আট দিনের মাথায় ধর্ষণ মামলার আসামি মেয়রপুত্র জামিনে মুক্ত

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯ ১৫:৫৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৮ বার।

কলেজছাত্রী ধর্ষণের মামলায় জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারী (৩১) গ্রেপ্তারের আট দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

সোমবার বিকেলে মাসুদ জামিনে মুক্ত হন। এতে ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী ও তার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। খবর দেশ রুপান্তর 

জানা গেছে, জাজিরা উপজেলা সদরের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয় মেয়রপুত্র মাসুদ ব্যাপারীর বিরুদ্ধে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

ওই কলেজ ছাত্রীর বাবা বলেন, “লজ্জা, ভয় আর আতঙ্কে মেয়েটি ভেঙে পড়েছে। সারাক্ষণ ঘরে বসে কাঁদে। লজ্জায় মানুষের সামনে যেতে পারে না।”

তিনি বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে অপরাধী জামিনে বের হয়ে এসেছে। তারা প্রভাবশালী; আমরা শঙ্কায় আছি তারা কখন আমাদের ক্ষতি করে দেয়।”

পুলিশ জানায়, গত ২৯ জুন রাতে ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। জাজিরার মুলনার ওই ছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে কাজ করেন।

জাজিরা পৌর এলাকার আক্কেল মাহমুদ মুন্সিকান্দি মহল্লার বাসিন্দা মাসুদ ব্যাপারী ওই ছাত্রীর দূরসম্পর্কের আত্মীয়। ২৯ জুন বিকেলে মাসুদ তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলেন।

ওই ছাত্রী রোগনির্ণয় কেন্দ্রের কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদের পরিবারের কাউকে না দেখে ওই ছাত্রী ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তখন মাসুদ তাকে ঘরে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে ওই ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেন মাসুদ। ওই ছাত্রী কোনোমতে মাসুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে ওই মহল্লার কয়েকজন নারী তাকে উদ্ধার করেন। তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

পরদিন ৩০ জুন জাজিরা থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রী।

গত ১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে মাসুদ ব্যাপারীকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ৭ জুলাই তার জামিনের আবেদন করা হয় শরীয়তপুর জেলা আমলি আদালতে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আমলি আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জামিন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী জয়নব আক্তার ইতি পরদিন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসআপিল করেন। তিনি ওই দিনই আরেক আবেদনে আসামির জামিন প্রার্থনা করেন।

জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরী জামিন মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, “মাসুদ আমার আত্মীয় হয়। তারপরও ধর্ষণ করতে পিছপা হয়নি। আমি তার পায়ে ধরে কেঁদেছি, তারপরও রেহাই পাইনি।”

তিনি বলেন, “মামলা করার পর থেকেই চাপে রয়েছি। এখন মাসুদ মুক্ত হয়েছে; শঙ্কায় আছি সে আমাকে মেরে ফেলে কিনা।”

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মির্জা হজরত আলী বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিকে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। কিন্তু আদালত তা আমলে নেয়নি।

তিনি বলেন, এভাবে গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিকে দ্রুত সময়ে জামিন দেওয়া হলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।

জানতে চাইলে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের শরীয়তপুরের সদস্য সচিব অমলা দাস বলেন, ভয়ঙ্কর একটি অপরাধের মামলার আসামি দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়া লজ্জা ও শঙ্কার বিষয়।

তিনি বলেন. এতে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। অপরাধী মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ পায় এবং সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

জাজিরার সামাজিক সংগঠন নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার প্রভাবে অপরাধীরা দ্রুত মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। জাজিরার কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামিও অনুরূপ সুবিধা পেয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ওই আসামি এখন তার অবৈধ শক্তি প্রয়োগ করে মামলা থেকে বাঁচতে প্রভাব বিস্তার করবে।

এ নিয়ে কথা বলার জন্য মাসুদ ব্যাপারী ও তার বাবা জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন ধরেননি।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলায়েত হোসেন বলেন, কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়েছেন এমন তথ্য পেয়েছি। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার শঙ্কার কথা জানিয়েছে। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি কেউ করতে না পারে পুলিশ তা নিশ্চিত করবে।