বগুড়ার শেরপুরে ‘ভুয়া ওয়ারেন্টে’ হাজতবাস দুই ব্যবসায়ীর: মুক্তি মিলল ১৮ঘন্টা পর!

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯ ১৫:৩৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৮ বার।

বগুড়ার শেরপুরে প্রতারণা মামলার ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের পর সেটি ভুয়া প্রমানিত হওয়ায় ১৮ ঘন্টা হাজতবাসের পর মুক্তি পেলেন দুই ব্যবসায়ী।

তাঁরা হলেন-পৌরশহরের খন্দকারপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে মোজাফ্ফর হোসেন ও পাশের বারদুয়ারীপাড়া এলাকার তোজাম্মেল হকের ছেলে শাহাদত হোসেন। সোমবার সন্ধ্যায় নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।


শেরপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে ৪২০, ৪০৬, ৪৬৮, ৪৬৭ ধারায় একটি প্রতারণা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্টে) মোতাবেক ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর ও শাহাদত হোসেনকে গ্রেফতার করেন শেরপুর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জামাল উদ্দিন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, থানা হাজতে থাকা মোজাফ্ফর ও শাহাদত গাইবান্ধা জেলার আদালতের একটি প্রতারণা মামলার ওয়ারেন্টেভুক্ত আসামি। তাদের বিরুদ্ধে জারি হওয়া ওয়ারেন্টের কপি আদালত থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় হয়ে শেরপুর থানায় আসে। পরে ওয়ারেন্ট তামিল করতে গিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন তিনি। এদিকে এই খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন তাদের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

তাঁরা পুলিশকে জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা পেশায় সৎ ব্যবসায়ী। তাদের স্বভাব-চরিত্রও ভালো। এমনকি তারা সাধারণ নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। কোন প্রতারণা বা হানাহানিতে জড়িত নেই বলেও দাবি করেন তারা।

এছাড়া গ্রেফতার হওয়া মোজাফ্ফর ও শাহাদত হোসেনও তাদেরকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তাদের নামে কোন মামলা নেই। তাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এটি সম্পুর্ণ বানোয়াট। এছাড়া ঘটনাটিকে তাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন তারা।


পরে শেরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির ও পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে আদালত ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খবর নিয়ে ওই মামলা ও আসামি মোজাফ্ফর ও শাহাদতের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হওয়ার বিষয়টি ভুয়া প্রমাণিত হয়। একইসঙ্গে জানতে পারেন, গাইবান্ধা জেলার আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে উক্ত নম্বরের কোন মামলা নেই। ওই আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে এই ভুয়া ওয়ারেন্টে তৈরী করে থানায় পাঠানো হয়েছে। এরপর ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হওয়া ওই দুই ব্যবসায়ীকে প্রায় ১৮ ঘন্টা হাজতবাসের পর গতকাল মঙ্গলবার (১৬জুলাই) দুপুরে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।


শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম বলেন, 'গাইবান্ধা জেলার আদালতের নামে পাঠানো ওয়ারেন্টটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেফতারকৃতদের সম্মানের সঙ্গে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর আগেও অন্য আরেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'


এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আদালত ও পুলিশ প্রশাসনকে বির্তকিত করতেই এহেন কর্মকাণ্ড করছেন। আদালতের বিচারকের স্বাক্ষর, সিল, স্মারক ও মামলা নম্বর জালিয়াতি করে তৈরী করা হচ্ছে ভুয়া ওয়ারেন্ট। কিন্তু তা বোঝারও কোন উপায় নেই। সবকিছুই মিল থাকায় সেই ভুয়া ওয়ারেন্ট বলে আসামিকেও গ্রেফতার করছে পুলিশ। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই এই চক্রটিকে রুখতে হবে। এ চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও জোর দাবি জানিয়েছেন সূত্রটি।