যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বাড়ছেই: ৬০ গ্রামের ৪৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

বগুড়ায় ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি  ঢুকেছে: ত্রাণ তৎপরতা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯ ১২:৪৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৩ বার।

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গেল ২৪ ঘন্টায় জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্ট ওই নদীর পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে রোববার বেলা ৩টায় বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ছে পাশের বাঙালি নদীতেও। ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার। তবে বাঙালি নদী এখনও বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উজানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আগামী কয়েকদিন ওই উভয় নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং বাঙালি নদীর পানিও বিপদ সীমার ওপরে উঠতে পারে। প্রতি মুহুর্তে পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদী তীরবর্তী ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। 
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ১১ হাজার ৭২০ পরিবারের ৪৫ হাজার ২৮০ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পানি ঢুকে পড়ায় ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য পানিবন্দী হয়ে পড়া লোকজনের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণও শুরু করেছেন। রোবাবার তিনি গৃহহীন ১৪০টি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবারসহ ৭ ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোববার বিকেলে তিনি উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দি উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চলে রোপা আমন, আমনের বীজতলা, আউশ এবং শাক-সবজিসহ ১ হাজার ১২৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টিই প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাদবাকি ৩টির মধ্যে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১টি মাদ্রাসা রয়েছে। রোববার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক চলাকালে সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান পানি ঢুকে পড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে চরবেষ্টিত চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নে। এছাড়া কামালপুর ইউনিয়নে ৫টি, চন্দনবাইশা ও বোহাইলে ৪টি করে ৮টি, কাজলা, হাটশেরপুর, কুতুবপুরে ৩টি করে ৯টি, সারিয়াকান্দি সদর এবং পৌর এলাকায় আরও ২টি কওে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পানি ঢুকে পড়ায় আপাতত ওইসব বিদ্যালয়ে ক্লাশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোর জন্য ৫ মেট্রিক টন এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য ৩ মেট্রিক টন করে ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নিরাপদ পানির জন্য পর্যাপ্ত টিউবওয়েল এবং চিকিৎসা সেবার জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া বিভাগের প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে যমুনা তীরবর্তী ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোন ক্ষতি হবে না এবং ভাঙ্গন প্রতিরোধক স্থাপনাগুলোও যথেষ্ট ভাল অবস্থায় রয়েছে।