পরিবার থেকে আলাদা করা হচ্ছে চীনা শিশুদের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০১৯ ১২:১৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৫ বার।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ের একটি শহরের চার শতাধিক শিশু হারিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে তাদের মা-বাবাকে ক্যাম্প বা জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে।

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করার পাশাপাশি শিশুদেরও তাদের মূল থেকে সরানোর প্রক্রিয়া এটা।

চীনে কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কারণে বিদেশি মিডিয়ার ওপর জিনজিয়াং প্রদেশে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। এখানে সাংবাদিকদের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা হয়। ফলে চীন থেকে কোনো প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন।

তবে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া অনেক উইঘুর চীনের নিপীড়নের কথা শুনিয়েছে। ইস্তাম্বুলে বড় একটি হলরুমে একডজনের বেশি লোক বিবিসিকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। 

তিন সন্তানের ছবি দেখিয়ে এক মা বলেন, সেখানে তাদের দেখাশোনা কে করছে জানি না। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

তিন ছেলে ও এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে আরেক মা বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের এক এতিমখানায় রাখা হয়েছে।’

বিবিসি ৬০ জনের পৃথক সাক্ষাৎকার নিয়েছে।সেখানে তারা ১০০টি শিশুর উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তারা উইঘুর পরিবারের। অনেকদিন ধরেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে আসছে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়ন চালাচ্ছে। বেইজিং উইঘুর মুসলিমদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে বছরের পর বছর ধরে তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, সহিংস ধর্মীয় উগ্রপন্থা ঠেকাতে উইঘুরদের ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। 

তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ বলছে, অনেকেই ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রার্থনা বা পর্দা করার কারণে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। অনেকের আবার তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় ক্যাম্পে আটক থাকতে হচ্ছে। 

এক উইঘুর মুসলিম জানান, চীনে তার স্ত্রীকে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে। তার আট সন্তান এখন চীনা কর্তৃপক্ষের অধীনে। তাদের সম্ভবত শিশু শিক্ষা ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।

জার্মানির গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেনজ জানিয়েছেন, জিনজিয়াংয়ে স্কুল সম্প্রসারণে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এখন চীন অনেক শিশুর ২৪ ঘণ্টা তদারকির সক্ষমতা অর্জন করেছে। একইসঙ্গে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ক্যাম্প তৈরি করছে। এসবই মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্টারগার্টেনে ভর্তির হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালেই এই সংখ্যা ছিলো ৫ লাখেরও বেশি। জিনজিয়াং প্রদেশে এই কিন্ডারগার্টেনের উন্নয়নে ১২০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে চীন।   

জেনজ বলেন, এই নির্মাণ কাজ আসলে তাদের আটক রাখার উদ্দেশ্যেই করা।  

গত বছর এপ্রিলে প্রায় দুই হাজার শিশুকে আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সরকারের দাবি, শিশুরা যেন সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখে সেই উদ্দেশ্যে এটি করা। 

তবে জেনজ মনে করেন ,এর উদ্দেশ্য আরও গভীর। তিনি বলেন, আবাসিক স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের চিন্তাধারা পাল্টে সাংস্কৃতিক কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব।