মাশরাফিকে নিয়ে বিসিবির ভাবনা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৯ ১২:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৮ বার।

ভেতরে এক নির্জন রাত্রি আছে তার- ক'দিন ধরেই যেন টের পাচ্ছেন তা। আলেয়া ক্লান্ত হয়, আলো মুছে অন্ধকার লেখে- জীবনের যা সুখ তার সবটাই ভীষণ শরিকি। কষ্টটা শুধু একান্ত আপন, দুঃখটাও যেন নিঃসঙ্গ ভবঘুরের মতো। সেই আপনকে নিয়েই এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিশ্বকাপে মাত্র ১ উইকেট! দেড় যুগেরও বেশি ক্যারিয়ারে এতটা উইকেটশূন্য তিনি কখনোই থাকেননি। টেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামা পা দুটিও এবার যেন বিদ্রোহ করে চলেছে। নিজের সঙ্গে নিজের এই যুদ্ধে কিছুটা ক্লান্ত মাশরাফি।

'অবসর নিচ্ছেন কবে'- বিশ্বকাপের শেষাংশে এসে এই জিজ্ঞাসা চিহ্নটি তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। উত্তর দিয়েছেন 'দেশে ফিরে ভাবব ...।' তবে যে দলের সঙ্গে তার নকশিকাঁথার মতো সম্পর্ক, সেই সুতোগুলোর রঙ ধরে আলাদা করতে গেলে কাঁথাটির গঠনই শুধু নয়, চরিত্রটাই না আবার হারিয়ে যায়! এই শঙ্কাটি মাশরাফির নয়, বিসিবি এবং টিম ম্যানেজমেন্টের। তাই খেলা ছাড়ার পরও যেন ড্রেসিংরুমে তার উপস্থিতি থাকে সেটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে বিসিবি। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যেন স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন মাশরাফির বিন মুর্তজা। আর অন্য কোথাও নয়, মিরপুর থেকেই যেন বিদায় নেন তিনি। মাশরাফির চিন্তায় অবশ্য অন্য কিছু, 'আপাতত ম্যানেজার হওয়া নিয়ে ভাবছি না। এখনও খেলার মধ্যেই আছি। তবে খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকব আমি।'

আপাতত এই বছর ঘরের মাঠে কোনো ওয়ানডে সিরিজ সূচিতে নেই। চেষ্টা চলছে অক্টোবরে আফগানিস্তান দল টেস্ট আর টি২০ খেলতে এলে জিম্বাবুয়েকে দাওয়াত দিয়ে এনে একটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আয়োজন করার। সেটি না হলে আগামী বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজেই হয়তো 'বিদায়' বলবেন মহানায়ক। তার আগে হাতে থাকা সময়ে মাশরাফি তার রাজপাট গুছিয়ে দেবেন সাকিব আল হাসানের কাছে। ২৫ জুলাই থেকে শ্রীলংকায় যে তিন ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা চলছে, সেখানেও মাশরাফি বিশ্রামে থেকে সাকিবের হাতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দেবেন। ড্রেসিংরুমের খবর অন্তত এমনই।

তবে উত্তরসূরি সাকিবকে বিশ্বকাপ থেকেও অনেকটা সেই কাজ গুছিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বকাপ শেষ, এখন তো আর বলতে কোনো দ্বিধা নেই- প্রতিটি ম্যাচের আগেই সাকিবের সঙ্গে আলাদা করে মিটিং করেতেন মাশরাফি। একাদশ সাজানো, কম্বিনেশন ঠিক করা- সবকিছুতেই অধিনায়কের সঙ্গে থাকতেন সহঅধিনায়কও। প্রথম দুই ম্যাচের পর দলের এক সিনিয়রকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাকিব, কিন্তু মাশরাফি বড্ড আবেগী, অনুরোধ করেছিলেন আর অন্তত একটি ম্যাচ সুযোগ দিতে। চতুর্থ ম্যাচে এসে সেই ক্রিকেটার স্ট্রাইক রেট ঠিক করার পরই ব্যাপারটি স্থিতিশীল হয়েছিল। তেমনি সাকিবের অনুরোধেও একজন জুনিয়রকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। মাঠেও ফিল্ডিং সাজানোর ব্যাপারে সাকিবের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। এভাবেই একটু একটু করে সাকিবকে সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছেন মাশরাফি। অবসর তো- সে একসময় মিরপুরে শেষ ম্যাচ খেলেই বলে দেবেন।

এখন তো তিনি রাজনীতিতে নেমেছেন, সাংসদ হয়েছেন। অনেক অনেকে কাজ পড়ে আছে তার সামনে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও মাশরাফির কাছে ক্রিকেটই সব। তার রক্তে যে মিশে আছে তা। তার ইচ্ছা সারাজীবন মাঠে পেস বোলার হিসেবে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, খেলা ছাড়ার পর লেভেল ওয়ান কোচিং কোর্স শেষ করে একাডেমির মতো উঠতি পেসারদের কোচিং করাবেন।

কিন্তু বোর্ড চাচ্ছে তাকে দলের সঙ্গেই রাখতে এবং যদি সে কোচ না হতে চায়, তাহলে একমাত্র পথ- দলের ম্যানেজার। যেটা এখন খালেদ মাহমুদ সুজন পালন করছেন। ম্যানেজার হয়ে অবশ্য হোটেল ঠিক করার মতো লজিস্টিক অপারেশন্সের কাজ তাকে করতে হবে। শুধু দলের সঙ্গে কোচের সেতুবন্ধন হয়ে থাকবেন মাশরাফি। যাতে করে কোনো বিদেশি কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক খারাপ না হয়। ম্যানেজার হিসেবে টিম ম্যানেজমেন্টের মতো একটা জোরালো ভূমিকাও মাশরাফির কাছে আশা করছে বোর্ড। মাশরাফির অবশ্য আকাশ ভ্রমণ নিয়ে একটা অনীহা আছে। তাই এই ভূমিকাটা আপাতত তার ঠিক পছন্দের নয়। কিন্তু তার পরও যেহেতু ড্রেসিংরুমের থাকার একটা প্রস্তাব এটি, যেখানে থাকলে সে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। সেখানেই হয়তো দেখা যাবে তাকে। মাঠে না থেকেও থাকবেন তিনি টাইগারদের সঙ্গেই।