উইপোকার মত। গরিবদের জন্য যে ফসল যাওয়ার কথা সেগুলো তারা খেয়ে নিচ্ছে, গরিবদের কাজ নিয়ে নিচ্ছে। এদের রাজ্যের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। 

 

তবে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এনআরসির নামে ৪০ লাখ আসামবাসীকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা সেই এনআরসি এই রাজ্যে কার্যকর করতে দেব না। যেকোন মূল্যে তা রুখবই।’ 

 

আশার কথা অনেকেই মমতার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। তারা বলছেন, যাদের এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে দেশের প্রচলিত আইনের কোনও ধারাতেই তারা ‘বিদেশি’ বলে বিবেচিত হতে পারেন না। 

 

এর ব্যাখ্যা হিসেবে তারা বলছেন, খসড়া থেকে বাদ পড়াদের অনেকের মা, বাবা, দাদু–দিদার নাম ১৯৫১ সালের এনআরসি বা তারও আগের কোনো দস্তাবেজে আছে। যথার্থ ভারতীয় নাগরিক হলেও তাদের রাখা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে।  

 

ইতিহাসের সূচনা থেকেই বাঙালি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালি বসতিপূর্ণ শ্রীহট্ট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর সেই প্রাচীন যুগ থেকেই দফায় দফায় কামরূপ রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়েছিল। এই তত্ত্ব বা তথ্য অনুযায়ী, বাঙালি হিন্দু প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের আদি বাসিন্দা রূপে বর্তমান আসাম রাজ্যের স্থায়ী ভূমিপুত্র। 

 

তাই হাজার হাজার বছরের ভূমিপুত্র বাঙালি কখনই একজন ‘উইপোকা’ বা ‘বিদেশি’ হতে পারে না।