বর-কনে মাটির বিছানায়, রইল পরে ফুলের বাসর

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯ ১৫:১৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৩৩ বার।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বেতকান্দি রেলক্রসিংয়ের ওপর সোমবার রাতের ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত নব বর-কনে রাজন-সুমাইয়ার ফুলসজ্জা হলো না।

নিয়তি তাদের নিয়ে গেল পরপারে। ফলে ফুলে ফুলে সাজানো বাসর এখন যেন জগদ্দল পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী কান্দাপাড়া গ্রামের জোয়াদ আলী, অনিক, রুবিয়া খাতুন, ঝর্ণা খাতুন বাবলু শেখ জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে সুমাইয়া খাতুনের (১৯) সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাজন শেখের (৩২)।

তারা বলেন, সোমবার যথারীতি উৎসবমুখর পরিবেশে বর-কনে কবুল বলে একে-অপরকে জীবনসঙ্গী করে নিলেন। মনের ভেতরে অজানা অনেক স্বপ্ন বুনে নতুন জীবনে পা রাখলেন তারা। নব-দম্পতির চোখজুড়ে যখন একের পর এক সোনালি স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। নিয়তি তখন আড়াল থেকে মিটিমিটি হাসছিল। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বপ্ন পড়ে রইল স্বপ্নের জায়গায়। রইল না স্বপ্ন বোনার মানুষগুলো। একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনা তাদের প্রাণ কেড়ে নিল।

সোমবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল বিয়ের উৎসবে আসা বরযাত্রী ১০ জনের। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো আরো চারজনকে।

তাদের আত্মীয়রা বলছেন, নিয়তির এ নিষ্ঠুর খেলায় শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলেও বাসর হলো না রাজন-সুমাইয়ার।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ও উল্লাপাড়া উপজেলার মৃত গফুর শেখের বাড়িতে এখন উৎসবের পরিবর্তে চলছে শোকের মাতম ও স্বজনদেও বুকফাটা আহাজারি।

মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো মানুষের ভিড়। সবারই চোখ ছিল অশ্রুসজল। হাজার লোকের ভিড়েও একটি শোকাবহ নিস্তব্ধতা পুরো গ্রামকে গ্রাস করেছে। আলতাফ হোসেনের ছেলে রাজন শেখের বাসরঘরটি তখনো তরতাজা ফুলে সজ্জিত। তবে তাতে ছিল না কোনো সুবাস। বিধিবাম, এ খাটে যাদের ঘুমানোর কথা, তারা আজ শেষ বিদায় নিয়ে খাটিয়ায় চড়ে মাটির বিছানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।

এ বিষয়ে প্রতিবেশীরা আরো জানান, উল্লাপাড়া উপজেলার চরঘাটিনার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় রাজনের। সোমবার দু’টি মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী বিয়ে করতে যান রাজন। উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ের কাবিন-কলেমা পড়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিকেলে নবদম্পতি কনের বাড়ি থেকে কামারখন্দ-উল্লাপাড়া আঞ্চলিক সড়ক পথে বাড়ি ফিরছিলেন। এ পথে বেতকান্দির অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে বর-কনেবাহী মাইক্রোবাসটি। আর এ দুর্ঘটনায়ই পরিসমাপ্তি ঘটে নব-দম্পতি রাজন-সুমাইয়ার জীবনের। ফলে ফুলে ফুলে সাজানো বাসর জগদ্দল পাথরের মতো পড়ে রয়েছে। যেন সেও শোকে স্তব্ধ।